
শীতের হাওয়া নামতেই পাহাড় ডাকতে শুরু করে। তুষার দেখতে যে উত্তেজনা—তা যেন বাঙালির রক্তে। ডিসেম্বর–জানুয়ারির শুরুতেই যখন সিকিমের পাহাড়ি পথ সাদা চাদরে মুড়ে যায়, তখন ছাঙ্গু, লাচেন, লাচুং থেকে শুরু করে পূর্ব সিকিমের বেশ কিছু অঞ্চল হয়ে ওঠে পর্যটকদের প্রিয় গন্তব্য। এ সময় জুলুক–নাথাং ভ্যালির নাম তো সবার মুখে মুখে ঘোরে। তবে সমস্যা হচ্ছে—এই সব জায়গায় রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় মাইনাসে। আর সেই কঠোর ঠান্ডা অনেকের পক্ষেই সামলানো কঠিন।
এই কারণেই অনেক অভিজ্ঞ ট্রাভেলার এখন একটা শান্ত, কম ভিড়ের বিকল্প খুঁজে নিয়েছেন—নিমাচেন। রংলি থেকে মাত্র ১৩ কিলোমিটার আর জুলুক থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরের এই ছোট্ট পাহাড়ি গ্রাম ঘন জঙ্গলে ঘেরা, আর তাই শীতের রাতে এখানকার পরিবেশ যেমন ঠান্ডা, ঠিক তেমনই আরামদায়ক।
রংলি থেকে মাত্র কয়েক মিনিটের দূরত্বে লুকিয়ে আছে এই ছোট্ট জনপদ। জুলুক থেকেও হাতে গোনা কিছু কিলোমিটার। প্রায় ৭,৮০০ ফিট উপরে, ঘন সবুজে মোড়া এই গ্রামটি শীতকালে ঠান্ডা হয় ঠিকই, কিন্তু বরফঢাকা অঞ্চলের তুলনায় এখানে রাত কাটানো অনেক বেশি আরামদায়ক। যারা ভিড় এড়িয়ে নিরিবিলি পাহাড়ের স্বাদ নিতে চান, তাঁদের কাছে নিমাচেন এখন যেন গোপন ট্রেজার।
নিমাচেন থেকে সকালে বেরোলেই একে একে ধরা দেয় সিল্ক রুটের বিখ্যাত দর্শনীয় স্থানগুলো। থাম্বি ভিউ পয়েন্ট—যেখান থেকে রেশম পথের আঁকাবাঁকা মোড়গুলো দেখে মনে হয় পাহাড় যেন নিজের শরীরে আঁকিবুকি কেটেছে। শীতের সকালে এই জায়গা থেকে সূর্য ওঠার দৃশ্য রীতিমতো সিনেম্যাটিক।
এর কিছুটা ওপরে লুংথুং ভিউ পয়েন্ট, যা জুলুক ও নাথাং ভ্যালিকে এক ফ্রেমে ধরে রাখে। এখানে দাঁড়ালে অনেকটা খোলা জানালা দিয়ে তুষারপাত দেখতে পাওয়ার মতো অনুভূতি হয়। পরিষ্কার দিনে দূর থেকে ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘার চিরচেনা পাহাড়ি শোভা।
অবশ্যই ঘুরে নেওয়া যায় নাথাং ভ্যালি, কুপুপ, বাবা মন্দির—এই সব জনপ্রিয় জায়গা। আর চাইলে হালকা ডিট্যুর নিয়ে দেখতে পারেন আরিতার, কালপোখরি লেক কিংবা মানখিমও।
এনজেপি বা সিলিগুড়ি থেকে রংপো হয়ে নিমাচেন পৌঁছতে সাধারণত ৩.৫ থেকে ৪ ঘণ্টা সময় লাগে। দূরত্ব প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার। রাস্তা ভালো, তাই যাত্রা খুব ক্লান্তিকর নয়। এখানে বেশ কিছু সুশৃঙ্খল হোমস্টে রয়েছে—যেখানে স্থানীয়রা নিজের হাতে রান্না করে অতিথিদের আপ্যায়ন করেন। তবে শীতের ভিড়ে আগেভাগে বুকিং না করলে জায়গা পাওয়া কঠিন।
যারা জুলুকের বরফ দেখতে চান কিন্তু রাতের কঠোর ঠান্ডায় কাবু হতে চান না—তাঁদের জন্য নিমাচেন নিঃসন্দেহে এই মরশুমের সবচেয়ে বুদ্ধিমানের পছন্দ।