দুর্গাপুজোর উৎসব আবহে গা ভাসিয়েছে বাঙালি। আশ্বিন মাসে শুক্লা তিথিতে দুর্গাপুজো পালিত হয়। যদিও প্রকৃত অর্থে, উৎসব শুরু হয় ষষ্ঠীর দিন থেকে। দুর্গাপুজোর পাঁচ দিন মহাষষ্ঠী, মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী, মহানবমী এবং বিজয়া দশমী হিসেবে পরিচিত। দশমী মানেই উমার কৈলাসে ফেরার পালা। চারিদিকে বিষাদের সুর। ভারাক্রান্ত মন নিয়েই সকলে ঘরের মেয়েকে বিদায় জানায়। উৎসবপ্রেমী বাঙালির সবচেয়ে বড় পার্বণ এই দুর্গা পুজো।
ঢাকের তাল, সিঁদুর খেলা, দেবীর বরণের পর জলাশয়ে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর কোলাকুলি, বিজয়ার শুভেচ্ছা বিনিময়, মিষ্টি মুখ আর একরাশ নতুন আশা নিয়ে শুরু হয় বাঙালির বিজয়া পর্ব। শুরু হয় আবার পরের বছরের অপেক্ষা।
দশমীর দিন মায়ের কৈলাসে ফিরে যাওয়ার দিন। দশমী পুজো শেষে মায়ের বরণ, সিঁদুর খেলার মধ্যে দিয়ে হয় বিসর্জন। আজকাল অনেকেই দশমীর দিন সকাল সকাল বা দুপুরবেলা ‘শুভ বিজয়া’ লিখে পাঠান পরিচিতদের। কিন্তু এতে আবার অনেকে অসন্তুষ্ট হন। কারণ অনেকেই মনে করেন সকাল বা দুপুরে ‘শুভ বিজয়া’ বলা যায় না। বলতে হয় সন্ধে বা রাতে। কিন্তু এই ব্যাপারে কি সত্যিই কোনও নিয়ম রয়েছে? আসুন জেনে নেওয়া যাক।
আসলে এটি কোন শাস্ত্রে বা কোন পুঁথিতে কথিত নেই যে বিজয়া দশমীর দিনে সকালে বা দুপুরে বলা যাবে না সে অর্থে সন্ধ্যে বা রাতেই বলতে হবে।কোনও শাস্ত্রে উল্লিখিত নিয়ম নয়। সন্ধে বা রাতে শুভ বিজয়া বলার একটি কারণ রয়েছে। মাতৃপ্রতিমার বিসর্জন সাধারণত বিকেলের পর থেকে শুরু হয়। চলে মাঝরাত পর্যন্ত। মায়ের বিসর্জন হয়ে গেলে সেখান থেকে ফিরে এসে বিজয়া উৎসব পালন করার রীতি ছিল প্রাচীন বঙ্গে। সেই উৎসবেই বলা হত ‘শুভ বিজয়া’। তাই প্রতিমা বিসর্জন না হলে ‘শুভ বিজয়া’ বলার রীতি নেই।
দশমীর দিন অনেকে কেনো পছন্দ করেন না শুভ বিজয়া বলা?
* একেকটি মণ্ডপে একেক সময়ে প্রতিমা বিসর্জন করা হয়ে থাকে। কোনও মণ্ডপের প্রতিমা সন্ধেয় বিসর্জন হয়, কোনওটি বিসর্জন হতে হতে মধ্যরাত হয়ে যায়। তাই যাকে ‘শুভ বিজয়া’ বলা হচ্ছে, তার সঙ্গে সময় নাই মিলতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ‘শুভ বিজয়া’ বলার সেরা সময় হল পরদিন অর্থখৎ একাদশীর দিন। ‘শুভ বিজয়া’ লক্ষীপুজোর আগে যেকোনওদিন বলা যায়। তাই তাড়াহুড়ো করে দশমীর দিনই বলতে হবে, এমন ব্যাপার নেই।
মায়ের বিসর্জনের দিন শুভ বিজয়া কেন বলা হয়?
* মায়ের বিসর্জনের দিন শুভ বিজয়া বলে মিষ্টিমুখ করার রীতি কেন, অনেকের মনেই এমন প্রশ্ন আসতে পারে। এর নেপথ্যে রয়েছে এক পৌরাণিক কাহিনি। পুরাণ মতে, দেবী দুর্গার আবির্ভাব হয় আশ্বিন মাসের কৃষ্ণা চতুদর্শী তিথিতে। এর পর দেবীর বোধন ষষ্ঠী ও নিরঞ্জন দশমীতে হয়। দেবী তাঁর আবির্ভাবের পর মহিষাসুরের সঙ্গে লড়াই মত্ত হন। নয় দিন নয় রাত্রির পর দশমীতে জয়লাভ করেন। তাই দশমীর দিন বিজয়া দশমী বলার রীতি প্রচলিত।