বিশাল অঘটন না ঘটলে এবারের আইএসএল-এও সুপার সিক্সের যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে না ইস্টবেঙ্গল। দল গঠনে গাফিলতি, ভুলের পাশাপাশি ফুটবলারদেরও দোষ আছে।
পাঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে যেভাবে প্রথমার্ধে ০-২ পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয়ার্ধে চমকপ্রদ ছিনিয়ে নিয়েছিল ইস্টবেঙ্গল, সোমবার মুম্বই সিটি এফসি-র বিরুদ্ধে সেরকমই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু রক্ষণের ভুলে পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পারলেন না ক্লেইটন সিলভা, নাওরেম মহেশ সিংরা। ২-৩ হেরে পয়েন্ট তালিকায় ১১ নম্বরেই থেকে গেল ইস্টবেঙ্গল। এদিন জয় পেলে সুপার সিক্সের যোগ্যতা অর্জনের লড়াইয়ে অক্সিজেন পেত ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু হেরে গিয়ে সেই সম্ভাবনা কার্যত নষ্ট হয়ে গেল। শনিবার কলকাতা ডার্বি। তার আগে এদিন হেক্টর ইয়ুস্তে, হিজাজি মাহের, প্রভাত লাকড়া, আনোয়ার আলিরা যে পারফরম্যান্স দেখালেন, তাতে অতি বড় ইস্টবেঙ্গল সমর্থকও কলকাতা ডার্বিতে জয়ের স্বপ্ন দেখতে পারছেন না।
রক্ষণের ভুলে হার ইস্টবেঙ্গলের
এদিন ম্যাচের শুরু থেকেই ইস্টবেঙ্গল রক্ষণকে চাপে রেখেছিলেন বিক্রম প্রতাপ সিং। তবে পি ভি বিষ্ণুর একক দক্ষতায় ইস্টবেঙ্গলও পাল্টা আক্রমণ করছিল। ইস্টবেঙ্গলের ডানদিকে রক্ষণ ও আক্রমণ কোনওটাই ঠিকমতো হচ্ছিল না। লাকড়া বল ধরতে পারছিলেন না, বল ধরলে কী করবেন বুঝতে পারছিলেন না। ৪০ মিনিটে তাঁর পাশ দিয়েই লালিয়ানজুয়ালা ছাংতেকে বল বাড়ান ব্র্যান্ডন ফার্নান্ডেজ। বক্সের মধ্যে ফাঁকায় থাকা ছাংতের শট পোস্টে লেগে জালে জড়িয়ে যায়। এরপর ৪৪ মিনিটে মারাত্মক ভুল করে বসেন হেক্টর। বিপক্ষের অর্ধ থেকে আসা বল নিজে ধরার চেষ্টা না করে গোলকিপার প্রভসুখন সিং গিলকে এগিয়ে আসার ইশারা করেন হেক্টর। কিন্তু সেই বলের গতি বেশি ছিল না। হেক্টরের কাছেই ছিলেন মুম্বইয়ের স্ট্রাইকার নিকোল কারেলিস। তিনি ফাঁকায় বল পেয়ে গোলে শট নেন। সেই শট সেভ করেন গিল। কিন্তু ফিরতি বল জালে জড়িয়ে দেন কারেলিস। প্রথমার্ধে রক্ষণের ভুলে জোড়া গোল হজম করার পর দ্বিতীয়ার্ধের শেষদিকে সেই রক্ষণের ভুলেই তৃতীয় গোল হজম করে ম্যাচ হারল ইস্টবেঙ্গল। ৮৮ মিনিটে বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে একসঙ্গে ভুল করে বসলেন আনোয়ার ও হিজাজি। তাঁদের ভুলে ফাঁকায় বল পেয়ে যান কারেলিস। তিনি নিজের দ্বিতীয় এবং দলের তৃতীয় গোল করতে ভুল করেননি।
বিফলে গেল দ্বিতীয়ার্ধের লড়াই
প্রথম একাদশ গঠনে ভুল বুঝতে পেরে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই লাকড়ার পরিবর্তে নিশু কুমার এবং নন্দকুমারে পরিবর্তে মহেশকে মাঠে নামান ইস্টবেঙ্গলের প্রধান কোচ অস্কার ব্রুজোঁ। এই পরিবর্তনের ফলে ইস্টবেঙ্গলের রাইট উইং সচল হয়। ৬৭ মিনিটে রাইট উইং দিয়ে বক্সে ঢুকে দুরন্ত শট নেন মহেশ। সেই শট কোনওরকমে সেভ করেন মুম্বইয়ের গোলকিপার রেহেনেশ। ফিরতি বল ধরে বক্সের মধ্যে থেকে মাইনাস করেন মহেশ। সেই বল বিপদমুক্ত করতে গিয়ে জালে জড়িয়ে দেন মুম্বইয়ের ডিফেন্ডার সাহিল পানওয়ার। এই গোল লাল-হলুদ শিবিরকে অক্সিজেন দেয়। এরপরেই সমতা ফেরানোর লক্ষ্যে জিকসন সিংকে তুলে ডেভিড লাললানসাঙ্গাকে মাঠে নামান অস্কার। এই পরিবর্তন কার্যকর হয়। ৮৪ মিনিটে হেক্টরের ক্রসে বাঁ পায়ের অসাধারণ ভলিতে গোল করে সমতা ফেরান ডেভিড। সেই সময় মনে হচ্ছিল ইস্টবেঙ্গলের পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়া নিশ্চিত। কিন্তু ফের রক্ষণের ভুল সব লড়াই শেষ করে দিল।
অস্কারের ভুল কৌশল
মুম্বইয়ের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার সৌভিক চক্রবর্তীকে কেন মাঠের বাইরে রেখে খেলতে নামল ইস্টবেঙ্গল, সেটা স্পষ্ট নয়। দ্বিতীয়ার্ধের সংযোজিত সময়ে আনোয়ারের পরিবর্তে সৌভিককে মাঠে নামানো হল। কিন্তু ততক্ষণে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছে। আনোয়ার ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে মানিয়ে নিতে পারছেন না। তাঁকে সেন্টার ব্যাক হিসেবে খেলালেই ভালো করবেন অস্কার। তিনি হয়তো কলকাতা ডার্বির কথা ভেবে সৌভিককে প্রথম একাদশে রাখেননি। কিন্তু এদিনের হারে দলের আত্মবিশ্বাস নষ্ট হয়ে যেতে বাধ্য।
আরও খবরের আপডেট পেতে চোখ রাখুন আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন-
জয় দিয়ে নতুন বছর শুরু, আইএসএল-এ পয়েন্ট তালিকার শীর্ষেই মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট
'মনে হচ্ছিল মাঠে আরও এক ব্রাজিলিয়ানকে হারাতে চলেছি,' ক্লেইটনকে মারাত্মক আঘাত নিয়ে সরব ডগলাস
রেফারি ও মনোজ মহম্মদের কাছে আটকে গেল ইস্টবেঙ্গল, হল না আইএসএল-এ প্রথমবার জয়ের হ্যাটট্রিক