
অনেকেই জানে না আমাদের দেহের মুখ্য অঙ্গগুলিকে সতেজ ও কার্যকর রাখে আমাদের হরমোন। মানবদেহে হরমোনের মাত্রার উত্থান-পতন একটি স্বাভাবিক ঘটনা, তবে তীব্র ওঠানামা মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকির সৃষ্টি করতে পারে। দেহে হরমোনের ভারসাম্য বিক্রি গেলে যাবতীয় জৈবিক প্রক্রিয়ায় তার প্রভাব পড়ে। অথচ রোজকার জীবনে আমাদের খাদ্যের তালিকায় এমন অনেক খাবারই আছে যা আমাদের হরমোনের ভারসাম্যতে রোজ প্রভাব ফেলছে। জেনে নিন, কোন খাবারগুলি হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে দেয়-
১. সয়াবিন তেল এবং প্রক্রিয়াজাত সয়াবিন পণ্য-
বর্তমানে নিরামিষ ভোজিদের মধ্যে সয়াবিনের চল বেশ জনপ্রিয়। এছাড়াও যারা জিম করে শরীর গড়ছেন মাছ-মাংস ছাড়াও সয়াবিন তাদের কাছে এক বিকল্প প্রোটিনের উৎস। তবে সয়াবিনে ফাইটোস্ট্রোজেন এর মত এক ধরনের যৌগ থাকে যা ইস্ট্রোজেনের মতো আচরণ করে। ফলে সয়াবিন তেল ও প্রক্রিয়াজাত সয়াবিন পণ্য অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করার ফলে শরীরে এই যৌগের পরিমাণও বেড়ে যায় যার ফলে ইস্ট্রোজেন এবং অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্য বিগড়ে যেতে পারে।
২. উচ্চ ফ্রুক্টোস যুক্ত খাবার ও কৃত্রিম মিষ্টির ব্যবহার-
ফ্রুক্টোস যুক্ত যেকোনো কোমল পানীয়, প্যাকেজেড স্ন্যাক্স বা কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় খাবার ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্ট বাড়িয়ে দেয় যা শরীরে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ এবং অন্যান্য হরমোনের ভারসাম্যকে প্রভাবিত করে। এছাড়াও কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, কৃত্রিম মিষ্টি জাতীয় খাবার পেটের মাইক্রোবায়ামের উপর প্রভাব ফেলে। পেটের উপকারী জীবাণুর ক্ষতি হলে হরমোনের ভারসাম্য বিগড়াতে পারে।
৩. অ্যালকোহল
অতিরিক্ত অ্যালকোহল লিভারের কার্যক্ষমতা নষ্ট করে। ফলে লিভারে থাকা ভালো হরমোনসমূহ যেমন বিপাকক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তেমনি ইস্ট্রোজেন ও প্রোজেস্টেরনের মত যৌন হরমোনের ভারসাম্যকেও বিঘ্নিত করে। স্ট্রেস হরমোন বা দেহে করটিসলের মাত্রা বাড়াতে পারে।
৪. রেড মিট
রেড মিট বা বিশেষ করে মাংসের লিভার বা মেটেতে উচ্চ পরিমাণে ভিটামিন থাকে যা থাইরয়েড হরমোনের কার্যকারিতায় বাধা সৃষ্টি করতে পারে। ফলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে।
আপনার শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা কিভাবে বুঝবেন?
১. দুশ্চিন্তা ও ঘুমের ব্যাঘাত : অতিরিক্ত ব্যায়াম এবং কম চর্বি বা কম কার্বোহাইড্রেট যুক্ত খাবার থেকে হওয়া শারীরিক চাপের কারণে ইস্ট্রোজেন হরমোন ওঠানামা বা হ্রাস উদ্বেগ, অস্থিরতা এবং ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
২. প্রস্রাব সংক্রমণ : অতিরিক্ত চিনি, স্যাচুরেটেড ফ্যাট গ্রহণ এবং ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি6 বা জিংকের ঘাটতির কারণে প্রোজেস্টেরনের মাত্রা কমে যেতে পারে, যার কারণে নারীদের যোনিতে শুষ্কতা, মূত্র সংক্রমণ, জয়েন্টে ব্যথা এবং ওজন বৃদ্ধি হতে পারে।
৩. শুরুর দিকের বয়ঃসন্ধি : বয়ঃসন্ধি হল সেই সময় যখন একটি শিশু প্রাপ্তবয়স্ক প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে। বাতাসের বিষাক্ত পদার্থ থেকে সৃষ্ট পরিবেশগত ইস্ট্রোজেন শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি করে, যা সময়ের পূর্বে, ৮ থেকে ৯ বছর বয়সেই বয়ঃসন্ধির দিকে নিয়ে যায়।
৪. ওজন কমে বা বেড়ে যাওয়া : আমাদের শরীর কতটা শক্তি ব্যবহার করে সেটি নিয়ন্ত্রণ করে থাইরয়েড হরমোন। এটির ক্ষরণ কমে গেলে ওজন বৃদ্ধি, বিষণ্নতা, চুল পড়া, শক্তি হীনতা, কোষ্ঠকাঠিন্য, শুষ্ক ত্বক এবং ঠান্ডা সহ্য করতে না পারার মতো সমস্যাগুলি দেখা দিতে পারে। অন্যদিকে, এই হরমোনের বৃদ্ধির কারণে ওজন হ্রাস পায়, বর্ধিত বিপাকের কারণে উচ্চ শক্তি নির্গমণ হওয়ায় শরীর সারাক্ষণ উষ্ণ থাকে এবং ডায়রিয়া জাতিয় সমস্যার সৃষ্টি হয়। কর্টিসল মাত্রায় ভারসাম্যহীনতার কারণেও ওজন বাড়ে।