বেশ কিছু ওষুধ আছে যাতে আমরা নির্ভরশীল হয়ে উঠি। বলাই বাহুল্য়, এই নির্ভরশীলতা কিন্ত কাম্য় নয়। তবে তার মানে এই নয় যে, নিয়মিত যে ওষুধ প্রেসক্রাইব করা হয়েছে, তা বন্ধ করে দিতে হবে। এমন অনেক ওষুধই থাকে, যা দীর্ঘদিন, বলতে গেলে প্রায় সারাজীবনই খেয়ে যেতে হয়, বন্ধ করা যায় না। মোট কথা, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া যেমন কোনও ওষুধ দীর্ঘদিন ধরে খাবেন না, তেমনই আচমকা না-জিজ্ঞেস করে কোনও ওষুধ বন্ধ করে দেবেন না। আসুন বিষয়টা একটু জেনে নেওয়া যাক।
যেমন ধরুন, ডায়াজিপাম শ্রেণির ওষুধ আমরা অনেক সময়ে খেয়ে থাকি। এই ডায়াজিপাম, অ্য়ালপ্রোজোলামজাতীয় ওষুধ দীর্ঘদিন ব্য়বহারের ফলে এক ধরনের নির্ভরশীলতা গড়ে ওঠে। সেইসঙ্গে গড়ে ওঠে একধরনের সহনশীলতাও। যদি মনে করেন, আপনি অত্য়ধিক নির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন এর প্রতি, তাহলে কিন্তু একদিন আচমকা এই ওষুধ বন্ধ করে দেবেন না। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। তিনি এক বিকল্প কোনও ওষুধ দেবেন। আর সেই ওষুধকে ধীরে ধীরে ডোজ কমিয়ে বন্ধ করিয়ে দেবেন। জেনে রাখবেন, এই ধরনের ঘুমের ওষুধ হঠাৎ বন্ধ করলে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। আবার ঘুমের সমস্য়া ফিরে আসতে পারে। উত্তেজনা, পেশীতে টান ধরা, হতাশা বা খিঁচুনির মতো সমস্য়াও দেখা দিতে পারে। তাই ভেবেচিন্তে এই ধরনের ওষুধ খান বা ছাড়ুন।
নাইট্রেট শ্রেণির ওষুধ হল আইসো সার্বাইড ডাইনাইট্রেট যা সরব্রিট্রেট নামে বাজার পাওয়া যায়। এই ধরনের ওষুধ মূলত ব্য়বহার করা হয় হার্টের রক্ত চলাচল ব্য়াহত হওয়ার কারণে বুকে ব্য়থা হলে। এই নাইট্রেটজাতীয় ওষুধ জিভের নিচে দিলে কিছুক্ষণের মধ্য়েই বুকের ব্য়থা কমে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে নাইট্রেট একটানা খেয়ে গেলে শরীরে একধরনের সহনশীলতা ও নির্ভরশীলতা গড়ে ওঠে। এই নির্ভরশীলতা মারাত্মকও হয়ে উঠতে পারে। তাই এক্ষেত্রে যথেষ্ট ভাবনাচিন্তার দরকার আছে।
মরফিন শ্রেণির ওষুধ দীর্ঘদিন ব্য়বহারের ফলেও এক ধরনের নির্ভরশীলতা গড়ে ওঠে। এর আসক্তি কাটাতেও বাজারে বেশ কিছু ওষুধ পাওয়া যায়।
সবশেষে একটাই কথা বলবার, কোনও ওষুধ ব্য়বহার করার আগে পাঁচবার ভাবুন। বিশেষ করে ঘুমের ওষুধ, হার্টের ওষুধ। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলুন। প্রয়োজন হলে তবেই তা খান। আর দীর্ঘদিন খাওয়ার পর আচমকা ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই বন্ধ করে দেবেন না। মনে রাখবেন, ডিপ্রেশন বা অ্য়াংজাইটির ওষুধও কিন্তু দীর্ঘদিন খেতে হয়। আচমকা ছাড়া যায় না। ছাড়লে হিতে বিপরীত হয়। আপনার চিকিৎসকই বলে দেবন, ওষুধ ছাড়ার সময় এসেছে কিনা আর ছাড়লে কীভাবে ডোজ কমিয়ে একটু-একটু করে তা ছাড়তে হবে।