পরিবারের মূল রোজগেরে বলতে একমাত্রই ছিলেন রঞ্জনই। দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড বেদিয়াপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
শনিবার সকালে এক মর্মান্তিক ঘটনার সাক্ষী থেকেছে কলকাতা (Kolkata)। খোলা ম্যানহোলের (Manhole) মধ্যে পড়ে মৃত্যু (Death) হয়েছে দমদমের বেদিয়াপাড়ার বাসিন্দা, পেশায় অটোচালক রঞ্জন সাহার (Ranjan Saha)। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিবারের পাশাপাশি শোকের ছায়া ওই এলাকায়। একমাত্র রোজগেরে (sole earner) ব্যক্তির মৃত্যুতে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা। কীভাবে দিন যাপন করবেন তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না তাঁরা। ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন রঞ্জনের স্ত্রী সোমা সাহা।
পরিবারের মূল রোজগেরে বলতে ছিলেন একমাত্র রঞ্জনই। দক্ষিণ দমদম পৌরসভার ১১ নম্বর ওয়ার্ড বেদিয়াপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি। পরিবার (Family) বলতে রয়েছেন তিন ভাই, মা, স্ত্রী ও দুই ছেলে। চার মাস আগেই রঞ্জনের পিতৃবিয়োগ হয়েছিল। তারপরই পরিবারে সবথেকে বড় হওয়ার ফলে দায়িত্ব এসে পড়েছিল তাঁর কাঁধেই। পরিবারের আর্থিক অবস্থা (Financial Condition) একেবারেই ভালো ছিল না। কোনওরকমে দান কাটত। পরিবারের পাশাপাশি দুই সন্তানের পড়াশোনার দায়িত্বও ছিল তাঁর কাঁধে। এরপর ভাড়ায় একটি অটো নিয়েছিলেন তিনি। ৩০-এ বাস স্ট্যান্ড থেকে সিঁথির মোড় রুটের অটো চালাতেন।
আরও পড়ুন- ম্যানহোল যেন মরণফাঁদ, চোরাই মার্কেটে কেন চাহিদা বাড়ছে ম্যানহোলের ঢাকনার
শুক্রবার রাতেও অটো চালিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল রঞ্জনের। সেই মতো পুরসভার দুই নম্বর ওয়ার্ডে সেভেন ট্যাঙ্কের কাছে মালিকের বাড়ির সামনে অটো রেখে বাড়ি ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু, সেখানেই যে তাঁর জন্য মরণফাঁদ পাতা রয়েছে তা ঠাহর করতে পারেননি। সেখানেই খোলা ছিল একটি ম্যানহোল। তাতেই পা ফসকে পড়ে যান। স্থানীয়দের থেকেই এই ঘটনার কথা জানতে পারেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
আরও পড়ুন - খোলা ম্যানহোলে পড়ে প্রাণ গেল অটোচালকের, ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ ফিরহাদের
রঞ্জনের ভাই রিন্টু সাহা বলেন, "এই ঘটনার কথা আমরা স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। দাদাকে ম্যানহোলে পড়ে যেতে দেখে এক ব্যক্তি চিৎকার করে উঠেছিলেন। তারপরই দাদাকে ম্যানহোল থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।" শুক্রবার রাতেই আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল রঞ্জনকে। শনিবার সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।
এদিকে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই ঘটনা ঘটে যাওয়ায় রীতিমতো হতভম্ব হয়ে গিয়েছেন সোমা সাহা। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তিনি। পরিবারের একমাত্র রোজগেরের মৃত্যুতে কী করবেন কিছুই ভেবে পাচ্ছেন না। যেন বাজ ভেঙে পড়েছে তাঁর মাথায়। মন যেন কিছুতেই মানতে চাইছে না। সন্তানদের কীভাবে মানুষ করবেন তা ভেবে কূল পাচ্ছেন না তিনি। দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অটো চালাতেন রঞ্জন। তাই এমন একটা ঘটনা কীভাবে ঘটল তা তাঁরা বুঝতেই পারছেন না।
আরও পড়ুন- "হনুমানজির বিশল্যকরণীর মতই মোদীজি করোনা টিকা দিয়ে সবাইকে বাঁচিয়েছেন", বললেন দিলীপ
পরিবারের পাশাপাশি স্থানীয় বাসিন্দাদের তরফেও এই ঘটনার জন্য কলকাতা পৌরনিগমের বিরুদ্ধে উদাসীনতা এবং গাফিলতির অভিযোগ আনা হয়েছে। কেন ফুটপাতের মধ্যে ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা থাকবে? যদি খোলা থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে বিপদ সংকেতের চিহ্ন দেওয়া হল না কেন? এমনই একগুচ্ছ প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।