রাজ্য-রাজ্যপালের বারবারই তিক্ততা প্রকাশ্যে এসেছে। মূলত একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে তা আরও প্রকট হতে শুরু করে। আর এবার পুরভোটের দিনেই রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন স্থগিত করলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়, এরপরেই রাজ্য এবং রাজ্যপালের সংঘাত পৌছল চরমে।
রাজ্য ( WB state Government) এবং রাজ্যপালের (WB Governor)সংঘাত চরমে। পুরভোটের দিনেই রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন স্থগিতের সিদ্ধান্ত শোনাল রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। ১২ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ এদিন থেকেই তা কার্যকর হবে বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল ( Governor Jagdeep Dhankhar) । উল্লেখ্য, রাজ্য-রাজ্যপালের বারবারই তিক্ততা প্রকাশ্যে এসেছে। মূলত একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে তা আরও প্রকট হতে শুরু করে।
চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি 'রাজ্যপাল ফোন করে কি', প্রশাসনিক বৈঠকে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে প্রশ্ন করেন মমতা। এরপরেই বিতর্ক চরমে ওঠে। যদিও তার শিকড় অনেক গভীরে। ৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার নেতাজি ইন্ডোরের প্রশাসনিক বৈঠকে পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপারকে প্রশ্ন করেন মমতা। প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'তোমার জেলা সম্পর্কে আমি কিছু অভিযোগ পাচ্ছি।পরিকল্পিতভাবে কাউকে কাউকে সাজিয়ে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। অনেক দিন তোমাদের বলেছি। তোমরা কেউ কিছু করোনি। তারপর আমি ওখানে হস্তক্ষেপ করেছি।'এরপরেই মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি ওই পুলিশ সুপারকে প্রশ্ন করেন , তোমার কি ওখানে কাজ করতে ভয় লাগছে। তোমাকে কী রাজ্যপাল ফোন করে। তোমার ওসব দেখার দরকার নেই। তুমি রাজ্য সরকারের হয়ে কাজ করছ। তুমি তোমার মতো কাজ করবে। ', বলে প্রশাসনিক বৈঠকে সাংবাদিকদের অন ক্যামেরার সামনেই স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিকে ঘটনার চব্বিশ ঘন্টার মধ্য়েই টুইটে বিষোদগার করেন রাজ্যপাল। এই ঘটনা 'দুর্ভাগ্যজনক' বলে এরপর আইএসএস,আইপিএস, কলকাতা পুলিশ এবং পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের অফিসিয়াল অ্যাকাউন্টে ট্যাগও করেন ধনখড়।
আরও পড়ুন, রাজ্য বিধানসভার অধিবেশন স্থগিতের সিদ্ধান্ত, পুরভোটের দিনেই টুইট রাজ্যপালের
মূলত সম্প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজ্যপালকে টুইটারে ব্লক করে দিয়েছেন মমতা। রাজ্যপালের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে কোভিড নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন চলাকালীন মমতা নবান্নে বলেন, আমি রাজ্যপালকে টুইটারে ব্লক করে দিয়েছি। ব্লক করতে বাধ্য হয়েছি। আমি বাধ্য হয়ে এই কাজ করেছি। আমি দুঃখিত এর জন্য। এর জন্য আমি আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। উনি প্রতিদিন একটি করে টুইট করেন। বিভিন্ন ভাবে অভিযোগ তুলে, অসাংবিধানিক কথাবার্তা, অনৈতিক কথাবার্তা বলেন। আমাদের নির্দেশ দিতেন ওনার পরামর্শ অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে। পরামর্শ নয়, ওনার নির্দেশ অনুযায়ী চলতে বলতেন।আমি শুনেছি, আদালত থেকে শুরু করে আয়কর, ইডি থেকে শুরু করে সিবিআই, কাস্টমস থেকে কলকাতা সিপি, ডিসি, মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব সবাইকে ভয় দেখাচ্ছেন। তবে বাংলার মানুষ মাথা নত করে চলে না। মমতা আরও বলেন, ওর কাছে বহু ফাইল, অনেক বিল আটকে রয়েছে। ওনার সঙ্গে গিয়ে আমি দেখা করেছি। কথা বলেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি।' এখানেই শেষ নয়, রাজ্যপালের জন্যই অনেক সরকারি কাজ আটকে রয়েছে বলে অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে এরপর 'মুখ্যমন্ত্রীকে সম্মান করি' বলে টুইট করেছিলেন রাজ্যপাল। ক্ষণিকের জন্য ক্ষোভের আগুন শান্ত হলেও ফের 'রাজ্যপাল ফোন করে কি', মমতার মুখে এই কথা শোনার পর টুইটে বেশ কড়া প্রতিক্রিয়াই দেন রাজ্যপাল।
তবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পা দিয়েও স্থির ছিল না রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাত। কনসালটেন্ট নিয়োগ ইস্যুতেও জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই মমতাকে টুইটে তোপ দাগেন রাজ্যপাল। রাজ্যে কনসালটেন্ট নিয়োগ ইস্যুতে মুখ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর সামনে ভূল তথ্য তুলে ধরেছেন বলে টুইট করেন রাজ্যপাল। নিয়োগ সংক্রান্ত কোনও জবাব মুখ্য়মন্ত্রী তরফে পাননি বলেই জানান ধনখড়। রাজ্যপাল টুইটে লেখেন, 'রাজ্য সরকারি দফতরে কনসালটেন্ট নিয়োগ নিয়ে ২৮ ডিসেম্বর মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়কে নোটিশ পাঠালেও তিনি কোনও উত্তর দেননি। সংবিধানের ১৬ নম্বর ধারা ভেঙে দিয়ে অস্বচ্ছভাবে নিয়োগ করা হয়েছে। নিয়োগপদ্ধতির তথ্য দিতে ব্যর্থ মুখ্যসচিবও।' উল্লেখ্য, গত বছর ২৬ নভেম্বর বিভিন্ন দফতরে কনসালটেন্ট অর্থাৎ পরামর্শদাতা নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল রাজ্য সরকার। সেই নিয়োগকে ঘিরে প্রশ্ন তুললেন রাজ্য়পাল। কিন্তু এতো গেল বাইশ সালের সংঘাতের দলিল। বাদ যায়নি একুশও। বরং বলা যায় একুশের বিধানসভার পর থেকেই রাজ্য-রাজ্যপালের সংঘাত চরমে পৌছয়।