
দুবাইয়ের মাটিতে মুখোমুখি হবে দুই দল। যে কোনও প্রতিযোগিতার প্রথম ম্যাচ সবসময় কঠিন হয়। কারণ, পিচের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় থাকে।
এমনিতে, তুলনামূলক বিচারে তিন ধরনের ক্রিকেটের মধ্যে একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই বাংলাদেশ সবথেকে বেশি সফল। স্বাভাবিকভাবেই, প্রথম ম্যাচে যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হবে গৌতম গম্ভীর এবং রোহিত শর্মাদের।
দলীয় শক্তির বিচারে এবং লড়াইয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে ভারত। তবু চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো বড় প্রতিযোগিতায় প্রথম প্রতিপক্ষকে একেবারেই হালকাভাবে নেওয়ার কোনও জায়গা নেই ভারতের কাছে। যদিও তারা শেষ ইংল্যান্ড সিরিজ জিতেই খেলতে নামছে এই মেগা প্রতিযোগিতা।
যদিও বাংলাদেশের সার্বিক পারফরম্যান্স বিশাল কিছু না তাদের শক্তিশালী এবং দুর্বল দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করা জরুরি। যেমন টপ অর্ডার ব্যাটিং। এই বিভাগে শক্তির নিরিখে বিশ্বের সেরা দলগুলির মধ্যে একেবারেই বিবেচনা করা হয় না বাংলাদেশকে। তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, ব্যাটারদের ধারাবাহিকতার অভাব। ১-২ জন ছাড়া বাংলাদেশের ব্যাটাররা একদমই বড় শট নিতে পারেন না। অন্যদিকে, টি-২০ ক্রিকেটেও ছয় মারার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ব্যাটাররা বেশ পিছিয়ে আছেন। শুধু তাই নয়, এক দিনের ক্রিকেটেও সেই সমস্যা রয়েছে।
তবে ওপেনার সৌম্য সরকারের ফর্মে থাকা বাংলাদেশের জন্য যথেষ্ট ইতিবাচক একটি দিক। কারণ, সাদা বলের ক্রিকেটে ধারাবাহিকভাবে রান পাচ্ছেন তিনি। সেইসঙ্গে, তাঁর হাতে বড় শটও রয়েছে। আরও এক ওপেনার তানজ়িদ হাসানও ভালো ফর্মে রয়েছেন। তবে দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রে তিনি খুব একটা দক্ষ নন। অপরদিকে পার্টনারশিপ হিসেবেও তারা দারুণ কিছু করতে পারেননি।
এরপর তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামেন অধিনায়ক শান্ত। গত নভেম্বর মাসের পর, একদিনের ক্রিকেট খেলেননি তিনি এবং হাতে তেমন বড় কোনও শট নেই। তাছাড়া দ্রুত রান তোলার ক্ষেত্রেও বেশ খানিকটা দুর্বলতা রয়েছে তাঁর। সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে একেবারেই ফর্মে ছিলেন না তিনি। সবমিলিয়ে, বাংলাদেশের টপ অর্ডার ভারতের তুলনায় অনেকটাই দুর্বল।
এবার আসা যাক মিডল অর্ডার ব্যাটিং অর্ডারের কথায়। চার নম্বরে নামেন মেহদি হাসান মিরাজ়। যিনি নিজে একজন দক্ষ অলরাউন্ডার। তবে হাতে বড় শটের অভাব থাকলেও ফর্মে আছেন। ধারাবাহিকভাবে রান করে চলেছেন। তিনি মিডল অর্ডারে বাংলাদেশের অন্যতম একজন ভরসার নাম। ব্যাটিং অর্ডারের পাঁচ নম্বরে দেখা যেতে পারে অভিজ্ঞ উইকেটরক্ষক ব্যাটার মুশফিকুর রহিমকে। তিনি এখন খেলেন একজন বিশেষজ্ঞ ব্যাটার হিসাবে। যদিও খুব একটা ভালো ফর্মে নেই মুশফিকুর। এমনকি, দ্রুত রানও তুলতে পারেন না এবং হাতে বড় কোনও শট নেই।
এছাড়া পাঁচ নম্বরে দেখা যেতে পারে তৌহিদ হৃদয়কেও। ধারাবাহিকতার অভাব তাঁর বড় সমস্যা এবং দ্রুত রান তুলতে একেবারেই দক্ষ নন। বড় শটও তেমন নেই তাঁর হাতে। বাংলাদেশের মিডল অর্ডারকে খুব একটা শক্তিশালীও বলা যায় না।
যদি এই দলের ফিনিশারদের দিকে তাকানো যায়, তাহলে দেখা যাবে, ব্যাটিং অর্ডারে ৬ নম্বরে দেখা যেতে পারে মাহমুদুল্লাহকে। কারণ, ভালো ফর্মে রয়েছেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। শেষ চারটি একদিনের ম্যাচেই অর্ধশতরান করেছেন তিনি। তাঁর সবথেকে বড় পজিটিভ দিক হচ্ছে, দ্রুত রান তুলতে পারেন তিনি। তাঁর ভূমিকা হবে মূলত ফিনিশারের। সেই একই ভূমিকায় দেখা যাবে উইকেটরক্ষক-ব্যাটার জাকের আলিকেও।
পাঁচটি একদিনের ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ২২ গজে থিতু হতে পারলে দ্রুত রান তুলতে পারেন এই ব্যাটার। কারণ, বড় বড় শট রয়েছে জাকেরের হাতে। অভিজ্ঞতা এবং তারুণ্যের মিশেলে এই ক্ষেত্রে আবার খুব একটা দুর্বল বলা চলে না বাংলাদেশকে।
অন্যদিকে, ফিল্ডিংয়ের দিক দিয়ে বিচার করলে, বিশ্বের সেরা দলগুলির মধ্যে অন্যতম হল ভারত। বিশ্বের একাধিক সেরা ফিল্ডার রয়েছেন ভারতীয় ক্রিকেট দলে। এক্ষেত্রে কিন্তু অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষত ক্যাচ ধরার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অনেক উন্নতির দরকার।
সেইসঙ্গে, দুর্বল ফিল্ডিং ব্যাকআপ। গত ১২ ডিসেম্বর, শেষ একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ, প্রায় ২ মাসেরও বেশি সময় পর তারা ৫০ ওভারের ক্রিকেট খেলতে নামবে। আগামী ২০২৪ সালে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ়, আফগানিস্তান এবং শ্রীলঙ্কা ছাড়া কোনও দেশের বিরুদ্ধেই একদিনের ক্রিকেট খেলেনি বাংলাদেশ।
রিশাদ হোসেনের মতো লেগ স্পিনার এবং নাসুম আহমেদের মতো বাঁ-হাতি স্পিনার রয়েছে বাংলাদেশের। তাছাড়া মিরাজ়ের অফ স্পিনও বেশ বিপজ্জনক। অফ স্পিন করতে পারেন শান্ত, মাহমুদুল্লাহ এবং তৌহিদ হৃদয়ের মতো ব্যাটাররাও। এক্ষেত্রে যথেষ্ট বৈচিত্র্য রয়েছে বাংলাদেশের।
অপরদিকে বিশেষজ্ঞ জোরে বোলার হিসেবে বাংলাদেশ দলে রয়েছেন তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, মুস্তাফিজুর রহমান এবং তানজ়িম হাসান শাকিব। তাসকিনকে এখন বিশ্বের অন্যতম সেরা একজন বোলার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, সাদা বলের ক্রিকেটে অভিজ্ঞ মুস্তাফিজুর অত্যন্ত কার্যকরী বলেও মনে করা হচ্ছে। সেইসঙ্গে, তানজ়িমের রয়েছে জোরালো গতি। তাঁর ব্যাটের হাতও খুব একটা খারাপ নয়। তরুণ নাহিদও বেশ নজর কেড়েছেন।
অন্যদিকে, সৌম্য নিজেও মিডিয়াম পেস করতে পারেন। এক্ষেত্রে আবার বাংলাদেশকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনও সুযোগ নেই। মহম্মদ শামি চেনা ফর্মে না থাকলে ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে বাংলাদেশ।
আসন্ন প্রতিযোগিতায় ৬ জন স্বীকৃত অলরাউন্ডারকে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দল তৈরি করেছে বাংলাদেশ। দলের একাধিক ব্যাটার বল করতে পারেন দলের প্রয়োজনে।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।