
নবজাতক ও শিশুদের ত্বক অত্যন্ত সংবেদনশীল ও কোমল। তাই তাদের যত্নে বাড়তি সতর্কতা জরুরি। বর্তমান ব্যস্ত জীবনযাত্রায় ডায়পার শিশুদের যত্নে একটি বড় ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে ডায়পার ব্যবহারের ফলে শিশুর ত্বকে দেখা দিতে পারে নানা সমস্যা—র্যাশ, অ্যালার্জি, এমনকি ছত্রাকের সংক্রমণও। বিশেষ করে বর্ষাকালে, স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়ে ওঠে। অভিভাবকদের জানা থাকা উচিত, কবে, কখন এবং কতক্ষণ ডায়পার ব্যবহার করা নিরাপদ।
ডায়পার থেকে শিশুর ত্বকের ক্ষতি
* শিশুর ত্বকে যদি একটানা ভাবে ফুসকুড়ি, চুলকানির সমস্যা লক্ষ্য করলে তা গুরুত্ব নিয়ে দেখা প্রয়োজন।
* ১-৫ বছর বয়সের মধ্যে থাকা শিশুদের মধ্যে এগজিমা দেখা দিতে পারে। র্যাশ, ফুসকুড়ি, লালচে ফোঁড়ার মতো হতে পারে। তাই সেদিকে খেয়াল রাখুন।
* আরও এক ধরনের র্যাশ হয়, যাকে বলে আরটিকেরিয়া। ২ থেকে ৩ বছরের শিশুদের এমন অ্যালার্জি হতে পারে ত্বকে।
তবে বাবা মায়েদের কী করনীয়?
* ডায়াপার কেনার আগে অবশ্যই ভাল করে দেখে নিন এর কাপড়। নরম সুতির কাপড়ের ডায়পারই কিনবেন।
* বাইরে বেরোনোর সময়ে ডায়াপার পরালে, কিছু সময় পর পর তা পরীক্ষা করুন। ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ডায়পার বদলে দিন।
* রাতভর শিশুকে ডায়পার পড়িয়ে ঘুম পারাবেন না। এতে শিশুর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়।
* একটানা ডায়পার পড়িয়ে রাখলে, ত্বকে ঘষা লেগে র্যাশ, অ্যালার্জি হয়। ত্বক লালচে হয়ে ফুলে যায়, জ্বালা করে শিশুর।
* ডায়পার থেকে যে র্যাশ হয়, তাকে চিকিৎসার ভাষায় বলে ‘ডায়াপার ডার্মাটাইটিস’।
* অনেক সময়েই ডায়পার পড়া জায়গায় ছত্রাকের সংক্রমণও হয়। তাছাড়া ডায়াপারের জায়গায় লালচে দাগ দেখা দেয় অনেক শিশুর। একে বলে 'সেবোরিক ডার্মাটাইটিস'।
শিশুর ত্বকের যত্ন নেবেন কীভাবে?
* শিশুর ত্বকের জন্য বড়দের সাবান কখনওই ব্যবহার করবেন না। কম ক্ষারযুক্ত, ph ব্যালান্স ৫.৫ রয়েছে, এমন সাবানই ব্যবহার করুন শিশুর জন্য।
* শরীরের ভাঁজে ভাঁজে, যেমন- কুঁচকি, বাহুমূল, নিতম্বে প্রত্যেক দিন সাবান দিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে। সপ্তাহে দু’-তিন দিন সারা গায়ে ভাল করে সাবান মেখে স্নান করাতে হবে শিশুকে।
* পারলে ক্ষরীয় সাবানের পরিবর্তে জেল বা ক্রিম বেস লিকুইড সোপ ব্যবহার করুন। এর ph ব্যালান্স শিশুদের ত্বকের সঙ্গে জন্য উপযুক্ত।
* গরমের দেশে শিশুদের ত্বকে ঘন ক্রিমের দরকার পড়ে না। সেক্ষেত্রে ভাল হয় বডি লোশন ব্যবহার করলে। হালকা অথচ ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে।
* স্নানের আগে শিশুদের তেল মালিশ করার চল চিরকালীন। এতে পেশির গড়ন, রক্ত চলাচল ভালো হয়। নারকেল তেল ও অলিভ তেলই শিশুর ত্বকের জন্য বেশি ভাল।
* আগে, জন্মের পরে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত তেল না মাখাতে, স্নান না করাতে বলা হত। কারণ, মায়ের প্লাসেন্টা থেকে বেরোনোর পরে সদ্যোজাতের ত্বকে ভারনিক্স স্কেসিওসা বলে একটা স্তর থাকে। কিন্তু এখন ধারণা বদলেছে। শিশুকে তেল, সাবান মাখিয়ে স্নান করানোরই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কারণ, পরিচ্ছন্নতাই চর্মরোগকে দূরে রাখতে পারে।
সারাংশ
ডায়পার আপনার অভিভাবকত্বে সুবিধা আনলেও বাচ্চার ত্বকের ক্ষেত্রে ক্ষতিকর। দীর্ঘক্ষণ ডায়পার পড়লে শিশুর ত্বকে যদি ধারাবাহিক ভাবে ফুসকুড়ি, চুলকানির সমস্যা চলতেই থাকে, তবে গুরুত্ব নিয়ে দেখুন।