বাণিজ্যের সাথে কীভাবে সংযুক্ত হলেন দেবী লক্ষ্মী? জেনে নিন বাংলার সওদাগরদের প্রাচীন কাহিনী

প্রাচীনকালে বাঙালি বণিকরা লক্ষ্মীপুজো শেষে বাণিজ‍্যের উদ্দেশ‍্যে যাত্রা করতেন। সেই সময় জন্ম নেয় একটি প্রবাদ, “বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী”।

লক্ষ্মীপুজো শেষে সপ্তডিঙারূপী নৌকাগুলিকে মশাল জ্বালিয়ে নদী কিম্বা জলাশয়ে ভাসিয়ে দেওয়ার রীতি বহুপ্রাচীন। এই সপ্তডিঙায় পঞ্চশস্য, মুদ্রা এসব দেওয়ার প্রথাও সুপ্রাচীন। বাঙালি বণিকরা সেই সময় লক্ষ্মীপুজো শেষে বাণিজ‍্যের উদ্দেশ‍্যে যাত্রা করতেন। সেই সময় জন্ম নেয় এই প্রবাদটি, “বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী”। লিখছেন, অনিরুদ্ধ সরকার। 


রবি ঠাকুর লিখছেন, "যাবই আমি যাবই ওগাে, বাণিজ্যেতে যাবই। তােমায় যদি না পাই তবু আর-কারে তাে পাবই।" রবি ঠাকুরের এই গানে বাণিজ্যের কথা রয়েছে। আর বাণিজ্যের সাথে জড়িয়ে রয়েছে লক্ষ্মীর প্রসঙ্গ। অতীতে মনসামঙ্গল কাব্যে আমরা চাঁদ সওদাগরের বাণিজ্যে বের হওয়ার কথা পাচ্ছি। চাঁদ সপ্তডিঙ্গার বহর নিয়ে যেতেন দেশ থেকে দেশান্তরে। দেশী পণ্য বিদেশী বাজারে বিক্রি শেষে বিদেশী পণ্য বোঝাই করে ফিরতেন দেশে। সেসব কবেকার কথা। আর বাঙালির এই বাণিজ্যযাত্রার সাথে জড়িয়ে যায় একটি প্রবাদ "বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী"।আজও এই শ্লোক মুখে মুখে ফেরে- "চাকরে নফরে ঘোরে/ ফেরে দেশে দেশে/ বাণিজ্যে বসতি লক্ষী/ সর্বসুখ হয় চাষে।"

Latest Videos


আসুন এবার একটু দেখে নিই বাণিজ্যের সাথে লক্ষ্মীর এই প্রবাদটি জন্ম নিল কীভাবে। লক্ষ্মীপুজোর একটি আবশ‍্যিক উপাদান হল কলার পেটো দ্বারা তৈরী ডিঙা। যেটি রাখা থাকে লক্ষ্মীদেবীর মূর্তি অথবা প্রতীকরূপী পূজিতা দেবীর পাশে। এমন সাতটি ডিঙা তৈরীর রীতি আছে বলে একে বলে সপ্ততরী। কেউ কেউ সপ্তডিঙাও বলে থাকেন। যে সপ্তডিঙায় চড়ে চাঁদ সওদাগর বাণিজ্যে বের হতেন। এই সপ্তডিঙায় পঞ্চশস্য অথবা মুদ্রা দিয়ে ভর্তি করে দেবীর আসনে রাখার বিধি বহু প্রাচীন।রাজা মহারাজা, ধনী পরিবারে লোকজন, ব্যবসায়ীরা সপ্তডিঙায় সোনা-রূপাও রাখতেন এককালে। তারপর পুজো শেষে সেই সপ্তডিঙারূপী নৌকাগুলিকে মশাল জ্বালিয়ে নদী কিম্বা জলাশয়ে ভাসিয়ে দেওয়া হত। এরপর বাঙালি বণিকেরা সমুদ্রপথে বের হতেন বাণিজ্যে। বাঙালি বণিকদের সমুদ্রে জাহাজ ভাসানো নিয়ে সেযুগে সপ্তডিঙার কথা প্রবাদে পরিণত হয়। বাঙালি বণিকরা সেই সময় লক্ষ্মীপুজো শেষে বাণিজ‍্যের উদ্দেশ‍্যে যাত্রা করতেন। সেই সময় জন্ম নেয় এই প্রবাদটি, “বাণিজ্যে বসতে লক্ষ্মী”। 


 

পুজো শেষে নদীতে অনেকগুলো নৌকা স্বরূপ ভেলা ভাসালে তার শোভা হয় দেখার মত। এরেওয়াজ আজও রয়েছে দুই বাংলা জুড়ে। আজও বহুজায়গায় কলার পেটোর তৈরি নৌকায় পাঁচ রকম ফল, টাকা-পয়সা সহ প্রদীপ জ্বালিয়ে ভাসানোর রীতি দেখা মেলে গ্রামাঞ্চলে। লক্ষ্মীপুজোয় এই রেওয়াজ কমে এসেছে। এখন অনেকজায়গায় সাজানো ভেলা ভাসানো হয়  মকর সংক্রান্তির দিনে। লোক গবেষকদের একাংশের দাবি, কিছু প্রত্যন্ত গ্রামের হাতে গোনা কিছু বণিক সম্প্রদায় আর কিছু ব‍্যবসায়ী  এই রীতি মেনে ভেলা ভাসান যাকে বলে ‘সোদো ভাসানো’।


আরও পড়ুন-
জেনে নিন ধনদেবী লক্ষ্মীকে তুষ্ট করতে কোন নিয়মগুলি অবশ্যই মেনে চলতে হবে আপনাকে
লক্ষ্মী দেবীর ভোগে থাকে ইলিশ মাছ ভাজা, খাস বাঙাল তনুশ্রী চক্রবর্তীর বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর আমেজটাই আলাদা
লক্ষ্মী পুজোর সঙ্গে কীভাবে জড়িয়ে রয়েছে জেগে থাকার বার্তা? জানুন 'কোজাগরী'-র প্রকৃত অর্থ

Share this article
click me!

Latest Videos

‘Mamata Banerjee আজ TMC-র মুখ্যমন্ত্রী আছেন কাল জামাতের মুখ্যমন্ত্রী হবেন’ বিস্ফোরক Sukanta Majumdar
New Alipore-এ বস্তিতে বিধ্বংসী আগুন! পুড়ে ছাই একাধিক ঝুপড়ি, আগুন নেভাতে মরিয়া দমকল
PM Modi Live: কুয়েত থেকে বিশেষ বার্তা মোদীর, দেখুন সরাসরি
অনলাইনে পুজোর দেওয়ার নামে প্রতারণা! ঘাড় ধরে নিয়ে গেল পুলিশ | Hooghly News Today
ক্যানিং-এ এসে ভেবেছিল ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকবে! রাতেই গ্রেপ্তার কাশ্মীরি জঙ্গি | Canning News Today