
বর্তমান ইঁদুর দৌড়ের যুগে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS) একটি খুব পরিচিত নাম। কিন্তু এই রোগ নিরাময়ের ওষুধই বাড়িয়ে দিচ্ছে হৃদরোগের ঝুঁকি। সম্প্রতি মুম্বাইয়ের এক ২৭ বছর বয়সী তরুণী অ্যাসিডিটি এবং বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলে ইসিজি করে বার্টার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ডাক্তাররা। করোনারি আর্টারিতে স্টেন্ট (stent) বসিয়ে তরুণীর শরীরে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক করে তাঁর জীবন বাঁচানো হয়।
কিন্তু এখানেই প্রশ্ন ওঠে এত কম বয়সে হার্ট অ্যাটাকের কারণ কী? ডাক্তাররা জানিয়েছেন তরুণীর হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে পারে গর্ভনিরোধক পিল। তবে তিনি গর্ভনিরোধক বড়ি কেনই নিতেন তিনি? তরুণীর পরিবার জানায়, প্রায় ১০ বছর ধরে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (PCOS)-এ ভুগছিলেন ঐ তরুণী এবং এর জন্য গত সাত বছর ধরে গর্ভনিরোধক ওষুধও নিচ্ছিলেন। যেখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত।
পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম এমন একটি হরমোনাল ডিসঅর্ডার যা প্রজনন স্বাস্থ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে মহিলাদের ওভারিতে সিস্টের সমস্যা দেখা দেয়। হয় অনিয়মিত ঋতুস্রাব। গবেষণা অনুযায়ী, এস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরন সমন্বিত গর্ভনিরোধক পিলগুলি মহিলাদের মধ্যে ইস্কেমিক স্ট্রোক (ischemic stroke) এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি দ্বিগুণ করে তোলে। গর্ভনিরোধক পিল থেকে হার্ট অ্যাটাকের চেয়ে স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেশি থাকে। PCOS-এর সাথে স্থূলতা এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের সমস্যাও দেখা যায়, যা ডিসলিপিডেমিয়া (dyslipidemia) সৃষ্টি করে। রক্তে চর্বির উচ্চ মাত্রা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। শহুরে জীবনযাপন, মানসিক চাপ এবং শৈশব থেকেই স্থূলতা এই PCOS-এর ঘটনা বাড়াচ্ছে। প্রতি পাঁচজন শহুরে মেয়ের মধ্যে একজন এটি দ্বারা প্রভাবিত। সম্প্রতি ২২ থেকে ২৮ বছর বয়সী মহিলাদের মধ্যে PCOS-এর সাথে স্ট্রোকের ঘটনা বেড়েছে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক সময় মহিলাদের এই পিলগুলির প্রয়োজন হয়, যাতে ডিম্বস্ফোটন (ovulation) কমিয়ে ডিম্বাশয়ে সিস্ট (cyst) তৈরি হওয়া রোধ করা যায়। কিন্তু গর্ভনিরোধক বড়িগুলি রক্তে জমাট বাঁধার (blood clot) ঝুঁকি বাড়ায়। তাই মহিলাদের পারিবারিক রোগের ইতিহাস দেখে এই ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেওয়া উচিত। যদি হৃদরোগের কোনো পারিবারিক ইতিহাস থাকে তবে চিকিৎসার জন্য গর্ভনিরোধক পিলের বিকল্প ব্যবহার করাই ভালো। জীবন ধারায় পরিবর্তন, সঠিক খাদ্যভ্যাস, নিয়মিত পর্যাপ্ত শরীরচর্চা এই PCOS -এর সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। গর্ভ নিরোধক ওষুধের বদলে আজকাল হোমিওপ্যাথি বা আয়ুর্বেদিক উপায়েও এই সমস্যা নির্মূল করে থাকেন অনেকেই।