হিন্দুদের পবিত্র 'স্বস্তিকা' (Swastika) চিহ্নকে অবমাননা করলেন কানাডার (Canada) প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো । স্বস্তিকাকে অ্যাডলফ হিটলারের (Adolf Hitler) 'হাকেনক্রুজ'এর (Hakenkreuz) সঙ্গে গুলিয়ে হিন্দুদের (Hindus) ক্ষোভের মুখে তিনি।
না জেনেই, হিন্দুদের (Hindus) পবিত্র 'স্বস্তিকা' (Swastika) চিহ্নের অবমাননা করে বিতর্কে জড়ালেন কানাডার (Canada) প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো (PM Justin Trudeau) এবং সেই দেশের ভারতীয় বংশোদ্ভূত সাংসদ জগমিত সিং (Jagmeet Singh)। ভারতের কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করার পর, বর্তমানে কানাডার প্রধানমন্ত্রী নিজেই শয়ে শয়ে ট্রাক-চালকদের এক বিরাট প্রতিবাদের (Canada Truckers Movement) মুখে পড়েছেন। সেই বিক্ষোভে স্বস্তিকা চিহ্ন লাগানো ফ্ল্যাগ দেখা গিয়েছে বলে দাবি করে ট্রুডো বলেছেন কানাডায় স্বস্তিকার জায়গা নেই। আর এরপরই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক বিশিষ্ট হিন্দু সংগঠন এই মন্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে।
কানাডায় কোভিড-১৯ বিধিমিষেধের বিরুদ্ধে এখন শয়ে শয়ে ট্রাক-চালক রাস্তায় নেমে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে দিন কয়েক আগে ট্রুডোকে এক অজ্ঞাত স্থানে আত্মগোপন পর্যন্ত করতে হয়েছে। সম্প্রতি তিনি এবং জগমিত সিং - দুজনেই দাবি করেছেন চলতি বিক্ষোভে স্বস্তিকা পতাকা দেখা যাচ্ছে। কানাডার নিউ ডেমোক্রেটিক পার্টি বা এনডিপি (NDP) নেতা জগমিত সিং বলেন, 'কানাডায় স্বস্তিকা এবং কনফেডারেট পতাকার কোন স্থান নেই'।
আসলে কানাডার এই দুই নেতা হিন্দুদের স্বস্তিকা চিহ্ন এবং অ্যাডলফ হিটলারের (Adolf Hitler) 'হাকেনক্রুজ' (Hakenkreuz) বা হুকওয়ালা ক্রস চিহ্নের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেননি, দুটিকে গুলিয়ে ফেলেছেন। নাৎসিবাদের (Nazism) সমালোচনা করতে গিয়ে, তাঁরা অবমাননা করে বসেছেন পবিত্র হিন্দু মঙ্গল-চিহ্নকে। এই অবস্থায়, হিন্দু পলিসি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি কালেক্টিভ বা হিন্দুপ্যাক্ট (HinduPACT), কানাডার প্রধানমন্ত্রী এবং আইনপ্রণেতা জগমিত সিংকে হিন্দুদের প্রাচীন এবং শুভ প্রতীকের সঙ্গে বিংশ শতাব্দীর নাৎসি বিদ্বেষের প্রতীক 'হাকেনক্রুজ'কে না গোলানোর পরামর্শ দিয়েছে। তারা বলেছে, 'স্বস্তিকা' শুধু হিন্দুদের কাছেই নয়, বৌদ্ধ (Buddhist) এবং বিশ্বের আরও অনেক আদিবাসী সম্প্রদায়ের জন্যও একটি প্রাচীন এবং শুভ প্রতীক। একে 'হাকেনক্রুজ'এর সঙ্গে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়।
বাঁদিকে হিন্দু স্বস্তিকা চিহ্ন, ডানদিকে নাৎসি হুকওয়ালা ক্রস
স্বস্তিকা এবং হাকেনক্রুজের মধ্যে পার্থক্য কী?
স্বস্তিকা শব্দটি এসেছে সংস্কৃত 'সু' অর্থাৎ 'ভালো' এবং 'অস্তি' অর্থাৎ 'বিরাজ করা' শব্দের সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে। ঋগ্বেদের শ্লোকে এই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। এটি মঙ্গল, সমৃদ্ধি বা সৌভাগ্য নির্দেশ করে। একইসঙ্গে এটি চারটি যুগ, ঋতুচক্র, জীবনের চার প্রান্ত বা চার উদ্দেশ্য, অস্তিত্বের চার স্তর এবং চার বেদের প্রতিনিধিত্ব করে। কোনও মঙ্গলানুষ্ঠানে হিন্দুরা সাধারণত ফুল দিয়ে তৈরি বা তেল-সিঁদুর দিয়ে এই চিহ্ন আঁকেন। বিশ্বের বিভিন্ন হিন্দু ও বৌদ্ধ মন্দির এবং ধর্মীয় অনুষ্ঠানে, দক্ষিণ এশিয়ার অনেক বাসভবনেও দরজার পাশেই এই চিহ্ন দেখা যায়।
অন্যদিকে, 'হাকেনক্রুজ', একটি ধীকৃত চিহ্ন। ইহুদি গণহত্যার (Nazi Holocaust) সময়ে নাৎসি নিপীড়নে প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ ইহুদি (Jews) সম্প্রদায়ের মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। তাই, এই প্রতীক এখনও বহু মানুষকে মানসিক আঘাত দেয়। ইহুদি-বিদ্বেষের (Anti-Semitism) প্রতীক হিসেবেই দেখা হয় হাকেনক্রুজকে।