শুধু বাঙালি কেন, দুনিয়াসুদ্ধ লোকই হাঁটুর বাতে ভোগে। তাই আসুন জেনে নেওয়া যাক, রোগটি ঠিক কী এবং কীভাবে একে নিয়েই বাঁচতে হয়।
মারাত্মক বা ক্রমাগত সামান্য় ধরনের কোনও আঘাত, হাঁটুর উপাদান হ্রাস, দেহের প্রতিরোধক্ষমতা কমে যাওয়া, কোনও রোগের আক্রমণ, এই ধরনের নানা কারণে হাঁটুতে দীর্ঘস্থায়ী ব্য়থা ও বিশেষ ধরনের অন্য়ান্য় কিছু উপসর্গ দেখা দিলে, সেটিকে বাত হিসেবে ধরা যেতে পারে। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলা হয় অস্টিও আর্থারাইটিস।
জনসংখ্য়া বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাতের রোগীর সংখ্য়াও বাড়ছে। জেনেটিকাল ইনফ্লুয়েন্স বাত বৃদ্ধির অন্য়তম কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। যাঁরা একনাগাড়ে বেশিক্ষণ ধরে হাঁটু মুড়ে বা হাঁটুতে ভর দিয়ে কাজ করেন, কিম্বা হাঁটু ভাজ করে কাজ করেন, তাঁদের হাঁটুতে বাত বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যাঁরা বারবার সিঁড়ি দিয়ে ওঠেন ও নামেন, তাঁদের হাঁটুর কার্টিলেজ ও অন্য়ান্য় নরম তন্তুতে চাপ পড়ায় বাতের সমস্য়া বাড়ে। দেহের ওজন বৃদ্ধিও বাতের একটা কারণ। রিউমাটয়েড আর্থারাইটিস, গাউট, অ্য়াঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিসের জন্য়ও হাঁটুতে বাত ধরে অথবা বাতের প্রকোপ বৃদ্ধি পায়। হাঁটুতে বাত দেখা দিলে, অল্প থেকে তীব্র ব্য়থা শুরু হয়। সিঁড়ি ভাঙতে অসুবিধে হয়। ফ্লুইড জমার জন্য় হাঁটু ফুলে ওঠে। হাঁটুর ভেতরে হাড়ের কুচি বা দানা জমার জন্য় হাঁটু মুড়লে কড়কড় করে। হাঁটু মুড়ে বসতে বা মেঝেতে বসে কাজ করতে অসুবিধে হয়। গ্য়াসের সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলে বা বাসে বেশ খানিকক্ষণ একনাগাড়ে দাঁড়িয়ে থাকলে ব্যথা শুরু হয়। অনেকের হাঁটু বেঁকে যেতে শুরু করে।
যাঁরা এই সমস্য়া ভুগছেন, তাঁরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করবেন না। মহিলারা গ্য়াসের সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে কাজ করবেন না। হাঁটু মুড়ে মেঝেতে বা মাটিতে বসে কিছু করবেন না। কমোড ব্য়বহার করবেন। সহ্য়ের অতিরিক্ত হাঁটাহাঁটি এবং সিঁড়ি ভাঙা চলবে না। দেহের ওজন যাতে না-বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। হাঁটুতে জোরে জোরে মালিশ করা ঠিক নয়। খুব টাইট নিক্য়াপ বাঁধা উচিত নয়। সহ্য়মতো এর ব্য়বহার করা উচিত। মোটর সাইকেল ও বাইক স্টার্ট দেওয়ার জন্য় জোরে কিক করবেন না। বাস বা ট্রেনে ওঠা-নামার সময়ে তাড়াহুড়ো করে উঠবেনও না, নামবেনও না। উঁচু জায়গা থেকে লাফ দেবেন না। হাঁটুর বাত সারাতে ডাক্তারির পরামর্শ মতো ওষুধপত্র খান ও প্রয়োজনমতো ফিজিওথেরাপির সাহায্য় নিন।