সংক্ষিপ্ত
বছরের শুরুতেই কোভিড তখন সপ্তম স্বর্গে, সেই সময় বাটানাগরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এমপি কাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচের আসর বসেছিল। ফাইনাল ম্যাচে সপরিবারে প্রধান অতিথি ছিলেন ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও ছিলেন তৃণমূল নেতা তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয়।
প্রায় সাততলা উঁচু বাড়ির সমান ফ্লেক্স। আর সেই ফ্লেক্স লাগাতে গিয়েই নাকি লাগোয়া একটি নির্মিয়মাণ বাড়ি থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে এক শ্রমিকের। ১ জানুয়ারি সকালে এই ঘটনা নাকি ঘটেছে বাটানাগর শহর মোড়ে। অভিযোগ পুলিশ থেকে শুরু করে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বে এতে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এমনই এক চাঞ্চল্য অভিযোগ নিয়ে টুইটারে সরব হয়েছেন পিপলস অ্যাডভোকেট নামে নিজের পরিচয় দেওয়া সমাজকর্মী ও গবেষক বিশ্বনাথ গোস্বামী।
বছরের শুরুতেই কোভিড তখন সপ্তম স্বর্গে, সেই সময় বাটানাগরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে এমপি কাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচের আসর বসেছিল। ফাইনাল ম্যাচে সপরিবারে প্রধান অতিথি ছিলেন ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও ছিলেন তৃণমূল নেতা তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয়। এছাড়াও ছিলেন সঙ্গীতশিল্পী শান থেকে শুরু করে আরও বহু সেলিব্রিটি। ফাইনাল খেলার সঙ্গে সঙ্গে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। লাগামছাড়া ভিড় এবং কোভিড বিধি শিকেয় তুলে এমনভাবে ফাইনাল ম্যাচ হওয়া নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল চরমে। কিন্তু তাতে খুব একটা কিছু কারও-ই হেলদোল হয়নি। কিন্তু এমন এক বিপজ্জনক ফুটবল ফাইনালের ম্যাচের আড়ালে এক শ্রমিকের রক্তও যে ঝড়ে গিয়েছে তা তখনও অনেকেই জানতে পারেনি।
সমাজকর্মী ও গবেষক বিশ্বনাথ গোস্বামী তাঁর টুইটে অভিযোগ করেছেন শ্রমিক মৃত্যুর এই ঘটনাকে ঘিরে রীতিমতো আতঙ্কে বাটানগর মোড়ের বাসিন্দারা। নিরানব্বই শতাংশ মানুষই মুখে কুলুপ এঁটেছে। কেউ আতঙ্কে মুখ খুলছে না বলেও কার্যত টুইট বার্তায় ইঙ্গিত দিয়েছেন বিশ্বনাথ। এমনকী স্থানীয় মহেশতলা থানাতেও এই নিয়ে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। নেই কোনও এফআইআর। কোন মানুষ, কীভাবে, কোন পরিস্থিতিতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল তার কোনও পুলিশ রেকর্ড-ই নেই বলেই জানা যাচ্ছে। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে দক্ষিণ চব্বিশ পুলিশ প্রশাসনেও যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু কোনও প্রতিক্রিয়াই পাওয়া যায়নি। এমনকী বিষয়টি নিয়ে কেউ মুখ খুলতে পর্যন্ত চাইছেন না। পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে মেসেজও পাঠানো হয়। এরপরও কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন, লাগামছাড়া কোভিডের মাঝেই অভিষেকের MP Cup-র ইস্যুতে খোঁচা, নিয়ম-বিধি নিয়ে তোপ বিজেপি-বামেদের
বিশেষ সূত্রে খবর, ১ লা জানুয়ারি বাটানগর মোড়ে একটি নির্মিয়মাণ সাততলা বাড়ির সামনে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিশাল ফ্লেক্স লাগাতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটে। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই শ্রমিককে প্রথম স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর সেখান থেকে ওই মৃতপ্রায় শ্রমিককে নাকি স্থানান্তরিত করা হয়েছিল বজবজ-এর ইএসআই হাসপাতালে। সেখান থেকে ওই শ্রমিককে এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে তাকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।
আরও পড়ুন, Madan Mitra: 'জাতীয় ফুল পদ্মকে অবমাননা মদনের', রহড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করল BJP
সূত্রের আরও খবর শুধু এই মৃত্যু নয় যে সাততলা বাড়িতে ফ্লেক্স টাঙাতে গিয়ে এই ঘটনা তার পিছনেও বহু প্রশ্ন রয়েছে। সূত্রের খবর এই নির্মিয়মাণ বহুতলের প্রোমোটার হিসাবে নাম জড়িয়েছে মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাসের ছেলে শুভাশিস দাসের। প্রথমে এই বাড়িটির জি প্লাস ফোরের অনুমতি মিলেছিল। এরপর তাতে প্রথমে পাঁচতলা, এরপরে ছয় তলা এবং শেষে সাত তলা তৈরির অনুমতিও চলে আসে। কীভাবে এই নির্মিয়মাণ বহুতলে এভাবে একের পর এক তলা তৈরির অনুমতি মিলে গেল তা নিয়েও এখন ফিসফিসানি চলছে বাটানগরে। তাহলে কী মহেশতলা পুরসভার চেয়ারম্যান দুলাল দাস হওয়াতেই কী বাড়তি কোনও সুবিধা মিলেছে এই বহুতলের প্রোমোটারের! সেই সঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশকিছু স্থানীয় বাসিন্দার দাবি, মৃত শ্রমিক এই বিতর্কিত বহুতলেরই শ্রমিক ছিলেন। নির্মিয়মাণ বহুতলের প্রোমোটার এবং স্থানীয় রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালীদের চাপেই ফ্লেক্স চাঙানোর কাজ করছিলেন শ্রমিকরা। তাহলে কি দুর্ঘটনার পিছনে কোনও গাফিলতি এবং কার উপরে এর দায় চাপবে তার জন্যই কি মৃত শ্রমিকের সম্পর্কে সমস্ত তথ্য চেপে যাওয়া? সেই প্রশ্নও এখন ঘুরপাক খাচ্ছে বাটানগরে। সকলেই উত্তর চান। কিন্তু, প্রভাবশালীদের কুনজরে পড়ে যাওয়ার ভয়ে কেউ আর মুখ খুলছে না। আর এতে বাড়তি সুবিধা পাইয়ে দিয়েছে পুলিশের নিরুত্তর থাকাটা।