শমিকা মাইতি, প্রতিনিধিঃ- রানিবাঁধ বিধানসভা কেন্দ্রটি বাঁকুড়া জেলার বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। রানিবাঁধ, হীরবাঁধ ও খাতড়া ব্লক নিয়ে গঠিত এই কেন্দ্রে এবারের প্রধান তিন প্রতিপক্ষই ২০১৬ সালে পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়েছেন। তৃণমূল গতবারের জয়ী প্রার্থী বিধায়ক জ্যোৎস্না মাণ্ডিকেই ভোটে দাঁড় করাচ্ছে। বিজেপি-ও গতবার এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে যিনি লড়েছিলেন, সেই ক্ষুদিরাম টুডুকে প্রার্থী করেছে। গতবার না হলেও তার আগে তিন-তিন বার এই আসন থেকে জেতা সিপিএমের দেবলীনা হেমব্রম বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোটের প্রার্থী।
আরও পড়ুন, আজ ফের রাজ্যে মোদী, প্রধানমন্ত্রীর সভায় দেড় লক্ষ মানুষের জমায়েতের লক্ষ্যমাত্রায় BJP
রানিবাঁধ বিধানসভা আসনে কে-কত বার জয়ী ?
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের নিরিখে এই বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ২৪৪৮৬১। ভোট পড়েছিল ২০১৫৩৪। বাঁকুড়া লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ডঃ সুভাষ সরকার এই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে ৯৩৯৫৬টি (৪৬.৬২) ভোট পেয়েছিলেন। তৃণমূল প্রার্থী সুব্রত মুখার্জ্জী পেয়েছিলেন ৭৮১৪২টি ভোট। সিপিএমের অমিয় পাত্র পেয়েছিলেন ১৬৫৩৮টি ভোট। রানিবাঁধ বিধানসভা ২০১৬-র ফল-এ ৯২১৮১ ভোট পেয়ে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী ছিলেন জ্যোৎস্না মাণ্ডি। ভোট শেয়ারিং এবং জয়ের মার্জি ছিল যথাক্রমে -৪৭.৪৮ শতাংশ, ২৩৩১৩। রানিবাঁধ বিধানসভা আসনে কে-কত বার জয়ী এবার জেনে নেওয়া যাক। ১৯৬২ সালে এই আসনের জন্ম। তিন বার এখানে জিতেছে কংগ্রেস-১৯৫২, ১৯৬৭, ১৯৭২। সিপিআই ১ ও সিপিআই(এম) ১০ বার এই আসনে জিতেছে। তিন বারের বিধায়ক দেবলীনা হেমব্রম-১৯৯৬, ২০০৬, ২০১১। ২০১৬ সালে বিধানসভা ভোটে তৃণমূল জেতে।
আরও পড়ুন, 'জয়শ্রী রাম মা-মমতাজ বেগমকে একদম না',শুভেন্দুর প্রচার শুনে হেসেই কুটোপাটি নন্দীগ্রামবাসী
ফিরে দেখা যাক রানিবাঁধ বিধানসভা আসনের ইতিহাস
১৯৬২ সালের আগে রানিবাঁধ আসনটির কোনও অস্তিত্ব ছিল না। ১৯৫২ সালে স্বাধীনতার পর প্রথম ভোটের সময় এই কেন্দ্রটি খাতড়া আসনের মধ্যে পড়েছিল। কংগ্রেসের আশুতোষ মল্লিক ও হিন্দু মহাসভার রতন ঘোষ যুগ্ম আসনে জয়লাভ করেছিলেন সেবার। ১৯৬২ সালে রানিবাঁধ কেন্দ্রের প্রথম ভোটে জেতেন সিপিআই প্রার্থী জলেশ্বর হাঁসদা। এরপর ১৯৬৭ সালে জেতেন কংগ্রেসের বি হেমব্রম। ১৯৬৯ ও ৭১ সালের ভোটে এই আসন থেকে জিতেছিলেন সিপিআই(এম) প্রার্থী সুচাঁদ সরেন। ১৯৭২ সালে ফের কংগ্রেস আসনটি পায়। জয়ী প্রার্থীর্র নাম অমলা সরেন। ১৯৭৭ সালের ভোটে সুচাঁদবাবু জনতা পার্টির প্রার্থী যদুনাথ মুর্মুকে হারিয়ে ফের বিধায়ক হন। ১৯৮২ ও ৮৭ সালে পরপর এই আসন থেকে জেতেন সিপিআই(এম)-এর প্রার্থী রামপদ মাণ্ডি।
আরও পড়ুন, 'স্বৈরাচারী-দাঙ্গাবাজদের দল BJP', NPR-NRC ইস্যুতে আক্রমণ মমতার
২০১১ সালে রাজ্য জুড়ে তখন ‘তৃণমূল ঝড়’
১৯৯১ সালে সিপিআই(এম) প্রার্থী আরতি হেমব্রম হারিয়ে দেন কংগ্রেসের সুদর্শন বাস্কেকে। ১৯৯৬ সালে এই আসন থেকে জেতেন সিপিআই(এম) প্রার্থী দেবলীনা হেমব্রম। কংগ্রেসের অনিল হাঁসদাকে হারিয়ে দেন তিনি। ২০০১ সালে জেএমএম প্রার্থী গোপীনাথ সরেনকে হারিয়ে দেন সিপিআই(এম) প্রার্থী মকর টুডু। ২০০৬ সালে ঝাড়খণ্ড পার্টির (নরেন) প্রার্থী আদিত্য কিস্কুকে হারিয়ে দেন সিপিএমের দেবলীনা হেমব্রম। ২০১১ সালে রাজ্য জুড়ে ‘তৃণমূল ঝড়ে’ও এই আসন থেকে জেতেন দেবলীনা। তৃণমূলের ফাল্গুনী হেমব্রমকে হারান তিনি। জেএইচএপি-র হয়ে লড়ে তিন নম্বরে ছিলেন আদিত্য কিস্কু। বস্তুত ২০১১ সালে বাঁকুড়ার মাত্র তিনটি আসনই ধরে রাখতে পেরেছিল বামেরা- তালড্যাংরা, রানিবাঁধ ও রাইপুর। ২০১৬ সালে অবশ্য সেগুলিও তৃণমূল দখল করে। এদিকে, ২০১৯-এর লোকসভা ভোটে এই সব এলাকায় গেরুয়া ঝড়ে সবুজ আবীর উড়ে যায়। বিজেপি-র দাবি সেই হাওয়া ধরে রাখতে পেরেছে তারা এবং ২০২১-এর ভোটে তাদের জয় নিশ্চিত।