সঞ্জীব কুমার দূবে, পূর্ব মেদিনীপুর: লকডাউনের নিদারুণ পরিণতি নাকি ভাগ্যের ফের? দিনে তিরিশ টাকা দিতে না পারায় বৃদ্ধ বাবাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিল ছেলে! শেষ বয়সে আশ্রয় নিতে হল রাজবাড়ির দালানে। অমানবিক ঘটনাটি ঘটেছে পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে।
আরও পড়ুন: করোনা আবহে একের পর এক পথ কুকুরের মৃত্যু, আতঙ্ক ছড়াল রায়গঞ্জে
গঙ্গাধর সামন্ত। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলে থাকেন বহুদিন। স্ত্রী ও একমাত্র ছেলেকে নিয়ে ছিল ভরা সংসার। সবকিছুই চলছিল স্বাভাবিক ছন্দে। কথায় বলে না, চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়! গঙ্গাধরের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনটাই ঘটেছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে বাঁচার লড়াইটা কঠিন হয়ে গিয়েছে ক্রমশই। এতদিন তবুও মাথার উপর ছাদটা ছিল, লকডাউনের বাজারে তাও হারালেন তিনি। কেন? জানা গিয়েছে, বিয়ের হওয়ার পর ছেলে সাফ জানিয়ে দেয়, তাঁর সংসারে একবেলা খেতে হলে নিয়মিত ৩০ টাকা দিতে হবে গঙ্গাধরকে। রাজি হওয়ার ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না। উপার্জনের আশায় রোজই আইসক্রিম, চকোলেট নিয়ে বিভিন্ন স্কুলের সামনে গিয়ে বিক্রি করতেন ওই বৃদ্ধ। কখনও স্কুলের বাড়তি মিড-ডে মিল কিংবা সহৃদয় কোনও ব্যক্তির আনকূল্যে দুপুরে খাবারও জুটে যেত। শর্ত মেনে রাতে খেতেন বাড়িতে। যত কষ্ট হোক না কেন, পরিস্থিতির সঙ্গে দিব্য়ি নিজেকে মানিয়েও নিয়েছিলেন গঙ্গাধর।
আরও পড়ুন: বাংলায় আমফানের মোকাবিলা করতে এসে মারণ ভাইরাসের হামলা, কোভিডে আক্রান্ত এনডিআরএফ জওয়ানরা
তাল কাটল লকডাউনে। করোনা সতর্কতায় এখন স্কুল বন্ধ, আইসক্রিম-চকোলেট কিনবে কে! খাবার তো দুর অস্থ, ৩০ টাকা না পেয়ে বাবাকে বাড়িতে থাকতে দেয়নি গঙ্গাধরের ছেলে। নিরুপায় হয়ে মহিষাদল রাজবাড়ির দালানে আশ্রয় নিয়েছেন ওই বৃদ্ধ। এলাকাবাসীরা যা দিচ্ছেন, তা দিয়ে কোনওমতে পেট ভরাচ্ছেন। আশ্চর্যের ব্য়াপার, এতকিছু পরেও কিন্তু ছেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে গঙ্গাধরের! একটি শব্দও খরচ করতে রাজি নন তিনি।