শ্রীকৃষ্ণ মন্দির হওয়ার কথা ছিল পাকিস্তানের ইসলামাবাদে। পাকিস্তানের মাটিতে প্রথম হিন্দু মন্দির প্রতিষ্ঠার কাজও শুরু হয়েছিল। কিন্তু শুরুতেই বাধা। ইসলামাবাদের এইচ-৯/২ সেক্টরে কৃষ্ণ মন্দির স্থাপনে বাধা দেয় ধর্মীয় সংগঠন জমিয়া আসরফিয়া। যার ফলে মন্দিরের ভিত্তি স্থাপনের কাজ বন্ধ করে দিতে হয়। এবার সেই পাকিস্তানেই ঐতিহাসিক গুরুদোয়ারাকে মসজিদে পরিণত করার অভিযোগ উঠল। ঘটনাস্থল লাহোর।
কর্তারপুরের পাশাপাশি পাকিস্তানের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে হিন্দু ও শিখদের একাধিক তীর্থস্থান। তবে মৌলবাদী মানসিকতার কারণে এই তীর্থস্থানগুলির বেশিরভাগই ধ্বংস হয়েছে। যেটুকু রয়েছে সেগুলিকেও এবার ধ্বংস করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ লাহোরের শহীদ ভাই তারু সিংয়ের গুরুদোয়ারাকে মসজিদে পরিণত করার চেষ্টা। লাহোরে মুসলিম পয়গম্বর হজরত শাহ কাকু চিশতির দরগাহর মৌলবি সোহেল বাট স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে মিলে গুরুদোয়ারার জমি কব্জা করেছেন বলে অভিযোগ। উনি দাবি করছেন, গুরুদোয়ারা আর তার আশেপাশের ল জমি হজরত শাহ কাকু চিশতি দরগাহ আর শাহিদগঞ্জ মসজিদের অংশ।
আরও পড়ুন: অধিকৃত কাশ্মীরকে দেখান হয়নি দেশের মানচিত্রে, রাগে একের পর এক স্কুলপাঠ্য বাতিল পাক সরকারের
ওই মৌলবী এক ভিডিও বার্তায় বলেন, পাকিস্তান একটি ইসলামিক দেশ, ১৯৪৭ সালে লক্ষ লক্ষ মুসলিম এই দেশের জন্য প্রাণ হারিয়েছিলেন। এরজন্য এই দেশে এখন শিখেদের কোন কথা চলবে না। শোনা যাচ্ছে যে, মৌলবি সোহেল এই কাজ জমি মাফিয়াদের ইশারায় করেছেন। আর এদের মধ্যে একজন আইএসআই আধিকারিকও রয়েছেন।
এদিকে এভাবে গুরুদোয়ারাকে মসজিদে পরিণত করার চেষ্টার উদ্যোগের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারত। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব এক বিবৃতিতে বলেন, “লাহোরের নওলাখা বাজারে গুরুদোয়ারা শহিদি আস্থানকে মসজিদে পরিণত করার চেষ্টা হচ্ছে। ওই স্থানে ভাই তারু সিংজি শহিদ হয়েছিলেন। পাকিস্তান দাবি করছে, ওইখানে একসময় শহিদ গঞ্জ নামে একটি মসজিদ ছিল। গুরুদোয়ারাকে ফের মসজিদে পরিণত করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা পাকিস্তানের হাই কমিশনারের কাছে এই উদ্যোগের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছি।”
পাক মৌলবাদী এহেন পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করে অকালি দলের মুখপাত্র মনজিন্দর সিং সিরসা ইমরান খানের উদ্দেশে ট্যুইট করেছেন। তিনি বলেন , “চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন।” তাঁর কথায়, “পাকিস্তানের চরমপন্থীরা শহিদি স্থান সম্পূর্ণ ধ্বংস করে ফেলতে চায়। এই প্রচেষ্টা মৌলিক মানবাধিকারের বিরোধী। কোনও ব্যক্তিকে ধর্মাচরণের স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যায় না। শহিদি স্থানকে বেআইনি দখলদারদের থেকে মুক্ত করতে আপনি ব্যবস্থা নিন।" ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংও।
জানা যাচ্ছে, ১৭৪৫ সালে মুগল রাজত্বের সময় জাকারিয়া খান ইসলাম গ্রহণ করার পর ভাই তারু সিংয়ের শিরচ্ছেদ করেছিল। অনেক বছর পর ভাই তারু সিংয়ের স্মরণে স্থানীয়রা এই গুরুদ্বারা বানিয়েছিল।