রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে রাজ্য সরকারের সংঘাত অব্যাহত। ভোট পরবর্তী হিংসা থেকে শুরু করে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজ্যপাল। এনিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠিও দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে একাধিকবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মমতাও। এমনকী, রাজ্যপালকে অপসারণের দাবিও জানিয়েছেন তিনি। এই বিষয়টি অবশ্য আগেও প্রকাশিত হয়েছিল। তবে বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী এই প্রথম স্পষ্ট করলেন যে, রাজ্যপালের অপসারণের দাবিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ইতিমধ্যেই কয়েকটি চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন- মমতা বনাম শুভেন্দু হাইকোর্ট পর্ব, স্থগিত মহাগুরুত্বপূর্ণ নন্দীগ্রাম মামলার শুনানি
একুশের বিধানসভা নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরই রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে রাজ্যপাল। এমনকী, ভোট পরবর্তী হিংসা খতিয়ে দেখতে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন তিনি। যা নিয়ে ফের রাজ্যের সঙ্গে তাঁর সংঘাত চরমে ওঠে। এরই মধ্যে তিনদিনের সফরে সস্ত্রীক দিল্লি যান তিনি। সেখানে দেখা করেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে। এছাড়া গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গেও দেখা করেছিলেন তিনি। তবে হঠাৎ কেন তিনি সবার সঙ্গে দেখা করলেন তা অবশ্য জানা যায়নি। যদিও এই সফরের পর রাজ্যে তাঁর মেয়াদ শেষ হবে কিনা তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন- তৃতীয় ঢেউ আটকাতে মোদীর বার্তা, করোনা মোকাবিলায় ৬টি ক্র্যাশ কোর্স যুবকদের
এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "আমার নতুন করে বলার আর কী আছে! একটা বাচ্চা হলে বকে চুপ করানো যায়। এখানে স্পিচ ইজ সিলভার অ্যান্ড সাইলেন্স ইজ গোল্ডেন। তুমি অধম হলে আমি উত্তম হইব না কেন? রাজ্যের সঙ্গে পরামর্শ করে নিয়োগ করার নিয়ম থাকলেও, যখন রাজ্যপাল করা হয়েছে, তখনও আমায় জিজ্ঞাসা করা হয়নি। তাই উনি চলে গেলেও কি আমাকে জিজ্ঞাসা করা হবে? তাই আমি কি করে জানব। আমি তো প্রধানমন্ত্রীকে দু-তিন বার চিঠি লিখেছি ওনাকে উইথড্র করে নেওয়ার জন্য।"
রাজ্যপালের দিল্লি সফরের আগের দিনই বিজেপি বিধায়কদের সঙ্গে নিয়ে রাজভবনে গিয়েছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে রাজ্যপালকে একাধিক অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। সূত্রের খবর, দিল্লি সফরে রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিস্তারিতভাবে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। যদিও ভোট পরবর্তী হিংসা নিয়ে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, "এগুলো সব পূর্ব পরিকল্পিত ঘটনা। নির্বাচনের পরে কোনও ঘটনা ঘটেনি। যখন নির্বাচন কমিশন ছিল তখন কিছু হিংসার ঘটনা ঘটেছে। যদিও তার মধ্যে সব রাজনৈতিক নয়, কিছু ব্যক্তিগত শত্রুতাও রয়েছে। আমি সব সময় আমার পুলিশ, প্রশাসনকে বলেছি যেখানেই এমন ধরনের ঘটনা ঘটুক, কড়া ব্যবস্থা নিতে। এমন একটা পরিবেশ তৈরি করছে, যেন চারিদিকে হিংসা রয়েছে। এটা বিজেপির গিমিক ভায়োলেন্স।"
আরও পড়ুন- নন্দীগ্রামের ফল নিয়ে আজ হাইকোর্টে মমতা, সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার পাল্টা হুমকি দিলীপ ঘোষের
তবে দিল্লি সফরে শুধুমাত্র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গেই নয়, লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর চৌধুরীর বাড়িতেও গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তাঁদের বৈঠক চলেছিল অনেক রাত পর্যন্ত। এই বৈঠক নিয়ে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা শুরু হয়েছে।