রথটি রূপোর হলেও চাকা চারটি ছিল কাঠের, জানুন কলকাতার 'রানীর রথ'-এর অজানা কাহিনি

  • কলকাতার রথযাত্রা উৎসবের পিছনে রয়েছে এক বিশাল ইতিহাস
  • রানী রাসমণিই প্রথম নিজের শ্বশুরবাড়িতেই রথযাত্রার সূচনা করেছিলেন
  •  রথটি রূপোর হলেও রথের চারটি চাকা ছিল কাঠের
  • এই রথযাত্রা উৎসবে তখনকার দিনে প্রায় আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ হতো

আজ রথযাত্রা উৎসব। করেনা ভাইরাসের প্রভাবে উৎসব ম্লান হলেও রশ্মিতে টান পড়বে না এমন আবার হয় নাকি। প্রভু জগন্নাথের মাসির বাড়ি যাওয়া না হলে প্রভুর মনটাও তো খারাপ হবে। তাই সমস্ত বিধিনিষেধ মেনেই প্রভু পাড়ি জমিয়েছেন তার মাসির বাড়িতেই। রথযাত্রা উৎসব নিয়ে সকলেরই আলাদা একটা আবেগ রয়েছে। কিন্তু কলকাতার রথযাত্রা উৎসবের পিছনে রয়েছে এক বিশাল ইতিহাস যা অনেকেরই অজানা।

আরও পড়ুন-পেয়ারা পাতাতেই দূর হবে যৌন রোগ, মুক্তি পাবেন মুখের দুর্গন্ধ থেকেও...

Latest Videos

তিনি হলেন জগতের মা, তিনি হলেন মহীয়সী, তার অশেষ কৃপা রয়েছে সকলের উপর। আর সেই তিনিই হলেন রানী রাসমণি। এই কলকাতা শহরের অনেক নতুন নবজাগরণের পথ দেখিয়েছেন তিনিই। বহু মূল্যবান জিনিসের কেন্দ্রবিন্দুই তিনি।  নিজের শ্বশুরবাড়িতেই প্রথম রথযাত্রার সূচনা করেছিলেন রানী নিজে। জানা যায় স্বামী রাজচন্দ্র দাসের  বাড়িতে নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান,দোল উৎসব, বাঙালির প্রিয় দুর্গোৎসব হলেও, রথযাত্রা উপলক্ষে কোন অনুষ্ঠান হত না। তারপর স্বামীর মৃত্যুর পরে রানী রাসমণি নিজের উদ্যোগেই  রথযাত্রা উৎসব শুরু করেন। শুধু তাই নয়,  সেই রথে গৃহদেবতা রঘুনাথ জীউকে বসাতে মনোস্থির করেন রানী রাসমণি।

আরও পড়ুন-যৌন চাহিদায় অতৃপ্তি, বিছানায় সুখ খুঁজতে পরকীয়ায় ঝুঁকছেন বিবাহিত মহিলারা...

 ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে রাসমণি দেবী প্রথম রথযাত্রা উপলক্ষে রথ তৈরী করেন। এবং রথের জন্য তখনকার হিসেবে প্রায় সওয়া লক্ষ টাকা ব্যয় করেন এবং সেই রথে গৃহদেবতা রঘুনাথ জীউকে বসিয়ে নিজের মনের বাসনা পূরণ করেন। তখন নানা স্থানে নানা ধরণের রথ হত। কিন্তু রাণীর বহুদিনের ইচ্ছা ছিল যে তিনি কাঠের নয়, রূপোর রথ তৈরি করাবেন। রানীর ইচ্ছেমতোই  সেই রথ তৈরী করা হল। তখনকার সময়ে কলকাতার অভিজাত পরিবারদের কাছে বিলেতি জুহুরী হিসেবে হ্যামিল্টন কোম্পানির খুব খ্যাতি ছিল। রাসমণি দেবীর অন্যতম জামাতা শ্রী মথুর মোহন বিশ্বাসের ইচ্ছা ছিল যে, এই রূপোর রথ ওই বিদেশি কোম্পানিকে দিয়ে তৈরি করানো হোক এবং সেই মতোনই তার ইচ্ছা রাসমণি দেবীর কাছে প্রকাশও করেন। কিন্তু রানী রাসমণির বড় জামাতা শ্রী রামচন্দ্র দাস রাসমণি দেবীকে পরামর্শ দেন যে, উপযুক্ত দেশীয় কারিগর থাকতে বিদেশির হাতে দেবকার্যের ভার দেওয়া উচিত নয়।এছাড়াও এই কাজের পারিশ্রমিক দেশীয় কারিগররা পেলে তাদের অভাব কিছুটা হলেও কমবে, এবং তাদের কাজেও আরও উৎসাহ বাড়বে।

বড় জামাতা রামচন্দ্র দাসের কথা মতোই রাসমণি দেবী দেশীয় কারিগর দিয়ে এই রূপোার রথ বানাবে বলে ঠিক করেন এবং সিঁথি, ভবানীপুর প্রভৃতি স্থান থেকে বাছাইকরা কারিগর এনে তাদের যোগ্য পারিশ্রমিক দিয়ে  নিজেদের বাড়িতে রেখে রথ বানানোর কাজ শুরু হয়। দিনরাত পরিশ্রমের ফলে আষাঢ় মাসেই রথ তৈরির কাজ শেষ হয়ে যায়। রথটি রূপোর হলেও রথের চারটি চাকা  কিন্তু ছিল কাঠের। এই রূপার রথে কাঠের চাকা কেন, এই নিয়েও হাজারো দ্বিমত থাকলেও এর সঠিক কারণ  জানা যায় নি। তারপর থেকেই শ্বশুরবাড়ি থেকে মহা সমারোহে পালিত হতো রথযাত্রা উৎসব। বিভিন্ন ধরনের বাজনা যেমন,ঢাক, ঢোল, সানাই, কাড়া, নাকড়া, বাঁশি, জগঝম্প প্রভৃতি রথযাত্রার সময়ে আনানো হতো। তার সঙ্গে থাকত কীর্তনের দলও। প্রথমে রূপোর রথ যেত, তার সঙ্গে পিছনে আসেক সমস্ত গান বাজনা ও কীর্তনের দল। দলে দলে লোক আসত রাণীর রথ দেখতে। শুধু কলকাতাই নয়,কলকাতা ছাড়াওবাইরের বহু লোক এই রথযাত্রা উৎসব দেখতে এসে আনন্দলাভ করত। এই রথযাত্রা উপলক্ষে রাণী রাসমণি তার নিজের আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ করে নিজের বাড়িতে আনাতেন। তারা সকলেই  রথযাত্রার কয়েকদিন রাসমণি দেবীর বাড়িতেই থাকতেন। রানী রাসমণির এই রথযাত্রা উৎসবে তখনকার দিনে প্রায় আট থেকে দশ হাজার টাকা খরচ হতো। রানীর রথযাত্রা উৎসব দেখার জন্য কলকাতার বড় সাহেবদেরও আমন্ত্রণ জানানো হতো। 

Share this article
click me!

Latest Videos

‘West Bengla-এ Uttar Pradesh-এর মতো সুশাসন দেবে BJP’ সনাতনী হিন্দুদের প্রতিশ্রুতি Suvendu Adhikari-র
Mamata Banerjee-র প্রশাসনকে বেলাগাম তুলোধোনা Agnimitra Paul-এর, দেখুন কী বললেন BJP নেত্রী
হিন্দুদের পাশে থাকায় শুভেন্দুকে প্রাণ নাশের হুমকি, দেখুন জবাবে কী বললেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari
'লুঙ্গিতে গিট বেঁধে আসুক, না হলে ওদের লুঙ্গিকে প্যারাসুট বানিয়ে ছেড়ে দেব' | Sukanta Majumdar Today
'ওদের লেজ কখনও সোজা হয় না' কেন বললেন শুভেন্দু! দেখুন বুঝে যাবেন | Suvendu Adhikari | Bangla News