ফুটপাতে রোগী ফেলে পালানোর চেষ্টা পিপিই বেশধারী স্বাস্থ্যকর্মীদের, দেখুন ভিডিও

  • দিনদুপুরে দুঃসাহসিক ঘটনা
  • ফুটপাতের উপরে রোগীকে ফেলে যাওয়ার অভিযোগ 
  • প্রতিবাদে সোচ্চার নাকতলা এলাকার মানুষ 
  • পুলিশ এসে পরে এলাকা স্যানিটাইজ করে 

Asianet News Bangla | Published : Apr 30, 2020 6:08 PM IST / Updated: May 01 2020, 08:54 AM IST

বাড়ি কোথায় বেহালা। যাও কোথায় নাকতলা। ছিলে কোথায় বাঙুর হাসপাতাল। তারপর! এখানেই তো শুরু যাবতীয় নাটক। এ যেন দিনদুপুরে এক রোমহর্ষক সিনেমা। যার সাক্ষী থাকল নাকতলার সেকেন্ড স্কিমের বাসিন্দারা। এই ঘটনায় তাঁরা এতটাই হতবাক হয়ে যান যে কেউ বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী করবেন। স্বাধীনতার আগে কলকাতায় একবার মন্বন্তর হয়েছিল, সে সময় এমন সব ঘটনা সাহিত্যে আর বিভিন্ন নথিবদ্ধ ইতিহাসে মিলেছে বটে! কিন্তু তা বলে এই ২০২০ সালে খোদ কলকাতার বুকে এমন ঘটনা! 

লকডাউনের বাজারে বুধবার-ই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন কিছু ঘোষণা করেছেন। এতে কলকাতা এলাকার বাসিন্দারা কতটা সুযোগ-সুবিধা পাবেন সেই নিয়েই এলাকায় এলাকায় আলোচনা চলছে। লকডাউনের অলস দুপুরে এমনভাবেই আলোচনায় মেতেছিলেন নাকতলার সেকেন্ড স্কিমের বাসিন্দারা। এমনই সময় আচমকাই পাড়ার মধ্যে আগমন একটি সাদা অ্যাম্বুল্যান্সের। যার নম্বর ডবলু বি ২৩ ডি ৯৪৩১। গাড়ির সারা বডি জুড়ে অ্যাম্বুল্যান্সের সিল-ছপ্পর লাগানো। এবং বড় বড় করে ১০২ নম্বর লাগানো। 

এরপর যা ঘটল তা চোখ গোলগোল হয়ে যাওয়ার জোগাড় নাকতলার সেকেন্ড স্কিমের বাসিন্দাদের। কেউ তখন রাস্তায় বেরিয়েছেন কোনও কাজে। কেউ বাড়ির বারান্দা থেকে পড়শির খোঁজ নিচ্ছেন। কেউ আবার রাস্তায় দাঁড়িয়ে সামনে-র বাড়ির জানলায় দাঁড়ানো পরিচিত-র সঙ্গে আলাপটা ঝালিয়ে নিচ্ছেন। আর এই সুযোগেই সেই সাদা অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নেমে আসেন পিপিই পরিহিত ২ জন। সঙ্গে আরও একজন। যদিও তাঁর পিপিই পরা ছিল না। মুখে কাপড় লাগানো। অভিযোগ, এরপর এই তিনজনে মিলে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে এক যারপরনাই মুমূর্ষূ এক রোগীকে ফুটপাতের কোনায় রেখে দিয়ে আসেন। যেখানে ফুটপাতের উপরে রোগীকে শোয়ানা হয়েছিল তার মাথায় ছিল ত্রিপলের ছাউনি। বোঝাই যায় এখানে স্বাভাবিক সময়ে দোকান-টোকান বসে। ঘটনাটা কী হচ্ছে ঠাহর করতে কিছুটা সময় লেগে যায় এলাকার বাসিন্দাদের। কিন্তু, অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামা মানুষগুলির তৎপরতা দেখে সন্দেহ হয়। হঠাৎ করে এক মূমুর্ষূ রোগীকে রাস্তায় নামানো কেন? 

এলাকার বাসিন্দারা এবার চিৎকার শুরু করেন। অ্যাম্বুল্যান্স থেকে নামা লোকগুলো জানায় তাঁরা বাঙুর হাসপাতাল থেকে এসেছেন। এই রোগী এখানে একজনের বাড়ি-তে যাবেন। অথচ তিনি সেই বাড়ি চিনতে পারছেন না। তাই এই ফুটপাতের উপর তাঁকে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে। নেতাজি নগর থানা-কে বলা হয়েছে। ওরা এসে এই ব্যক্তিকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবেন। ভরদুপুরে ফুটপাতের উপর মূমুর্ষূ রোগী, তাও সে এলাকার কারোর পরিচিত নন, তাহলে করোনা রোগীকে ফেলে যাওয়ার চাল নয় তো! এমন সন্দিহান প্রশ্নে এবার নাকতলার সেকেন্ড স্কিমের লোকজন তেড়েফুঁড়ে ওঠেন। তাঁরা এভাবে রোগীকে ফুটপাতের উপরে ফেলে দিয়ে যাওয়ার ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ করতে থাকেন। 

 

নাম পরিচয় জানাতে অস্বীকার করা এলাকার এক বাসিন্দার দাবি, বাঙুর হাসপাতালে এই রোগীকে ভর্তি করা হয়েছিল ডায়েরিয়ার জন্য। কিন্তু, কোনওভাবে তাঁর মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। নমুনা পরীক্ষায় ওই ব্যক্তি করোনা পজিটিভ-ও হয়। কিন্তু, এরপর নাকি ওই ব্যক্তিকে বেহালায় তাঁর বাড়িতে রেখে আসার নির্দেশ আসে। সেই নির্দেশ মোতাবেক বাঙুর হাসপাতাল থেকে ওই মূমুর্ষূ রোগীকে নিয়ে নাকি অ্যাম্বুল্যান্সটি বেহালাতে যায়। সেখানে ওই রোগীর পাড়ার লোকজন অ্যাম্বুল্যান্সকে ঢুকতে দেয়নি। কারণ পাড়ার লোক নাকি সাফ জানিয়ে দেয় করোনা আক্রান্ত রোগীকে এভাবে পাড়ায় ফেলে গেলে হবে না। ওই প্রত্যক্ষদর্শীর আরও দাবি, এরপর ওই রোগী নাকি জানায় নাকতলায় তাঁর এক আত্মীয়র বাড়়িতে তাঁকে  রেখে আসতে। সেই মতো অ্যাম্বুল্যান্সটি নাকতলায় আসে। কিন্তু ওই রোগী তাঁর আত্মীয়-র বাড়ির রাস্তা চিনতে পারেননি। দেরি হয়ে যাচ্ছে দেখে পুলিশের সঙ্গে কথা বলে নাকি ওই রোগীকে রাস্তায় ফেলে বাঙুর হাসপাতালে ফিরে যাচ্ছিল অ্যাম্বুল্যান্সটি। ওই প্রত্যক্ষদর্শীর দাবি, এলাকার বাসিন্দাদের জিজ্ঞাসায় নাকি অ্যাম্বুল্যান্সে থাকা স্বাস্থ্যকর্মীরা এমনটা জানিয়েছিলেন। 

শেষমেশ বাসিন্দাদের মিলিত প্রতিবাদে পিপিই পরিহিত ওই স্বাস্থ্যকর্মীরা নাকি ফুটপাত থেকে রোগীটিকে তুলে নেয় অ্যাম্বুল্যান্সে। তাঁরা রোগী নিয়ে বাঙুরে ফিরে যাচ্ছে বলেও নাকি জানায়। কিন্তু, এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, অ্যাম্বুল্যান্সটি মোটেও বাঙুরের দিকে যায়নি। এই ঘটনার খবর নেতাজি নগর থানাতেও পৌঁছেছিলো। সেখান থেকে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে আসে। এমন অ্যাম্বুল্যান্সের সঙ্গে তাঁদের কোনও কথা হয়নি বলেই নাকি বাসিন্দাদের জানান নেতাজি নগর থানার পুলিশকর্মীরা। পরে, পুলিশের উদ্যোগে এলাকা স্যানিটাইজও করানো হয়। পুলিশ সেই রহস্যময় অ্যাম্বুল্যান্সের নম্বরও নোট করে নিয়ে যায়। এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে নেতাজি নগর থানায় যোগাযোগ করা হয়েছিল। কিন্তু, লাগাতার সেখানকার ল্যান্ডফোন ব্যস্ত থাকায় পুলিশের সঙ্গে কোনও কথা বলা যায়নি। রাত পর্যন্ত থানার ওসি-র নম্বরেও যোগাযোগের চেষ্টা চালানো হয়। কিন্তু সেই প্রচেষ্টাও সফল হয়নি। রহস্যময় সেই অ্যাম্বুল্যান্স আদৌ বাঙুর হাসপাতালের কিনা বা বাঙুর হাসপাতালের হলেও কেন ফুটপাতে রোগীকে ফেলে পালানোর চেষ্টা হল? এই সব প্রশ্নের কোনও উত্তর মিলছে না।  

Share this article
click me!