স্নানযাত্রার পর রথযাত্রার আগে কেন ভক্তদের দর্শন দেন না জগন্নাথদেব, জানুন পুরীর রথযাত্রার ইতিহাস

  • সনাতন ধর্ম অবলম্বীদের অত্যন্ত আনন্দের উৎসব রথযাত্রা
  • এই উৎসবে ভগবান স্বয়ং ভক্তদের দর্শন দেন
  • পুরীর রথযাত্রার সঙ্গে মিশে রয়েছে একাধিক ইতিহাস
  • ১০৮ ঘড়া জলে স্নানের পরই জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন জগন্নাথদেব

সনাতন ধর্ম অবলম্বীদের অত্যন্ত আনন্দের উৎসব রথযাত্রা। কারণ শুধুমাত্র এই উৎসবে ভগবান স্বয়ং রাজপথে আসেন ভক্তদের দর্শন দেওয়ার জন্য। এর জন্য কোনও মন্দিরে যাওয়ার দরকার পড়ে না। শাস্ত্রে বলা আছে, রথে থাকালানীন যদি কেউ জগন্নাথ দেবকে দর্শন করেন তাহলে তাঁর পুনর্জন্ম হয় না। পুরীর রথযাত্রার সঙ্গে মিশে রয়েছে এমনই সব ইতিহাস। ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ উৎসাহের সঙ্গে পালিত হয় এই উৎসবের। ভারতের সর্বাধিক প্রসিদ্ধ রথযাত্রা ওড়িশার পুরীতে জগন্নাথ মন্দিরের রথযাত্রা। দেখে নেওয়া যাক এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কিছু অজানা বিষয়---

প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম পূর্ণিমাতেই জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রার আয়োজন করা হয়। এদিন গর্ভগৃহ থেকে মূর্তি তুলে এনে স্নান মণ্ডপে তা স্থাপন করা হয়। সেখানেই সুগন্ধি জল দিয়ে স্নান করানো হয় জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে। স্নানের সঙ্গে সঙ্গে চলে মূর্তির সাজসজ্জা। ১০৮ ঘড়া জলে স্নানের পরই জ্বরে কাবু হয়ে পড়েন জগন্নাথদেব। তাই এইসময় গৃহবন্দি অবস্থায় থাকেন তিনি। রথ পর্যন্ত বিশ্রাম নেন। তাই সেই সময়টা ভক্তরা জগন্নাথ দেবের দর্শন পান না। এমনকী, এই কয়েকটা দিন তাঁর পুজোও হয় না। আর জ্বর থেকে উঠেই রথে চেপে মাসির বাড়িতে রওনা দেন তিনি। 

Latest Videos

লোককথা অনুসারে, আষাঢ় মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথিতে রথযাত্রা পালিত হয়। জগন্নাথ-সুভদ্রা-বলরাম রথে চড়ে গুণ্ডিচার বাড়ি যান। সেটি জগন্নাথের ‘মাসির বাড়ি’নামে পরিচিত। সাত দিন সেখানে থাকার পর আবার নিজের মন্দিরে ফিরে আসেন। রথে চড়ে এই মাসির বাড়ি যাওয়াকে সোজা রথ মাসির বাড়ি থেকে ফিরে আসা উল্টোরথ নামে প্রচলিত । 

রথযাত্রায় তিন বিগ্রহের জন্য তৈরি হয় তিনটি আলাদা রথ। জগন্নাথের রথের নাম নন্দীঘোষ। নন্দীঘোষ-এর উচ্চতা ৪৫ ফুট। এতে থাকে ১৮টি চাকা। পুরো রথটি লাল-হলুদ কাপড়ে মোড়া হয়। বলরামের রথের নাম তালধ্বজ। সুভদ্রার রথের নাম দর্পদলন। রথের দিন প্রতিটি রথকে পঞ্চাশ গজ দড়িতে বেঁধে আলাদা আলাদা ভাবে টেনে নিয়ে যাওয়া হয় গুণ্ডিচাবাড়ি। 

এই তিনটি রথ কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। সেই কাঠ সংগ্রহ করা হয় মাঘ মাসের বসন্ত পঞ্চমী তিথিতে। আর সেই কাঠগুলি নির্দিষ্ট পরিমাণে কাটা শুরু হয় রামনবমী তিথি থেকে। রথের নির্মাণ শুরু হয় অক্ষয় তৃতীয়ার তিথি থেকে। যদিও রথগুলিতে অন্য কোনও ধাতু ব্যবহার করা হয় না। রথের পেরেকও তৈরি হয় কাঠ দিয়ে। আর রথযাত্রার দিন বৃষ্টি হয়। এর কোনও অন্যথা হয় না। কয়েক সেকেন্ডের জন্য হলেও প্রতিবছর রথযাত্রার দিন বৃষ্টি হয়। 

কোনওরকম আধুনিক সরঞ্জাম ছাড়াই রথ নির্মাণ করা হয়। রথ নির্মাণের নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্য মাপগুলো হাতে নেওয়া হয়। প্রায় ১৪০০ কর্মী রথ নির্মাণ করেন। বংশপরম্পরায় রথ তৈরি করেন কারিগররা। তিনটি রথে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি থাকে ভিতরে। যা নিমকাঠ দিয়ে তৈরি। আর প্রায় ২০৮ কেজি সোনা দিয়ে সেগুলি সাজানো হয়। রথ নির্মাণে যে কাঠ ব্যবহার করা হয়, তার উৎস পুরীর কাছেই দাশপাল্লা ও রানাপুর নামের দুটি জঙ্গল। যে পরিমাণ গাছ কাটা হয়, তার দ্বিগুণ পরিমাণ গাছ প্রতি বছর রোপণও করা হয় জঙ্গলে।

এই রথকে তুলনায় করা হয় আমাদের শরীরের সঙ্গে। আর রথে থাকা বিগ্রহকে তুলনা করা হয় পরআত্মার সঙ্গে। রথটি যিনি চালনা করেন সেই সারথীকে তুলনা করা হয়েছে জ্ঞানের সঙ্গে। ওই সারথী ঘোড়ার মাধ্যমে রথটি পরিচালনা করেন। ঘোড়াগুলিকে যেহেতু সারথী পরিচালনা করেন তাই ঘোড়াগুলিকে মন ও ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। এর অর্থ জ্ঞান দিয়ে আমরা নিজেদের মন ও ইন্দ্রিয়কে পরিচালনা করতে পারি।

ওড়িশার প্রাচীন পুঁথি ‘ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ’ বলা হয়েছে , এই রথযাত্রার প্রচলন হয়েছিল প্রায় সত্যযুগে। সে সময় ওড়িশা মালবদেশ নামে পরিচিত ছিল। মালবরাজ ইন্দ্রদ্যুম্ন ছিলেন ভগবান বিষ্ণুর পরম ভক্ত। কৃষ্ণ তাঁর ভক্ত রাজা ইন্দ্রদ্যুম্নের সম্মুখে আবিভূর্ত হয়ে পুরীর সমুদ্রতটে ভেসে আসা একটি কাষ্ঠখণ্ড দিয়ে তাঁর মূর্তি নির্মাণের আদেশ দেন। মূর্তিনির্মাণের জন্য রাজা একজন উপযুক্ত কাষ্ঠশিল্পীর সন্ধান করতে থাকেন। তখন এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ শিল্পী তাঁর সামনে দাঁড়ান আর মূর্তি নির্মাণের জন্য কয়েকদিন চেয়ে নেন। সেই কাষ্ঠশিল্পী রাজাকে জানিয়ে দেন মূর্তি নির্মাণকালে কেউ যেন দরজা না খোলে। দরজা বন্ধ করে শুরু হয় মূর্তি নির্মাণের কাজ। 

কিন্তু, রাজা ও রানি সহ সকলেই নির্মাণকাজের ব্যাপারে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ভিতর থেকে কাজ হওয়ার আওয়াজ শুনতে পেতেন তাঁরা। তবে ভিতরে না ঢুকে বাইরে থেকেই চলে আসতেন। ৬ থেকে ৭ দিন পর যখন রাজা বাইরে দাঁড়িয়ে খোদাইয়ের আওয়াজ শুনছিলেন ঠিক সেই সময় শব্দ বন্ধ যায়। এরপর আর কৌতূহল সামলাতে না পেরে দরজা খুলে ভিতরে প্রবেশ করেন রানি। দেখেন মূর্তি তখনও অর্ধসমাপ্ত এবং কাষ্ঠশিল্পী অন্তর্ধিত।

পুরাণ মতে, এই কাষ্ঠশিল্পী ছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা। মূর্তির আদল তৈরি হলেও তখনও তার হাত-পা তৈরি করা হয়নি। এই পরিস্থিতিতে রাজার মন খারাপ হয়ে যায়। কাজে বাধা দেওয়ার জন্য অনুতাপ করতে থাকেন তিনি। তখন দেবর্ষি নারদ তাঁর সামনে আসেন। রাজাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেন এই অর্ধসমাপ্ত মূর্তি পরমেশ্বরের এক স্বীকৃত স্বরূপ। আর সেই থেকেই এই অর্ধসমাপ্ত মূর্তিই পুজো করা হয়। 

প্রতি বছর রথযাত্রার উদ্বোধন করেন সেখানকার রাজা। রাজত্ব না থাকলেও বংশপরম্পরা ক্রমে পুরীর রাজপরিবার আজও আছে। তাই নিয়ম অনুসারে, যিনি রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন, তিনিই পুরীর রাজা জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাদেবীর পর পর তিনটি রথের সামনে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান করেন এবং সোনার ঝাড়ু ও সুগন্ধী জল দিয়ে রথের সামনের অংশ ঝাঁট দেন। তারপরই পুরীর রথের রশিতে টান পড়ে। শুরু হয় জগন্নাথদেবের মাসির বাড়ি যাওয়ার যাত্রা। 

Share this article
click me!

Latest Videos

জঙ্গি গ্রেফতারে কড়া বার্তা মিঠুনের | Mithun Chakraborty #shorts #mithunchakraborty #shortsvideo
Viral Video! আবাসের টাকা ঢুকতেই বাড়ি বাড়ি গিয়ে কাটমানি চাইছেন TMC কর্মী | Murshidabad Latest News
প্রেমের আড়ালে লক্ষাধিক টাকা লুঠ! প্রতারণার নেপথ্যে চাঞ্চল্যকর কাহিনি | South 24 Parganas News Today
ফিরহাদকে কড়া ডোজ দিলেন শুভেন্দু | Suvendu Adhikari #shorts #shortsvideo #suvenduadhikari #shortsfeed
ক্যানিং-এ এসে ভেবেছিল ঘাপটি মেরে লুকিয়ে থাকবে! রাতেই গ্রেপ্তার কাশ্মীরি জঙ্গি | Canning News Today