
সুস্থ জীবনযাত্রার খোঁজে মানুষ এখন স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের দিকে ঝুঁকছেন। খাদ্যতালিকায় অন্যান্য তেল ছেড়ে ‘অলিভ অয়েল’ খসাচ্ছেন লোকজন। গুগল থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্লগ, সব জায়গায়ই অলিভ অয়েলের প্রশংসা। কিন্তু পুষ্টিবিদরা বলছেন, শুধু ভালো তেল ব্যবহার করলেই হবে না, বরং তার প্রকারভেদ, তাপমাত্রা সহ উপযুক্ত ব্যবহারবিধি এবং সংরক্ষণ না জানলে এর গুণাগুণ পুরোপুরি কাজে লাগে না, বরং উল্টো ক্ষতিও হতে পারে।
অলিভ অয়েলের গুনাগুণ
* অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও অন্যান্য পুষ্টিগুণে ভরপুর অলিভ অয়েল
* হার্ট ও মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী
* অলিভ অয়েল হজমে সহায়ক, ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক হতে পারে
* রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমাতে সাহায্য করে
অলিভ অয়েল ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলি মাথায় রাখা জরুরী
পুষ্টিবিদ অনন্যা ভৌমিক বলেন, ‘‘অলিভ অয়েলের রকমফের রয়েছে। কোনটি রান্না করে খাওয়ার জন্য কোনটি স্যালাডে কাঁচা মেশানোর জন্য, তা জানতে হবে। তেলের গুণাগুণ বজায় থাকার জন্য স্মোক পয়েন্ট জানাও জরুরি।’’
দোকানে কিনতে গেলে দেখবেন অলিভ অয়েলের গায়ে ভার্জিন, এক্সট্রা ভার্জিন বা রিফাইনড লেখা থাকে। আগে এগুলোর মানে বুঝতে হবে। একট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েলে সবচেয়ে বেশি মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট মেলে। গন্ধও হয় সু্ন্দর। স্যালাডে মিশিয়ে বা স্যালাডের সঙ্গে যে সস্ খাওয়া হয়, সেই ডিপে ব্যবহারের জন্য এটি ভাল। ভার্জিন অলিভ অয়েলও স্যালাডে খাওয়া যায়। এতে রান্নাও করা যায়, তবে হালকা স্যাঁকা কিছু, ডিপ ফ্রাই নয়। রিফাইনড তেল না খাওয়াই ভালো।
রান্নার আগে এই তেলের স্মোক পয়েন্ট জানতে হবে। যে তাপমাত্রায় পৌঁছলে তেল সব পুষ্টিগুণ হারিয়ে ফেলে, তাকে বলে ‘স্মোক পয়েন্ট’। এর চেয়ে বেশি তাপমাত্রা পেলে তেল পুড়ে গিয়ে ক্ষতিকর রাসায়নিক তৈরি করতে শুরু করে।
* এক্সট্রা ভার্জিন এবং ভার্জিন অলিভ অয়েলের স্মোক পয়েন্ট বা ধূমাঙ্ক একই, ১৯০-২১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
* লাইট অলিভ অয়েলের স্মোক পয়েন্ট ২৩০-২৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস
* পোমাস অলিভ অয়েলের স্মোক পয়েন্ট ২৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি ডিপ ফ্রাই বা যেকোনো কিছু ভাজার জন্য ভালো।
অলিভ অয়েল স্বাস্থ্যকর ঠিকই তবে উচ্চ তাপমাত্রায় ছাঁকা তেলে ভেজে খাবার খেলে লাভ হয় না। খাবার সাঁতলে বা হালকা ভেজে খাওয়াই ভালো। স্যালাড বা টোস্টে দিয়ে খেতে পারেন।
কীভাবে অলিভ অয়েল সংরক্ষণ করা যায়?
* জলপাই তেল অনেকদিন সংরক্ষণ করতে অন্ধকার, ঠান্ডা জায়গায় রাখুন, রোদ ও তাপ থেকে দূরে।
* বায়ু নিরোধী কাচপাত্রে অলিভ অয়েল থাকলে ‘অক্সিডেশন’ বা বাতাসের সংস্পর্শে এসে নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিও কমে।
* প্লাস্টিকের পাত্র বা খোলা মুখওয়ালা কোনো শিশিতে রাখবেন না। এমনকি ফ্রিজে রাখারও দরকার নেই।
অলিভ অয়েল সাধারণত সঠিক ভাবে সংরক্ষণ করতে পারলে অলিভ অয়েল ১২-২৪ মাস পর্যন্ত ভলো থাকে। পুষ্টিবিদ কণিকা মলহোত্র জানাচ্ছেন, সঠিক পদ্ধতিতে তেল সংরক্ষণ করতে না পারলে তেলের গন্ধ কমবে। পুষ্টিতেও প্রভাব পড়তে পারে। ভাল মানের অলিভ অয়েলে অলিভের গন্ধ এবং সোনালি আভা থাকবে। রং ঘোলাটে হয়ে গেলে বুঝতে হবে সেটি আর ততটা ভাল নেই।