
আমাদের শরীরের অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ কাজই নিয়ন্ত্রণ করে কিছু ছোট ছোট গ্রন্থি। এর মধ্যেই একটি হল থাইরয়েড গ্রন্থি। গলার ঠিক নিচে, গলার সামনে প্রজাপতির মতো আকৃতির এই গ্রন্থিটি আমাদের শরীরের বিপাক ক্রিয়া বা মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু এই গ্রন্থি ঠিকঠাক কাজ না করলে শরীরে নানা ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যার অন্যতম লক্ষণ হল — সহজে ক্লান্ত হয়ে যাওয়া।
থাইরয়েডের সমস্যা কত ধরনের রইলো বিস্তারিত -
থাইরয়েড সমস্যা প্রধানত দুই রকম- হাইপোথাইরয়েডিজম এবং হাইপারথাইরয়েডিজম।
১। হাইপোথাইরয়েডিজম (Hypothyroidism)
শরীরে থাইরয়েড হরমোন পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি না হলে তখন হাইপোথাইরয়েডিজম হয়েছে বলা হয়। সারাক্ষণ ক্লান্তি ও অলসভাব, ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া, ওজন বৃদ্ধি, ঠান্ডা বেশি লাগা, মনোযোগের ঘাটতি, বিষণ্নতা বা ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, চুল পড়ে যাওয়া ও নখ ভঙ্গুর হয়ে যাওয়া, মাসিক চক্রে অনিয়ম (নারীদের ক্ষেত্রে), মুখ ফোলা বা চোখের নিচে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব ইত্যাদি ধরণের লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
২। হাইপারথাইরয়েডিজম (Hyperthyroidism)
শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে থাইরয়েড হরমোন তৈরি হলে তখন হাইপারথাইরয়েডিজম হয়েছে বলা হয়। ঘাম বেশি হওয়া, হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া, অস্থিরতা বা নার্ভাসনেস, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, ঘুমের সমস্যা, হাত কাঁপা, পেটের সমস্যা বা বারবার মল ত্যাগের সমস্যা এই ধরণের থাইরয়েডের লক্ষণ হতে পারে।
থাইরয়েড হয়েছে কিনা নিশ্চিত করবেন কীভাবে?
উপরোক্ত কোনও লক্ষণ আপনার মধ্যে দেখা দিলে দেরি না করে রক্তপরীক্ষা করানো প্রয়োজন। থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নির্ণয়ের জন্য সবচেয়ে সাধারণ ও নির্ভরযোগ্য পরীক্ষাগুলি হল:
* TSH (Thyroid Stimulating Hormone)
* FT4 (Free Thyroxine)
* FT3 (Free Triiodothyronine)
TSH বেশি হলে সাধারণত হাইপোথাইরয়েডিজম হয় এবং কম হলে বুঝতে হবে হাইপারথাইরয়েডিজম হয়েছে। তবে সঠিকভাবে নির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই শ্রেয়।
কী করণীয়?
যেকোনো থাইরয়েড জনিত সমস্যা এড়াতে বা থাইরয়েদডের ঝুঁকি থেকে দূরে থাকতে লক্ষণ দেখা দিলে থাইরয়েড পরীক্ষা করুন, বিশেষ করে যাদের পরিবারে থাইরয়েড রেকর্ড আছে। চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে তবেই ওষুধ খাবেন। এছাড়াও আয়োডিন ও সেলেনিয়ামযুক্ত খাবার থাইরয়েডের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, এধরণের খাওয়ার খান। সাথে নিয়মিত ব্যায়াম করুন। যতটা সম্ভব চেষ্টা করুন মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে, কারণ মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্যে প্রভাব ফেলে।