তাপস দাস: জন্মভূমি টিভি সিরিয়াল ছিল বাংলাখ্যাত। তার গান ছিল জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। সে গানের গায়ক ছিলেন যিনি, তিনি পরে আরও খ্যাত হয়ে উঠবেন, রিমেক গানের সূত্রে। ইন্দ্রনীল সেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী হিসেবে বর্তমানে পরিচিত হলেও, তিনি আদতে খ্যাতি পেয়েছিলেন রিমেক গানের সুবাদে। বহু পুরনো দিনের বাংলা গান তাঁর সুবাদে ফিরে শোনেন মানুষজন। সে ৯-এর দশকের শেষের দিকের কথা।
আরও পড়ুন-'রেকর্ড সংখ্যায় ভোটদানের আহ্বান জানাচ্ছি', সুরক্ষা বিধি মানার অনুরোধ মোদী-মমতার...
তখন ইন্দ্রনীল হিট। পুজো প্যান্ডেলে তাঁর গান বাজে, পার্ক স্ট্রিটের মিউজিক স্টোরে থরে থরে সাজানো থাকে তাঁর গানের ক্যাসেট। তখন তিনি তৎকালীন শাসকদলের ঘনিষ্ঠও বটে। এতটাই বামঘনিষ্ঠ ছিলেন ইন্দ্রনীল, যে পরিবর্তনের ভোটের আগে পাতা জোড়া চিঠি লিখেছিলেন কেন তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ফিরে চান মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে।
তবে তিন বছর। মাত্র তিন বছর যেতে না যেতেই তিনি আনুগত্য পাল্টে ফেলেন। ২০১৪ সালের ভোটে তাঁকে পরীক্ষা করতেই বোধহয় মমতা তাঁকে হারিয়ে আনেন বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে। অবশ্য পরাজয়ের এ আসনে লড়ে মুখ নষ্ট করার মত কাউকে পাওয়া মুশকিল ছিল মমতার পক্ষে। ইন্দ্রনীল হাসিমুখে রেকর্ড ভোটে হেরে আসেন। ব্যবধান ছিল ৩ লক্ষের বেশি। অনুগত ইন্দ্রনীলকে এরপর তথ্যসংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী করে দেন মমতা। আবার পরে, পুরনো প্রতিমন্ত্রীর পদও ফিরিয়ে দেন তাঁকে। কিছুদিন পর সেখান থেকে সরিয়ে ফের অন্য মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী করে পাঠান। এসব বিনা ওজরে যথার্থ ইয়েস ম্যানের মতই মেনে নেন ইন্দ্রনীল। শোনা যায় ফি বছর মমতা যেসব গান লিখে সুর দেন, তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে এই শিল্পীর।
২০১৬ সালের ভোটে ইন্দ্রনীল সেন চন্দননগর কেন্দ্রের বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২১ সালেও তিনি সেখান থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ১৬-র ভোট তাঁকে কানের পাশ দিয়ে জিতিয়েছে। সিপিএম প্রতিদ্বন্দ্বী হেরেছিলেন ৪১০০-র মত ভোটে। এবারেও সিপিএম দাঁড় করিয়েছে গতবারেরই গৌতম সরকারকে। বিজেপির প্রার্থী দীপাঞ্জন গুহ।তাঁর আমলে চন্দননগরে লাইট হাব হয়েছে। তবে বহিরাগত তকমা তত ভাল করে ঘোচেনি। প্রচারে ফিরিয়ে আনছেন সেই পুরনো জন্মভূমির অনুষঙ্গ। বলছেন এবার জন্মভূমি রক্ষার লড়াই। দ্বিজেন্দ্রগীতি গলায় তুলে নিচ্ছেন, গাইছেন, সকল দেশের রাণী সে যে আমার জন্মভূমি। ১০ এপ্রিল চন্দননগর কেন্দ্রে ভোট। ইন্দ্রনীলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সেদিন স্থির করবেন এলাকার মানুষ।