জনসংযোগে ব্যস্ত 'সমাজসেবী' শুভেন্দু, মমতার মন্ত্রীকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে

  • দলের সঙ্গে কি দূরত্ব বাড়ছে পরিবহণমন্ত্রীর?
  • তৃণমূলের কর্মসূচিতে দেখা যাচ্ছে না শুভেন্দু অধিকারীকে
  • আলাদাভাবে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি
  • শিশির পুত্রকে নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে রাজনৈতিক মহলে

তপন মালিক:  একদিন নেতাই থেকে সিপিএমের বিরুদ্ধে যে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেই আন্দোলনের সামনের সারিতে ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। সেই শুভেন্দুকে নিয়ে বঙ্গ রাজনীতিতে জল্পনা এখন তুঙ্গে। যদিও তাঁকে নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছিল আজ থেকে তিন বছর আগে। তখন শুভেন্দু অধিকারীর প্রশংসা করে রাজ্য রাজনীতিতে জল্পনা বাড়িয়েছিলেন বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে তৃণমূল কংগ্রেসে ওঁর থেকে ভাল কোনও নেতা নেই। 

আরও পড়ুন: 'দিদির ছবি নেই দাদার পোস্টারে', অনুপ্রেরণা ছাড়াই এগোচ্ছেন শুভেন্দু

Latest Videos

কথাটা ঠিক যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ ছাড়া নিজের জোরে নির্বাচনে জিতে আসার ক্ষমতা তৃণমূলে একমাত্র শুভেন্দু অধিকারী রাখেন। কেবল তাই নয়, সে চ্যালেঞ্জ শুভেন্দু বিজেপিতে গিয়েও নিতে পারেন। সারদা কাণ্ডে যখন সিবিআই-এর তৎপরতা বাড়ে, তখন শুভেন্দু দল ছাড়ছেন বলে গুঞ্জন উঠেছিল। অবশ্য শুভেন্দুকে দলে নেওয়ার জন্য প্রস্তুত বিজেপি সবসময়েই। কারণ, শুভেন্দুর জনভিত্তি রয়েছে, তিনি লড়াকু নেতা। এমন নেতাকে দলে নিলে বিজেপি মমতাকে বড় ধাক্কা দিতে পারবে ।

অন্যদিকে পূর্ব মেদিনীপুরে কাঁথির অধিকারী পরিবারের একচ্ছত্র আধিপত্য থাকলেও মমতা সুকৌশলে একটি শুভেন্দু-বিরোধী শিবিরকেও তৈরি রেখেছেন। ফলে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিলেই যে শুভেন্দুর দৌলতে, পূর্ব মেদিনীপুরের পুরো অংশই বিজেপির শক্ত ঘাঁটি হয়ে যাবে, এমনটা নাও ঘটতে পারে। যদিও কাঁথিতে বিরোধী ভোট বিজেপির ঝুলিতে আসায় সেখানে গেরুয়া শিবিরের ভোট বেড়েছে।তবে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দিলে যে তাঁর এলাকার বাইরের নেতা-কর্মীরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ছেড়ে তাঁর সঙ্গে আসবেন, তাও কিন্তু নয়। কিন্তু শুভেন্দুকে দলের যুব সংগঠনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের গুরুত্ব বাড়ানো, পরবর্তীতে যুব সংগঠনের সভাপতি করার আঘাত শুভেন্দু আজও ভুলতে পারেন না। যদিও নেত্রী মমতা সেই ক্ষতে প্রলেপ দিতে শুভেন্দুকে মন্ত্রিসভায় গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ দপ্তরের দায়িত্ব দিয়েছেন। 

আরও পড়ুন: নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের কাণ্ডারি তিনি, নিজের গড়ে কোথায় আছেন শুভেন্দু অধিকারী

কিন্তু কেন শুভেন্দুর পরিবর্তে দোলা সেন নেতাই দিবসে নেতাই-কাণ্ডে নিহতদের পরিজনদের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দিলেন? কেন ঝাড়গ্রামের দায়িত্বে শুভেন্দুর সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয় তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাম? এসব প্রশ্ন বেশ কিছুদিন ধরে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী ছাড়াও দলের অন্দরে ঘুরছে। তারপর থেকেই শুভেন্দু ঝাড়গ্রামকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। হুল দিবসেও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই মঞ্চে অনুপস্থিত ছিলেন শুভেন্দু। হাজির ছিলেন না নেতাজি ইন্ডোরের ‘বাংলার গর্ব মমতা’ ইভেন্ট-এও। ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরের ‘পাঠচক্রে’হাজির থাকতেও রাজি নন শুভেন্দু। সম্প্রতি লকডাউন চলাকালীন দলের শীর্ষ নেতৃত্বের অনেক ভার্চুয়াল বৈঠকেও ছিলেন মা তিনি। এইসব নানা কারণে তাঁর বিজেপি-যোগ নিয়ে জল্পনা থামছে না। 

অন্যদিকে শুভেন্দুও একেবারে চুপ। তবে তিনি প্রতিদিনই নিজের মতো করে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। সামাজিক কাজ করছেন, হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন সাহায্যের। মন্ত্রী হিসেবে দফতরের কাজও সামলাচ্ছেন। আর তাতেই জল্পনা বাড়ছে।  এদিকে পূর্ব  মেদিনীপুরে মমতার ছবির বদলে নিজের ছবি লাগিয়েই সভা করছেন শুভেন্দু। ইতিমধ্যে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন  জায়গায় 'দীনজনের ত্রাতা' শুভেন্দু অধিকারীর একাধিক পোস্টার পড়েছে। এমনকী, হুল দিবসে রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে  না গিয়ে আদিবাসীদের অন্য অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন তিনি। যা যথেষ্ট পরিমাণে অস্বস্তি বাড়িয়েছে ঘাসফুল ব্রিগেডের। 

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা নামানো হয়েছে শুভেন্দু বিরোধী মুখ হিসাবে। কিন্তু তাতে হিতে বিপরীত হয়েছে খোদ মেদিনীপুরেই। অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায়ের পোস্টার দেওয়া একাধিক জায়গায় পাল্টা শুভেন্দুর লাগিয়েছেন অনুগামীরা। সেখানে শিশির পুত্রকে সমাজসেবী  হিসেবেই তুলে ধরা হয়েছে। জেলার একাধিক জায়গায় সমাজসেবী শুভেন্দু অধিকারীর পোস্টারে এখন ছয়লাপ। ক্ষত মেরামতে নেমেছেন খোদ তৃণমূল নেত্রী। শিশির অধিকারীর স্ত্রীর শারীরিক অবস্থার খোঁজ খবর নিয়েছেন তিনি। কিন্তু মমতার সেই প্রলেপ কতটা কাজে লাগে, তা বলবে ২১শের বিধানসভা নির্বাচন। 

শুভেন্দু নিজে অবশ্য দল সম্পর্কে একটি কথাও বলছেন না। তার অন্তরের ক্ষোভ তিনি প্রকাশ্যে কোথাও উগড়ে দিচ্ছেন না। জিজ্ঞাসা করলে তিনি উল্লেখ করতে ভুলছেন না যে তাঁর নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে কি শুভেন্দু বুঝেছেন যে এই মুহুর্তে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে গিয়ে তিনি বিশেষ সুবিধা করতে পারবেন না। বরং দলে তাঁর সাংগঠনিক ক্ষমতা বিশেষ করে পূর্ব মেদিনীপুর-সহ ঝাড়গ্রাম দিয়েই দলকে চাপে রাখতে চাইছেন।

Share this article
click me!

Latest Videos

ভারত কীভাবে অলিম্পিক সোনা হারিয়েছে? Rajesh Kalra-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে Sebastian Coe জানালেন সেই কথা
‘হিন্দুরা মরুক মুখ্যমন্ত্রীর কোনো যায় আসে না!’ Mamata-কে সরাসরি তোপ Agnimitra Paul-এর
‘১৯৭১ সাল থেকেই হিন্দুদের উপর অত্যাচার হচ্ছে Bangladesh-এ’ বিস্ফোরক মন্তব্য Samik Bhattacharya-র
'Bangladesh-কে Pakistan করে দিন!' বিস্ফোরক Suvendu!! #shorts #shortsfeed #shortsvideo #shortsviral
ভারত কী ২০৩৬-এ অলিম্পিকের আয়োজন করবে? Rajesh Kalra-র সঙ্গে সাক্ষাৎকারে কী বললেন Sebastian Coe