রহস্য রোমাঞ্চে ঘেরা পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বেড়িয়ে আসুন, জানুন যাওয়ার উপায়টা

বাঙালি ঘুরতে পেলে আর কিছুই চায় না 
বলতে গেলে বাঙালির পায়ের তলায় যেন সর্ষে
যারা সপ্তাহান্তে কোথাও ঘুরতে চান তাদের জন্য রইল ঠিকানা
ম্যানগ্রোভ আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের এই দেশ বিশ্বখ্যাত

ঘরের কাছেই রয়েছে সপ্তাহান্তে ছুটি কাটানোর অনেক সুন্দর সুন্দর জায়গা। তার মধ্যে সুন্দরবন অন্যতম। শীতকাল মানেই বেশ কয়েকটি ছুটির দিন ক্যালেন্ডার জুড়ে আর বেড়ানোর জন্য অনুকূল আবহাওয়া। বন্ধু স্বজন নিয়ে অল্প আয়োজনে টুক করে ঘুরে আসাই যায় এই জঙ্গলে। 
বৃহত্তম ব-দ্বীপ অর্থাৎ সুন্দরবন নামটা মনে এলেই রহস্য রোমাঞ্চে ঘেরা আদিম ম্যানগ্রোভ অরণ্যের কথা মনে পড়ে। জলে কুমির, ডাঙায় বাঘ! এ প্রবাদ এ জায়গার সঙ্গে খাপ খায় একেবারে। সুন্দরবনের বেশিরভাগ অংশই বাংলাদেশে। কোন দেশের সীমারেখায় কতখানি অংশ রয়েছে এই নিয়ে ভাগ্যিস প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বিবাদ নেই। এই উপমহাদেশে অনেক সুন্দর জায়গা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা থেকে পর্যটকরা বঞ্চিত হন এসব কারণে। ভেনিসের থেকে দশ গুণ বড়ো এই ব-দ্বীপ। ১০২টি দ্বীপ সম্বলিত সুন্দরবনের ৪৮টি দ্বীপে কেবল জঙ্গল, মানুষ বসবাস করে না। 
বেত-হোগলা ঝোপ, সুন্দরী, গরান গাছ সমৃদ্ধ দ্বীপগুলি, ছোট-বড় খাঁড়ি আর যেদিকে দুচোখ যায় শুধু জল, এই নিয়েই তো এই ব-দ্বীপ। ইউনেস্কো এই জায়গাকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা দিয়েছে। এখানকার রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের জন্যই পশ্চিমবঙ্গকে পৃথিবীর মানচিত্রে উজ্জ্বল স্থান পেয়েছে। বাঘ দেখতে পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে উত্তেজনা থেকে যায় সুন্দরবনে ঘুরতে গেলেই। কিন্তু এ কথা সত্যি যে বাঘ না দেখতে পেলেও এই জায়গার আকর্ষণ কমে না। সীমাহীন জল, যে জলে বিপদ আছে, জলের ধার ঘেঁষে সবুজ জঙ্গল, জঙ্গলে অন্য বন্য জন্তুর সঙ্গে স্বয়ং দক্ষিণ রায়, নদী শাখা নদী মিলে মিশে ছোট বড় খাঁড়ি আর কখনও সেই খাঁড়ি ধরে, কখনও আবার মূল নদীপথে নৌকা করে ভ্রমণ এক অনন্য অভিজ্ঞতা। এখানে যাওয়ার জন্য পশিমবঙ্গ সরকারের নিজস্ব ব্যবস্থাপনা রয়েছে আবার বিভিন্ন প্রাইভেট ট্যুর অপারেটররাও প্যাকেজ ট্যুরের বন্দোবস্ত করেন। শীতের দিনে সুন্দরবন ভ্রমণ অধিক জনপ্রিয় এই রাজ্যে।
নৌকার মধ্যেই থাকা খাওয়া, জলের জীবনের অভিজ্ঞতা এই রাজ্যে একমাত্র সুন্দরবন গেলেই পাওয়া যায়। সঙ্গে সংবেদন মন অনুভব করতে পারে অধরা সংগ্রামী জীবন, বেঁচে থাকার লড়াই। মধু, মিন, কাঁকড়া সংগ্রহ করা যাদের জীবিকা তাদের প্রতিদিন এই লড়াই নিয়ে বাঁচতে হয়। সূর্য ওঠার আগেই জীবন হাতে নিয়ে এখানকার মেয়ে বউরা মিন ধরার কাজ শুরু করে দেয়। সাপ কুমীরের ভয় নিয়ে সারাদিন জলে জলে ঘুরে মিন কাঁকড়া সংগ্রহ করেন ওরা। কী ভীষণ কঠিন সংগ্রাম তা হয়তো এই জীবন না দেখলে অনুমান করা কঠিন। ছেলেরা জঙ্গলে যান মধ্য সংগ্রহ করতে, আসন্ন বিপদের কোথা মাথায় রেখে মুখোশ বেঁধে নেন মাথার পিছনে। বাড়ি ফেরা নিয়ে অনিশ্চয়তা নিয়েই রোজ ওঁরা কাজে বের হন। নদীর পাড়ে গাছের গায়ে বাঁধা লাল কাপড় যে ইঙ্গিত দেয় তা হল ওইসব জায়গা থেকে বাঘে তুলে নিয়ে গেছে আস্ত মানুষ। জঙ্গল ক্ষীণ হয়েছে ক্রমশ, আয়লায় বিধ্বস্ত হয়েছে অনেকখানি তাই খাবারের খোঁজে বাঘ অনেক বেশি হানা দিয়েছে তা লাল কাপড় বাঁধা গাছগুলো দেখলেই বোঝা যায়। জীবন ও মরণ দুই হাতে নিয়ে মানুষ কীভাবে টিকে থাকে সুন্দরবন শেখায় আমাদের। এখানে আসা মানে ঘোরা ও দেখার সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা না –দেখাকেও দেখতে পাওয়া।
জঙ্গল আমাদের শিখিয়ে দেয় সবুরে মেওয়া ফলে। ক্যামেরা তাক করে অপেক্ষা করার কাল দীর্ঘ হলেও ফ্রেমবন্দি হয় কিছু দুর্লভ মুহূর্ত। হরিণ জল খেতে আসে, খেলা করে সঙ্গীর সঙ্গে, বুনো শুয়োরগুলো খাবার খোঁজে কাদা মাটিতে, পাখিরা পোকা ও মাছের আশায় দাঁড়িয়ে থাকে, সিগ্যাল উড়ে বেড়ায় দল বেঁধে, সারস বক অপেক্ষা করে একমনে ,কুমির রোদ পোহায় নদীর ধার ঘেঁষে। সজনে খালি, সুধন্যখালি, ঝড়খালি, দোবাঁকি নিয়ে যাবে সব ট্যুর অপারেটররাই। এসব জায়গা ছাড়াও সপ্তমুখী নদীর মোহনায় ভগবতপুর কুমির প্রকল্প অনেক পর্যটকের কাছেই নতুন আকর্ষণ। 
আর একটি অন্যরকম অভিজ্ঞতার স্বাদ নিতে পারেন পর্যটকরা, তা হল এখানকার শিল্পীদের দ্বারা অভিনীত ‘বনবিবির পালা’। শহুরে নাটক দেখার চোখে অল্প আয়োজনে, নিজেদের মতো করে যে পালাগান পরিবেশিত হয় তা দেখে অবাক হতে হয়। দক্ষিণ রায় ও বনবিবির বহুল প্রচলিত গল্প এখানকার মানুষের জীবনের কথাই বলে আসছে আদিম কাল থেকেই।সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস সুন্দরবন যাওয়ার আদর্শ সময়, তবে শীতকালে এখানকার আবহাওয়া সবচেয়ে মনোরম থাকে।    

Share this article
click me!

Latest Videos

'একত্রিত হতে হবেই, ওরা ৫০ পেরলেই শরিয়া আইন চালু করবে' গর্জে উঠলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari | News
'Mamata Banerjee-র জন্যই অভয়ার এই অবস্থা' বলতে গিয়ে এ কী বললেন Suvendu Adhikari, দেখুন
শুভেন্দুর বিরাট ঘোষণা! সোনাচূড়ার আড়াই বিঘা জমিতে হবে বিশাল Ram Mandir | Suvendu Adhikari
'সনাতনী সম্মেলন'-এ Suvendu Adhikari-র বিশেষ বার্তা, দেখুন সরাসরি
‘RG Kar-র তথ্য প্রমাণ Mamata Banerjee-র নির্দেশে লোপাট হয়েছে’ বিস্ফোরক Adhir Ranjan Chowdhury