প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর নিজের বুথেই হেরে গেল কংগ্রেস। আশপাশের বুথগুলিতে তাঁরা বহু ভোটে পিছিয়ে। বহরমপুর বিধানসভায় জুড়ে কংগ্রেসের এমন ধরাশায়ী অবস্থা রীতিমতো চরম চাপে রয়েছে কংগ্রেস শিবির।অধীরবাবুর নিজের ভোট দান কেন্দ্র কাশিমবাজার পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়। দলের অভ্যন্তরীণ ফলাফল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে বেরিয়ে এল এক চূড়ান্ত হতাশাব্যঞ্জক ছবি।
সেখানকার ২২ নম্বর বুথে কংগ্রেস পেয়েছে মাত্র ১৪৭টি ভোট। সেই জায়গায় বিজেপি পেয়েছে ৪৫৭ ভোট। তার পাশের বুথের ২১নম্বরেও কংগ্রেসের অবস্থা করুন। প্রতিটি বুথেই টেক্কা দিয়ে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে। তবে শুধু অধীরবাবুর ওই বুথ নয়, এই বিধানসভা কেন্দ্রের বহু বুথে কংগ্রেসের হাল শোচনীয় হয়ে গিয়েছে। কোথাও তারা আড়াইশো পেরতে পারেনি। উল্লেখযোগ্য ভাবে ২৪৪নম্বর বুথে কংগ্রেস মাত্র পাঁচটি ভোট পেয়েছে। সেখানে তৃণমূল ৪৮৮টি ভোট পেয়ে এগিয়ে গিয়েছে। ২৭২নম্বর বুথে কংগ্রেসের ঝুলিতে ১২টি ভোট পড়েছে। ২৯০নম্বর বুথে কংগ্রেস ১৮টি ভোট পেয়েছে। তৃণমূল সেখানে ৩৪৬টি ভোট পেয়েছে। ২২৪নম্বর বুথে কংগ্রেস ১৪টি ভোট পেয়েছে। ১৭৬নম্বর বুথে কংগ্রেস ২১ ও তৃণমূল ৪০৫টি ভোট পেয়েছে। বিজেপি এখানে ৫২টি ভোট পেয়েছে। বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে ২৪৭এ বুথে কংগ্রেস সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছে। এখানে তাদের প্রাপ্য ভোট ২৪৯।
বহরমপুর এর বাসিন্দারা বলছেন ,"আমরা কেউ দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করিনি বহরমপুর বিধানসভা কেন্দ্রে কংগ্রেসের এমন হাল হবে"। অথচ একটা সময় ছিল যখন মুর্শিদাবাদে পরিচিত 'দাদা' হিসেবে অধীরের দাপটে তৃণমূল মাথা তুলতে পারেনি। এই নির্বাচনে রাজ্যের শাসকদল এখান থেকে জিততে না পারলেও কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছে। এখানে ফল এর পরিপ্রেক্ষিতে অধীর বাবুর রাজনৈতিক সচিব তথা জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন," আমরা এই পরাজয় মেনে নিয়েছি। আগামী দিনে বিরোধী দল হিসেবে রাজ্য সরকারকে সহযোগিতা করব। সরকারের কোনও ভুল-ত্রুটি থাকলে তা প্রশাসনের নজরে আনব। তবে ভোটের পর রাজ্যে যেভাবে হিংসা হচ্ছে তাতে বাংলার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে না। এই সমস্ত ঘটনা মুখ্যমন্ত্রীর ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে না"।
আরও পড়ুন, 'আমাদেরকেই বুঝে নিতে দিন', আজ সপ্তদশ বিধানসভার প্রথম অধিবেশনই বয়কট করলেন BJP বিধায়করা
স্থানীয় বাসিন্দা রতন হাজরা, মানিক দাস, বিবেক বিশ্বাস এরা বলেন , নির্বাচনের শুরু থেকেই কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে বহরমপুর শহরে বিজেপি দাপট দেখাতে থাকে। খাগড়া, কাশিমবাজার এলাকায় তাদের প্রভাব সবচেয়ে বেশি ছিল। ভোটের ফলাফলেও দেখা যাচ্ছে এই এলাকাগুলিতে কংগ্রেসকে বহু পিছনে ফেলে বিজেপি এগিয়ে গিয়েছে"। অন্যদিকে ভোটের সময় তৃণমূল বিধানসভা কেন্দ্রের গ্রামীণ এলাকায় দাপট দেখাতে থাকে। ভোটের ফলেও তারা গুরুদাসপুর, দৌলতাবাদের মতো এলাকাগুলিতে বিজেপি বা কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গিয়েছে। কংগ্রেসের অনেকেই মনে করছেন, একাধিক কারণে তাদের ভরাডুবি হয়েছে। শহরে মেরুকরণের হাওয়া বয়ে গিয়েছিল। তারপরও নেতারা আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। দলের প্রার্থীরা অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে অনেক পরে ময়দানে নেমেছিলেন। তাছাড়া বহরমপুরের ‘দাদা’র সেই ক্যারিশমাও কাজ করেনি। ফলে এখন বহরমপুর জুড়ে চোর প্রশ্ন উঠছে আগামী দিনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি নিজে লোকসভা নির্বাচনে বহরমপুর কেন্দ্র থেকে দাঁড়ালে আদৌ কি জয়ী হতে পারবেন।