শীত পড়েছে মানেই নলেন গুড়। শুধু রসনা তৃপ্ত করাই নয়, শরীর পক্ষে রীতিমতো উপকারী এই গুড়। তবে শুধু খেজুর গুড়ই নয়, বারোমাসের আখের গুড়েও রয়েছে হাজারো গুণাগুণ। জেনে নিন।
প্রচুর ভিটামিন আর মিনারেল সমৃদ্ধ এই গুড় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। শীতে শরীর গরম রাখে। সর্দিকাশির হাত থেকে বাঁচায়।
শুনলে অবাক হবেন, কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতেও গুড়ের কোনও তুলনা নেই। কারণ, গুড় বিভিন্ন পাচক রসের ক্ষরণকে সক্রিয় করে বাওয়েল মুভমেন্টকে উদ্দীপিত করে, যার ফলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। বলাই বাহুল্য, শীতে কমবেশি সবাইকে ভুগতে হয় এই সমস্যায়। তাই নির্ভয়ে গুড় খান।
জেনে রাখবেন, খাওয়ার পর একটুখানি গুড় যদি মুখে দেন, তাহলে হজম প্রক্রিয়া খুব তাড়াতাড়ি শুরু হয়। যা সামগ্রিকভাবেই শরীরকে সুস্থ রাখে। লিভারকে ডিটক্স করতেও গুড়ের জুড়ি মেলা ভার। লিভারের টক্সিনকে শরীর থেকে বার করে দেয় এই অল্প একটু গুড়। সর্দিকাশির সমস্যাতেও খুব কাজে দেয় এই গুড়। গরমজলে একটু গুড় মিশিয়ে কিম্বা চায়ে চিনির বদলে গুড় মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়। শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে এর ফলে। সহজে ঠান্ডা লাগতে পারে না।
রক্তশোধনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেই গুড়। যার ফলে নিয়মিত গুড় খেলে বিভিন্ন রোগবিসুখ থেকে দূরে থাকা যায়। শ্বাসনালী, ফুসফুস, অন্ত্র, খাদ্যনালী এবং পাকস্থলীকে খুব ভালভাবে পরিশুদ্ধ করে গুড়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি যে, গুড়ে প্রচুর পরিমাণে আয়রন এবং ফোলেট থাকে। যা রক্তাল্পতার হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে। গুড়ে ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকায় তা অন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, ফলে পেট ভাল থাকে।
গুড়ে থাকে সোডিয়াম এবং পটাশিয়াম। যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রেসপিরেটরি সমস্যায় গুড় খুব কাজে দেয়। এমনকি, গাঁটে ব্যথা কমাতেও গুড় বন্ধুর মতো এগিয়ে আসে।
বলা হয়, এনার্জি বাড়িয়ে শরীরের ক্লান্তি দূর করতে গুড়ের জবাব নেই। পটাশিয়াম পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকার ফলে শরীরের মেটাবলিজম বৃদ্ধি করে গুড়। আর এই মেটাবলিজম বাড়ার ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকে।
সবশেষে বলি, চিনির বদলে গুড়ের সরবত শুধু শরীরই নয, পেট ঠান্ডা রাখতেও সাহায্য করে। তাই ডায়াবেটিস না-থাকলে নিশ্চিন্তে গুড় খান। শীতে যেরকম খেজুর গুড় পাওয়া যায়, গরমে পাওয়া যায় আখের গুড়। যা কোনও অংশ কম উপকারী নয়। অতএব আপনি চাইলে সারাবছরই সঙ্গের ঝোলায পাউরুটি আর ঝোলা গুড় রাখতে পারেন।