কথায় বলে, পকেটে অ্যান্টাসিড নিয়ে তেলেভাজার দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়ায় বাঙালি, কখন কড়াই থেকে নামবে গরম বেগুনি। এমনিতে বাঙালিয়ানার স্পিরিট হিসেবে খুব একটা খারার নয় ব্যাপারটা। কিন্তু মুশকিল হল অন্যত্র। কথায়-কথায় অ্যান্টাসিড খাওয়ার বদভ্যাস মোটেও ভাল নয়। তাতে সাময়িক স্বস্তি পাওয়া গেলেও কাজের কাজ কিন্তু কিছুই হয় না। উপরন্তু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় শরীরে অন্য সমস্যা দেখা যায়।
প্রথমেই বলি, অম্বল কিন্তু সবসময়ে ভাজাভুজি বা মশলাদার খাবারের জন্য হয় না। আজকের দিনেক স্ট্রেস এত বেড়েছে যে, অম্বলের রোগী চেম্বারে এলেই ডাক্তারবাবু ভাল করে খতিয়ে দেখেন, রোগীর ঘুম ঠিকমতো হচ্ছে কিনা, রোগী সারাক্ষণ দুশ্চিন্তা করে কিনা, এইসব। আর তেমন হলে কোনও সায়কিয়াট্রিক মেডিসিন দেন আগে, তারপর অম্বলের ওষুধ। নইলে কাজ হয় না। তেমন তেমন ক্ষেত্রে তো সরাসরি সায়কিয়াট্রিস্টকে রেফার করে দেন।
অম্বলের অন্যতম কারণটা তো বোঝাই গেল। স্ট্রেস। মুঠোমুঠো অ্যান্টাসিড খেয়েও কিছু লাভ হবে না, যদি-না স্ট্রেস কমাতে পারেন। এবার আসি অন্যান্য কারণগুলোতে। দেখা যায়, অনেকেই খাওয়াদাওয়ার পরিবর্তন করে দিব্যি ভাল থাকেন। আগের মতো আর গ্যাস-অম্বল হয় না। কী ধরনের খাওয়াদাওয়া বদলাতে হয়? যেমন ধরুন অনেকেরই ভাজাভুজি বিশেষ সহ্য হয় না। বিশেষ করে বাইরের ভাজাভুজি। সেক্ষেত্রে কেউ দোকানের ভাজা খাবার বন্ধ করে দিলেই হয়তো দেখা গেল তিনি অম্বলের হাত থেকে রেহাই পেলেন। আবার কেউ কেউ থাকেন যাঁরা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্ট হন। দুধ খেলেই তাঁদের অম্বল হয়, গ্যাস হয়। দেখা যায়, যখনই তাঁরা দুধ খাওয়া ছেড়ে দেন, অম্বলের হাত থেকে নিস্তার পান।
বলে রাখা ভাল, মিষ্টি খেতে ভাল হলেও তার উপকারের চেয়ে অপকারই কিন্তু বেশি। যাঁদের ইরেটেবল বাওয়েল সিনড্রোম থাকে, তাঁরা মিষ্টি একেবারেই সহ্য করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে সপ্তাহে একটা-দুটোর বেশি মিষ্টি খেলেই অম্বলের সমস্যায় ভোগেন তাঁরা। বলাই বাহুল্য, খাবার তালিকা থেকে মিষ্টি বাদ দিলেই তাঁরা অম্বলের হাত থেকে রেহাই পান। তেল-ঝাল-মশলাদার খাবার বেশি খেলে অম্বল হয়ে যায় অনেকসময়ে। তাই সেগুলো এড়িয়ে চললেই ভাল থাকা যায়। মনে রাখবেন, শুকনো লঙ্কা ভুলেও খাবেন না, অম্বল হোক বা না-হোক। আর হ্যাঁ, খালি পেটে থাকবেন না বেশিক্ষণ।
দুধ বা দুধ-চা খাওয়ার আগে পরে টকজাতীয় কিছু খেলে কিন্তু অম্বল হতেই পারে। সেক্ষেত্রে একটু সতর্ক থাকতে হবে আপনাকে। খেয়াল রাখতে হবে, টক আর দুধ যাতে হাত ধরাধরি করে চলতে না-পারে আপনার শরীরে। আর একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন, লাঞ্চ বা ডিনার করার আধঘণ্টা থেকে একঘণ্টার মধ্যে জল খেলে অনেকেরই অম্বল হয়। কারণ, ওই সময়ে জল খেলে তা বিভিন্ন উৎসেচককে ডাইলিউড করে দেয়। ফলে খাবার হজম হতে চায় না। তাই খাওয়ার একঘণ্টা পর জল খান। অনেকক্ষেত্রে এই সামান্য নিয়মগুলো মেনে চললেই অনেক রোগী অম্বলের হাত থেকে রেহাই পান।
অ্যাসিড হলেই আমরা সাধারণত জেলজাতীয় একধরনের অ্যান্টাসিড খেয়ে নিই। এটি হল অ্যালুমিনিয়াম হাইড্রক্সাইড। একটু-আধতু খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু বেশি খেলেই বিপদ। শরীরে ক্যালশিয়ামের পরিমাণ কমে যেতে পারে। সংক্রমণের হার বেড়ে যেতে পারে। কিডনিতে পাথর জমাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। কেউ কেউ আবার এইচ-টু ব্লকার বা রেনটিডিন খান। কেউ আবার ওমিপ্রাজল বা প্যান্টোপ্রাজল খান। এগুলোও মুড়ি মুড়কির মতো খেলে নানারকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। সবচেয়ে বড় কথা হল, কথায় কথায় এই ধরনের অ্যান্টাসিড খেয়ে নিলে অম্বলের মূল কারণটি কিন্তু আর জানা যাবে না। তাতে করে বলাই বাহুল্য, লাভের বদলে ক্ষতিই হবে বেশি।