
পুজোর তো আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। পুজোতে কারোর তিন দিনের ছুটি বা কারোর চার দিনের ছুটি বা হতে পারে কারোর ১৫ দিনের ছুটি। ছুটি পাওয়া মাত্রই বাঙালির মন সবসময় সুন্দর মনোরম জায়গা খোঁজে যেখানে শহরের কোলাহল থেকে শান্তিতে কয়েকটা দিন কাটিয়ে আসতে পারে।
মাত্র দু’দিনের ছুটি পেলেই মনটা ছুটে যেতে চায় প্রকৃতির কোলে। শহরের ব্যস্ত জীবন থেকে দূরে একটুখানি খোলা জায়গায় এক খণ্ড অবসর চায় সবাই। ঠিক এমনই একটি নিঃশব্দ, সবুজ ও শান্ত জায়গা হল বেলপাহাড়ি।
সেখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্য এতটাই মনোরম যে শহরের ব্যস্ততার মধ্যে থেকে সুদুরে এরকম জায়গায় কয়েকটা দিন থাকলে এমনি আপনার মন সতেজ হয়ে যাবে। চারিদিকে শাল-পিয়ালের গন্ধ, ঝির ঝিরে বৃষ্টি, শরতের পেঁজা তুলোর মত মেঘ জঙ্গলমহলের সৌন্দর্য যেন আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়।
পাহাড়, ঝর্না আর ঘন জঙ্গল—সব মিলিয়ে এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। তাই এই শরতের ছুটিতে যদি প্রকৃতির মাঝে হারিয়ে যেতে মন চান, তাহলে বেলপাহাড়ি হতে পারে আপনার পরবর্তী একমাত্র মনোরম গন্তব্যস্থল।
ঘুরে আসুন পুজোর ছুটিতে মন ভাল করতে পরিবারকে নিয়ে সবুজে ঘেরা পাহাড় আর শাল, মহুয়ার জঙ্গলে হারিয়ে জন কয়েক মুহূর্তের জন্য। ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য দারুণ এই জায়গা। বেলপাহাড়ি থেকে ডানদিকে ৬ কিমি পাকা রাস্তার ওপর দিয়ে গেলে পড়বে ঘাঘরা জলপ্রপাত, রয়েছে তারাফেনী ব্যারেজ।
বেলপাহাড়ি থেকে ৮ কিমি দূরে অবস্থিত গাডরাসিনি পাহাড়, খাঁন্দারানী জলাধার। এছাড়াও চিতি পাহাড় চাতন পাহাড়, গাড়পাহাড়, হাঁসাডুংরি, সজা ডুংরি, তুলসীবনী সরোবর, তুয়ার ডুংরি। শহর কলকাতা থেকে আসা পর্যটকেদের জন্য মিলবে গাইডও। পুজোর ছুটিতে প্রথমেই মনে আসে অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তো আজকের নয়, চিরকালের। তবে বাইরের জগতের মানুষের কাছে বেলপাহাড়ি পরিচিত হয়েছে ব্রিটিশ আমলে। জানা যায়, ছয়ের দশকের সময় থেকে দূরের লোকজনদের যাতায়াত বাড়ে। অন্য জেলার ও রাজ্যের। বিনপুর ২ ব্লক সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক সুমন ঘোষ জানান গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বছর বেলপাহাড়িতে প্রচুর পর্যটক এসেছেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢেলে সাজানো হয়েছে বেলপাহাড়িকে।
বর্ষায় তো বটেই বছরের অন্যান্য সময়তেও পুজো, শীত, বসন্তের দিনে দু-তিন দিনের জন্য ঘুরে আসতেই পারেন এই বেলপাহাড়িতে। বিপুল জনসমাগম হয়। অপরূপ সৌন্দর্যে ভরা বেলপাহাড়িতে তেমন জনকোলাহল নেই। তবে সারাদিন শোনা যায় নানা রকমের পাখির কিচিরমিচির শব্দ। কিছু চেনা, কিছু অচেনা। তাদের ডাকেই ঘুম ভাঙে নরম ভোরে। অদুরে রোদ ছড়িয়ে পড়ে জঙ্গলের গাছে গাছে, পাতায় পাতায়। আলোকিত হয়ে ওঠে পাহাড় চূড়াগুলো। বেলপাহাড়ির প্রকৃতি অন্যরকম রূপে সাজে। ছড়িয়ে পড়ে মায়া। ভেজা মাটি, ভেজা-ভেজা গাছগাছালির গন্ধ পরিবেশকে মাতাল করে তোলে। হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে কোন এক অজানায়।