
শরীরের স্বাভাবিক কাজকর্মের জন্য শুধু জল নয়, কিছু প্রয়োজনীয় মিনারেলও দরকার। এর মধ্যে অন্যতম হল লবণ। অনেকেরই ভুল ধারণা আছে যে লবণ জল শরীরের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু প্রাকৃতিক সামুদ্রিক লবণ (Unrefined Sea Salt) বা পিঙ্ক হিমালয়ান সল্ট (Himalayan Pink Salt) মিশিয়ে খেলে শরীরের অনেক উপকার হয়। চিকিৎসাগতভাবে, এটি কিডনির স্বাস্থ্য, হজম, ত্বকের স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং শারীরিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য ভালো।
সকালে লবণ জল পান করার উপকারিতা :
১. হজম ক্ষমতা বাড়ায় :
সকালে লবণ জল পান করলে হজমের রস নিঃসরণকারী গ্রন্থিগুলো উদ্দীপিত হয়। লবণ জিভের স্বাদ কোরকগুলোকে সক্রিয় করে হজম প্রক্রিয়া শুরু করে। এটি (Hydrochloric Acid) বাড়িয়ে খাবার দ্রুত হজম করতে সাহায্য করে। অন্ত্রের স্নায়ুর ক্ষতি মেরামত করে। মূত্রাশয়ের সমস্যা, পেট ফাঁপা এবং জ্বালাপোড়া থাকলে এটি ভালো সমাধান।
২. শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখে :
শরীরে বেশি জল থাকলেও দুর্বলতা এবং মাথা ঘোরা হতে পারে। এর কারণ হল শরীরে প্রয়োজনীয় Electrolytes-এর অভাব। লবণ জল পান করলে শরীরে জলের সঠিক চক্র বজায় থাকে। গাঁটের ক্ষয় এবং পেশীর দুর্বলতা কমায়। শরীরে জলের অভাব হতে দেয় না। যারা দীর্ঘক্ষণ ব্যায়াম করেন বা যাদের শরীরে বেশি পরিশ্রম হয়, তাদের জন্য এটি জলের অভাব পূরণের ভালো উপায়।
৩. শরীরের pH-এর ভারসাম্য বজায় রাখে :
শরীরে অ্যাসিডের মাত্রা বাড়লে বিভিন্ন রোগ হতে পারে। এর মধ্যে কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বকের সমস্যা এবং অস্বস্তি অন্যতম।
এটি শরীরের অ্যাসিডের মাত্রা কমিয়ে ক্ষতিকর সমস্যাগুলো ঠিক করে। ডায়রিয়া হওয়া থেকে বাঁচায়। পরিবেশ থেকে শরীরে প্রবেশ করা টক্সিন কমায়। অ্যাসিড রিফ্লাক্স (Acid Reflux) এবং পেটের সমস্যায় এটি ভালো কাজ করে।
৪. কিডনির স্বাস্থ্য রক্ষা করে :
লবণ জল কিডনিতে থাকা পাথর (Kidney Stones) গলিয়ে বের করে দিতে সাহায্য করে। ইউরিনারি ট্র্যাক্ট (Urinary Tract Cleansing) পরিষ্কার করে। কিডনির কার্যকারিতা বাড়ায়। যাদের কিডনিতে পাথর আছে এবং ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন (UTI) আছে, তারা সকালে হালকা গরম লবণ জল পান করতে পারেন।
৫. মানসিক চাপ কমায় :
লবণ জলে মিনারেল, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাশিয়াম থাকে। এটি মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলোকে সুস্থ রাখে। মেজাজ ঠিক রাখতে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। ঘুম বাড়ায় এবং ঘুমের অভাবজনিত সমস্যা কমায়। ঘুম না আসা ও মানসিক চাপ থাকলে এটি একটি প্রাকৃতিক সমাধান।
৬. ত্বককে উজ্জ্বল করে :
লবণ জল শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। ত্বকের সমস্যা (Acne, Eczema) কমায়। ত্বকের কোষগুলো নতুন করে সৌন্দর্য ফিরে পায়।
নিয়মিত জল পান করলে ত্বক নরম হয়। প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল ত্বক পেতে সকালে হালকা গরম লবণ জল পান করুন।
৭. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় :
লবণ জল পান করলে বুকে কফ, কাশি, গলা ব্যথা কমে। ফুসফুস পরিষ্কার হয় এবং কফ বের হয়। রোগের জীবাণু ধ্বংস করে। সাইনাসের চাপ (Sinus Congestion) কমায়। আবহাওয়ার পরিবর্তনের কারণে যাদের সহজে শরীর খারাপ হয়, তারা এটি নিয়মিত পান করলে উপকার পাবেন।
লবণ জল তৈরি করার পদ্ধতি :
উপকরণ:
১ কাপ হালকা গরম জল
১/৪ চা চামচ প্রাকৃতিক সামুদ্রিক লবণ বা পিঙ্ক হিমালয়ান সল্ট
প্রণালী:
* জলে লবণ মিশিয়ে ভালো করে মেশান।
* সকালে খালি পেটে ধীরে ধীরে পান করুন।
* সাধারণ খাবার লবণ ব্যবহার করবেন না। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক লবণ ব্যবহার করুন।