বেলেঘাটায় নিজের দু-মাসের শিশুকন্য়াকে খুন করার অভিযোগ উঠল মায়ের বিরুদ্ধে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। কেউ বলছেন কন্য়াসন্তান বলেই খুন করেছেন ওই মহিলা। আবার কেউ-বা বলছেন, অবসাদেই খুন করেছেন ওই মহিলা। যদিও তদন্ত শেষ হওয়ার আগে নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়, কেন নিজের ফুটফুটে দু-মাসের মেয়েকে খুন করলেন ওই মহিলা, তবে কিছু অনুমান করা যায় বইকি।
পোস্ট পার্টাম বেবি ব্লু বলে একধরনের অবসাদ রয়েছে। যার জেরে এমন ঘটনা মাঝেমধ্য়েই ঘটে থাকে। এটি একধরনের অবসাদ বা ডিপ্রেশন।
বাচ্চা জন্মানোর পর শরীরে হরমোনের কিছু পরিবর্তন হয়। যার ফলে এই ডিপ্রেশন দেখা যায়। এর লক্ষণগুলিও অবসাদের লক্ষণের মতোই হয়। যেমন হঠাৎ খুব আনন্দ আর তার পরমূহূর্তেই বিষণ্ণতা। এছাড়া, খিদে না-হওয়া, ঘুমোতে না-পারা, মনঃসংযোগের অসুবিধে দেখা দেয়। এই লক্ষণগুলি বাচ্চা জন্মানোর তিন থেকে চারদিনের মধ্য়ে দেখা দিতে পারে। সাধারণত সপ্তাদুয়েকের মধ্য়েই এই লক্ষণগুলি চলে যায়। কিন্তু তা আবার মাঝেমধ্য়েই ঘুরে ফিরে আসতে পারে। প্রতি ৮ জনের মধ্য়ে ১ জনকে এই অবসাদ গ্রাস করে।
এর লক্ষণগুলি আরেকটু বিশদে জেনে নেওয়া যাক। কোনও কিছুতেই আর আগের মতো আনন্দ না-পাওয়া, কারণ ছাডাই হঠাৎ করেই কান্না পাওয়া বা চোখ জল এসে যাওয়া, বুকের ভেতরটা খালি লাগা, খুব বেশি দুশ্চিন্তা, নৈরাশ্য় দেখা দিতে পারে এই রোগে। কাউর ক্ষেত্রে খিদে বা ওজন বেড়ে যায় আবার কাউর ক্ষেত্রে তা কমে যায়। ভয়ানক ক্লান্তি, কখনও কখনও অতিরিক্ত কথা বলা, খুব ছটফট করা, তারপরেই আবার চুপচাপ ঝিমিয়ে যাওয়া। এর সঙ্গেই থাকে, কোনও কিছুতে মনঃসংযোগ করতে না-পারা, সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা, মৃ্ত্য়ু চিন্তা বা আত্মহত্য়ার কথা ভাবা।
এই রোগে অনেক সময়ে মেজাজ হারিয়ে ফেলার ঘটনা ঘটে। আর তা এতটাই যে, বাচ্চাকে খুন করে ফেলার মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। মনোবিদরা বলেন, তাঁদের কাছে এমন কিছু রোগী আসেন, যাঁদের অতীত ইতিহাস খুঁজে বার করলে এমন ঘটনার সন্ধান পাওয়া যায়।
বেলেঘাটার ঘটনা ঠিক কী কারণে ঘটেছে, তা বলা মুশকিল। তা তদন্দসাপেক্ষ। তবে পোস্ট পার্টাম বেবি ব্লুর সম্ভাবনাকে কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না। এমন ঘটনা মাঝেমধ্য়েই খবরে প্রকাশিত হয়। আমরা ভাবি মা কত নৃশংস। কিন্তু বিষযটা আদৌ তা নয়। পোস্ট পার্টাম বেবি ব্লু এমনই এক ধরনের অবসাদ, বাচ্চা জন্মানোর পর তা কখনও বা এমন দুর্ভাগ্য়জনক পরিণতির দিকে নিয়ে যায় মায়েদের।