তাপস দাশঃ- যে আসে আসুক, সিপিএম যাক- এমন একটা ধ্বনি শোনা গিয়েছিল ২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে। এ ধ্বনির পিছনে ছিল শিল্প বনাম কৃষি সংঘাত। আর শিল্প বনাম কৃষি সংঘাতের সূচনা যেখান থেকে হয়েছিল, সেই সিঙ্গুরে খোদ টাটা যদি শিল্প গড়তে আসে তাতেও আপত্তি জানাচ্ছেন না সেখানকার বিজেপি প্রার্থী। এ প্রার্থী অন্য যে কেউ নন, তিনি রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
আরও পড়ুন, 'CRPFকে ঘেরাওয়ের কথা কেন বলছেন দিদি', শহরে এসে ক্ষোভ উগরে জবাব চাইলেন শাহ
সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ বিরোধী আন্দোলনে অন্যতম দিগদর্শক ছিলেন তিনি। বর্ষীয়ান রবীন্দ্রনাথ এলাকায় মাস্টারমশাই নামে পরিচিত। সেই মাস্টারমশাই আজ বলছেন, সিঙ্গুরে শিল্প হোক, টাটারা এলেও স্বাগত। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তিনি কখনও শিল্পের বিরোধী ছিলেন না, তাঁর বিরোধিতা ছিল জোর করে জমি অধিগ্রহণের। বিজেপিতে যোগ দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ভোল পাল্টেছেন, এমন যদি কেউ বলেন, তাহলে রবীন্দ্রনাথ দাবি করতেই পারেন, তাঁর জন্য ভোল পাল্টেছে বিজেপিও। বিজেপির সর্বভারতীয় নীতি একটি নির্দিষ্ট বয়সের পর আর কাউকে ভোটে দাঁড়াবার টিকিট না-দেওয়ার। সে বয়স অনেকদিন আগেই পার করেছেন প্রায় নব্বইয়ের মাস্টারমশাই। বিজেপি তাঁর জন্য নিজ নীতির ব্যতিক্রম ঘটিয়েছে। সিঙ্গুরে তিনি পদ্মপ্রার্থী, তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁর একদা ভাবশিষ্য বেচারাম মান্না।
আরও পড়ুন, 'কেন্দ্রীয়বাহিনীকে ঘিরতে' বলে কমিশনের নোটিশ পেলেন মমতা, কারণ দর্শাতে হবে ২৪ ঘন্টার মধ্য়েই
বেচারামের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের দ্বন্দ্ব অবশ্য পুরনো কিছু নয়। মমতা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই মাঝে মাঝে চাড়া দিয়েছে সিঙ্গুরের অন্তর্দ্বন্দ্ব। তা প্রকাশ্যেও এসেছে একাধিকবার। বহুবার তৃণমূল নেতৃত্ব সম্পর্কে ক্ষোভ ব্যক্ত করেছেন রবীন্দ্রনাথ, দলের উপরমহলের চাপে সে সব চাপাও পড়েছে। কিন্তু সে চাপা কেবল ক্ষণিকেরই তরে বলে প্রমাণিত হয়েছে বারংবার। বেচারামের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে ক্ষোভ ব্যক্ত করে রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে কুৎসা করছেন বেচারাম।
আরও পড়ুন, আজ মমতার গড়ে 'দুয়ারে দুয়ারে' শাহ, জানুন কী কী দিয়ে মধ্য়াহ্নভোজ সারবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বিজেপিতে যোগ দিয়ে সেখানকার বিধানসভা আসনের প্রার্থী হয়েছেন শুনে প্রকাশ্যে বিস্ময় ব্যক্ত করেছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের উদ্দেশে অনুরেধ করেছেন, মাস্টারমশাই যেন বাড়িতে থেকে বেচারামকে ভোটে জেতাতে সাহায্য করেন। এর আগে অবশ্য মমতা অভিযোগ করেছিলেন, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তিনি নিজে সিঙ্গুর আসনে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের আপত্তিতে তা সম্ভব হয়নি। সিঙ্গুরের আন্দোলন আক্ষরিক অর্থেই ইতিহাস হয়েছে। তা ঠাঁই পেয়েছে এ রাজ্যের স্কুলের ইতিহাস বইয়ের পাতায়। ২০০১ সাল থেকে এ আসনে জিতে আসা রবীন্দ্রনাথ যদি দল পাল্টে পঞ্চমবার জিততে পারেন, তিনি যে এক অন্য ইতিহাস রচনা করবেন, তাতে সন্দেহ নেই।