সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় প্রথম ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শুরু হবে। এই ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের জন্য বনকর্মীদের ১০টি বিশেষ দল তৈরি করা হচ্ছে যাঁরা জঙ্গলের মধ্যে ক্যামেরা বসানোর কাজ করবেন।
সুন্দরবনে (Sundarbans) বাঘের (Tiger) সঠিক সংখ্যা কত তা জানতে আরও একবার সুন্দরবনের জঙ্গলে (Sundarbans Forest) ক্যামেরা বসাতে চলেছে বন দফতর। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা (South 24 Parganas) বনবিভাগ দুই জায়গাতেই ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের (Camera Trapping) মাধ্যমে এই ‘টাইগার এস্টিমেশান’-এর (Tiger Estimation) কাজ করবে বন দফতর (Forest Department)। ৫ ডিসেম্বর থেকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও ২৪ পরগনা বন বিভাগ এলাকায় ক্যামেরা বসানোর কাজ শুরু হবে। কীভাবে ক্যামেরা বসানো হবে, কীভাবেই বা সেই ক্যামেরা কাজ করবে, বাঘের গতিবিধি কীভাবে নির্ধারণ করা হবে এইসব বিষয় নিয়ে বনকর্মীদের ট্রেনিং দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে সুন্দরবনের সজনেখালিতে। মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনদিনের এই কর্মশালায় সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প ও ২৪ পরগনা বনবিভাগের বনকর্মীরা অংশগ্রহণ করেছেন। যেহেতু ম্যানগ্রোভের (Mangrove) অরণ্য সুন্দরবন, তাই কীভাবে সেই অরণ্যে বনকর্মীরা এই ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ করবেন সে বিষয়ে পরামর্শ দিতে ওড়িশা ম্যানগ্রোভ ডিভিশানের পাঁচ বিশেষজ্ঞকেও নিযুক্ত করা হয়েছিল এই কর্মশালায়।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় প্রথম ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ শুরু হবে। এই ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের জন্য বনকর্মীদের ১০টি বিশেষ দল তৈরি করা হচ্ছে যাঁরা জঙ্গলের মধ্যে ক্যামেরা বসানোর কাজ করবেন। এক একটি দলে অন্তত ১২ থেকে ১৫ জন করে বনকর্মীরা থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের কাজ চলবে গোটা সুন্দরবন এলাকায়। এক একটি জায়গা চিহ্নিত করে সেখানে দুটি করে ক্যামেরা লাগানো হবে, যাতে সেই ক্যামেরার সামনে বাঘ এলে তার সামনে ও পিছনের দিকের ছবি তাতে ধরা পড়ে। নির্দিষ্ট সময় পর সেই সব স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরাগুলি খুলে নিয়ে তাতে ওঠা ছবি বিশ্লেষণ করে সুন্দরবনের সঠিক বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করবেন বিশেষজ্ঞরা। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের সঙ্গে এ কাজে সাহায্য করবে ডবলু ডাবলু এফ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প এলাকায় প্রায় সাড়ে এগারোশো ক্যামেরা বসানো হবে। যার জন্য সাড়ে সাতশোটির কাছাকাছি জায়গা চিহ্নিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে ২৪ পরগনা বনবিভাগ এলাকায় তিনশোর কাছাকাছি ক্যামেরা বসানো হবে বলে বন দফতর সূত্রের খবর। সব মিলিয়ে মোট পনেরোশো ক্যামেরা বসিয়ে সুন্দরবনে বাঘেদের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে। এবারই প্রথম মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার করা হচ্ছে বাঘ গণনার ক্ষেত্রে।
এই ক্যামেরা ট্র্যাপিংয়ের মাধ্যমে একদিকে যেমন সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা সম্পর্কে একটা ধারণা পাওয়া যাবে, তেমনই সুন্দরবনের জঙ্গলে আরও কি কি ধরনের জীবজন্তু রয়েছে সে সম্পর্কেও অনেক তথ্য জানা যাবে। পাশাপাশি সুন্দরবনে বাঘেদের খাবার অর্থাৎ হরিণ, শূকর, বাঁদর যথাযথ পরিমাণে আছে কিনা সে বিষয়েও একটা তথ্য পাওয়া যাবে। অন্যদিকে সম্প্রতি সুন্দরবনের বুকে আছড়ে পড়া একের পর এক ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবনের জীব বৈচিত্রের উপর ঠিক কি ধরনের প্রভাব ফেলেছে সে সম্পর্কেও একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আগে বাঘের পায়ের ছাপ দেখে বাঘ গণনা হলেও বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে ক্যামেরা ট্র্যাপিং পদ্ধতিতেই বাঘের সঠিক সংখ্যার অনুমান করার কাজ শুরু হয়েছে সুন্দরবনে। জঙ্গলের মধ্যে গাছের গায়ে সংক্রিয় ক্যামেরা লাগানো হয়। জিপিএস ও ইনফ্রারেড প্রযুক্তি সম্বলিত হাই রেজুলেশান নাইট ভিসন ক্যামেরার সামনে দিয়ে দিনে রাতে যে কোনও সময়, যে কোনও জীবজন্তু গেলেই তার ছবি ক্যামেরায় ধরা পড়বে। পরে সেই ক্যামেরার ছবি বিশ্লেষণ করেই বাঘের সংখ্যা নির্ধারণ করা হবে।
২০১৮ সালে শেষ পাওয়া বাঘ সুমারি অনুযায়ী সুন্দরবনে ৯৬টি বাঘ রয়েছে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে যেভাবে বাঘের হামলার ঘটনা ঘটছে তাতে সুন্দরবনের জঙ্গলে বাঘের সংখ্যা আগের থেকে বেশ খানিকটা বেড়েছে বলেই অনুমান করছেন বন আধিকারিকরা।