একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস দেশে বিদেশে কিভাবে পালন করছেন বাঙালিরা

Published : Feb 21, 2023, 11:26 AM ISTUpdated : Feb 21, 2023, 11:30 AM IST

১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে 'বাংলা ভাষা প্রচলন বিল' পাশ হয়। যা কার্যকর হয় ৮ মার্চ ১৯৮৭ সাল থেকে। ১৯৫২ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিনটি জাতীয় শহিদ দিবস হিসেবে উদ্‌যাপিত হয়ে আসছে।

PREV
110

বঙ্গীয় সমাজে বাংলা ভাষার অবস্থান নিয়ে বাঙালির ভাষা চেতনার উন্মেষ ঘটে, তারই সূত্র ধরে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর-ডিসেম্বরে ভাষা-বিক্ষোভ শুরু হয়। ১৯৪৮ সালের মার্চে এই নিয়ে সীমিত পর্যায়ে আন্দোলন হয় এবং ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি তার চরম প্রকাশ ঘটায়।
 

210

একুশে ফেব্রুয়ারি সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ ধারা অমান্য করে রাজপথে বেরিয়ে এলে পুলিশ তাদের ওপর গুলি চালায়। এতে আবুল বরকত, আবদুল জব্বার, আবদুস সালাম-সহ কয়েকজন ছাত্রযুবা হতাহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ ঢাকাবাসী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হোস্টেলে সমবেত হয়। 
 

310

নানা নির্যাতন সত্ত্বেও ছাত্রদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরা প্রতিবাদ জানাতে পরের দিন ২২ ফেব্রুয়ারি পুনরায় রাজপথে নেমে আসে। তারা মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে শহীদদের জন্য অনুষ্ঠিত গায়েবি জানাজায় অংশগ্রহণ করে। ভাষাশহীদদের স্মৃতিকে অমর করে রাখার জন্য ২৩ ফেব্রুয়ারি এক রাতের মধ্যে মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে গড়ে ওঠে একটি স্মৃতিস্তম্ভ, যা সরকার ২৬ ফেব্রুয়ারি গুঁড়িয়ে দেয়। 

410

একুশে ফেব্রুয়ারির এই ঘটনার মধ্য দিয়ে ভাষা আন্দোলন আরও বাড়তে থাকে। ১৯৫৪ সালে প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করলে ৭ মে অনুষ্ঠিত গণপরিষদের অধিবেশনে বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। বাংলাকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিয়ে সংবিধানে পরিবর্তন আনা হয় ১৯৫৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি।

510

১৯৮৭ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদে 'বাংলা ভাষা প্রচলন বিল' পাশ হয়। যা কার্যকর হয় ৮ মার্চ ১৯৮৭ সাল থেকে। ১৯৫২ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিনটি জাতীয় শহিদ দিবস হিসেবে উদ্‌যাপিত হয়ে আসছে। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনায় ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ১২টা এক মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি এবং পরে একাদিক্রমে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষকবৃন্দ, ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন এবং সর্বস্তরের জনগণ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন। 

610

এই সময় আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি গানের করুণ সুর বাজতে থাকে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর একুশে ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন হিসেবে ঘোষিত হয়। এদিন শহীদ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে রেডিও, টেলিভিশন এবং সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। দেশের সংবাদপত্রগুলিও বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। বাংলা একাডেমি ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে ঢাকায় একুশে বইমেলার আয়োজন করে।
 

710

দেশে-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাঙালিরা এই দিনে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে থাকেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এই দিন উৎযাপন করা হয়। ১৯৫৩ সাল থেকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। বাংলাদেশে এ দিন সকালে সর্বস্তরের মানুষ খালি পায়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করে এবং শহীদ মিনারে গিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। সারাদিন মানুষ শোকের চিহ্নস্বরূপ কালো ব্যাজ পড়ানো হয়। এছাড়া আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি তর্পণ করা হয় এবং ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করা হয়। 
 

810

১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দিনটি কখনও জাতীয় শোক দিবস, কখনও বা জাতীয় শহীদ দিবস হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে। ২০০১ সাল থেকে দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে। বাংলাদেশে এদিনে সরকারি ছুটি। বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়। দৈনিক সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হয় পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে। বাংলাদেশ সরকার বাংলা ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একুশে পদক প্রদান করে।

910

সোশ্যাল মিডিয়ায় সকাল থেকেই 'মোদের গরব মোদের আশা, আ-মরি বাংলা ভাষা'- বা 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ শে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি' এই গানের কথার উল্লেখ করে পোস্ট করে বাংলা ভাষার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপণ করছেন অনেকেই।

1010

অনেকেই আবার জাতি বর্ণের বিদ্বেশ ভুলে বাংলা ভাষাকে শীর্ষে রাখার অনুরোধ করেছেন। ভাষা দিবসে শহিদদের আত্মত্যাগ যাতে কোনওভাবেই বিফলে না যায় তার দায়িত্ব প্রতিটি বাঙালির। যারা বাংলা ভাষাকে জাতীয় স্বিকৃতি দিয়ে গিয়ে নিজেদের জীবন দিয়েছেন, আমরা কোনও ভাবেই এই ভাষার যেন অসম্মান না করি, এমন অনুরোধও করেছেন বহু বাঙালি।

click me!

Recommended Stories