দিনের পর দিন নাবালিকাকে পড়ার সময় তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ, গ্রেফতার তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ তরুণ

Published : Jun 10, 2020, 05:51 PM ISTUpdated : Jun 11, 2020, 06:56 PM IST
দিনের পর দিন নাবালিকাকে পড়ার সময় তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ, গ্রেফতার তৃণমূল নেতার ঘনিষ্ঠ তরুণ

সংক্ষিপ্ত

ফের শিশুর উপরে ঘৃণ্য নির্যাতন  কুলতলির কৈখালি গ্রামের ঘটনা  এমনকী এতে পুলিশও কাঠগড়ায়  পরে অবশ্য অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়   

অভিযোগ, রাত নামলেই হাজির হয়ে যেত বছর ২৩-এর যুবক বাসুদেব। আর তারপরই নাকি সে গভীররাতে বাড়ির লোকের অগোচরে পড়ার আসর থেকে তুলে নিয়ে যেত পড়শি নাবালিকাকে। অভিযোগ, কখনও মুখ চেপে। কখনও গলা টিপে ধরে সেই নাবালিকা সে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে চলে যেত বাড়ির ছাদে অথবা ভেড়ির কাছে বাদায়। অভিযোগ, এরপর সে নাবালিকার উপরে চালাত নৃশংস অত্যাচার। পাশবিক এই ঘটনা দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার কুলতুলির কৈখালি গ্রামে। এই ঘটনায় নাম জড়িয়েছে স্থানীয় এক তৃণমূল নেতারও। অভিযোগ কুলতুলি থানার পুলিশ তাঁকে এখন বাঁচাতে ব্যস্ত। এমনকী এই ঘটনায় অভিযোগের আঙুল উঠেছে কুলতলি থানার বিরুদ্ধে। অভিযোগ, কুলতলি থানা ওই নাবালিকা এবং তার পরিবারের অভিযোগ তো দায়ের করেইনি, উল্টে ভয় দেখিয়ে এবং সালিশি করে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। 

আরও পড়ুন: মাঝরাতে বাড়িতে চড়াও দুষ্কৃতীরা, গুলি করে-কুপিয়ে খুন প্রতিবাদীকে

সম্প্রতি বিষয়টি মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর নজরে আসে। মঙ্গলবার এপি়ডিআর-এর পক্ষ থেকে ওই নাবালিকা এবং তার দিদিমাকে সঙ্গে নিয়ে বারুইপুর এসপি অফিসে যান আলতাফ আহমেদ-সহ কয়েক জন। কিন্তু পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান না থাকায়, তাঁর সহকারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপারেরর সঙ্গে দেখা করে পুরো বিষয়টি জানায় এপিডিআর। এরপর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এক মহিলা কনস্টেবলের মাধ্যমে ওই নাবালিকার সঙ্গে কথা বলে পুরো ঘটনাটি জানেন। এরপরই বারুইপুর জেলা পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে কুলতলি থানাকে এফআইআর নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয় এবং অভিযুক্তকে গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়। বুধবার সেই মতো এপিডিআর-এর সদস্যদের সঙ্গে ওই নাবালিকা এবং দিদিমা কুলতলি থানায় গিয়ে এফআইআর দায়ের করে। এরপরই অভিযুক্ত বাসুদেব মণ্ডলকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। যদিও, বুধবার সকালে ওই নাবালিকাকে তৃণমূলের সেই নেতার কিছু ঘনিষ্ঠজন থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে অভিযোগ এবং তাদের সঙ্গে গিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করারও নাকি দাবি জানাতে থাকে। তবে, এপিডিআর-এর কর্মীদের কঠোর মনোভাবে তৃণমূলকর্মী ও সমর্থকরা ঘটনাস্থল থেকে সরে যায় বলে সূত্রের খবর। 

নির্যাতনের শিকার নাবালিকার দিদিমা বারুইপুর এসপি অফিসে একটি অভিযোগপত্রও দায়ের করেছিলেন। সেই অভিযোগপত্র থেকে জানা যায়, ১৪ মার্চ দিদিমা ঘরের মধ্যে দুই ছোট নাতিকে নিয়ে শুয়ে ছিলেন। নাবালিকা-র বাবা বহুদিন আগে  মারা গিয়েছে। মা কলকাতায় কাজ করতেন। কিন্তু তিনিও মানসিক ভারসাম্য হারান। এরপর থেকেই ওই নাবালিকা এবং তার দুই ছোট ভাই এবং মানসিক ভারসাম্য হারানো মা-এর আশ্রয়দাতা হয় কুলতলির কৈখালি গ্রামের দাদু-দিদিমা। বারুইপুর এসপি অফিসে দায়ের করা অভিযোগপত্রে দিদিমা জানিয়েছেন, ১৪ মার্চ রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বারান্দায় বসে পড়াশোনা করছিল নাতনি। মাঝরাতে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। বাইরে বেরিয়ে দেখেন নাতনি নেই। এরপর তিনি নাতনিকে খুঁজতে থাকেন। কোথাও না পেয়ে বাড়ির পিছনে যান। সেখান দিয়ে কাছের ভেড়ির দিকে এগোতেই দেখতে পান বাদায় বসে নাতনি সমানো কেঁদে চলেছে। এরপরই দিদিমা-কে নাতিনি সমস্ত কথা খুলে বলে। জানায় কীভাবে দিনের পর দিন রাতের অন্ধকারে পড়ার জায়গা থেকে বাসুদেব তাকে তুলে নিয়ে যেত। কখনও বাসুদেবের বাড়ির ছাদে কখনও বাদায় তাকে লাগাতার ধর্ষণ করত। এমনকী, ঘটনার কথা জানাজানি হলে প্রাণে মেরে দেওয়ারও হুমকি দিত বাসুদেব। নিজের নৃশংসতা বোঝাতে নাবালিকার গলাও নাকি টিপে ধরত বাসুদেব। 

আরও পড়ুন: সিউড়িতে বাঘের আতঙ্ক, রাতে এলাকায় পাহারা দিচ্ছেন বনদপ্তরের কর্মীরা

দিদিমার আরও অভিযোগ, তাঁদের একদম পাশের বাড়ি বাসুদেবরা বেশ অর্থবান এবং রয়েছে দোতালাবাড়ি। সেইসঙ্গে স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা। যার জন্য বাসুদেবের মা-ও পরবর্তীকালে তাঁদের প্রাণে মারার হুমকি দিত বলেও অভিযোগ করেছেন নাবালিকার দিদিমা। এমনকী দুই নাতিকে বালির বস্তায় পুড়ে মেরে ফেলার হুমকিও নাকি দিয়েছিল বাসুদেবের মা। এমনই অভিযোগ করেছেন দিদিমা। নাবালিকার দিদিমা আরও অভিযোগ করেছেন যে, তাঁর মেয়ের মানসিক ভারসাম্যহীনতার সুযোগ নিয়ে একটি স্ট্যাম্প পেপারে সই করিয়ে নিয়েছিল বাসুদেবের মা। এতে বাসুদেবের মা ওই নাবালিকার সঙ্গে ছেলের বিয়ে দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এইভাবেই কোনওমতে বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছিল বলে অভিযোগ দিদিমার। তিনি জানিয়েছেন, পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী তাঁর নাতনি পড়াশোনায় ভালো। বুদ্ধিমতী। সুযোগ পেলে সে পড়াশোনা করে জীবনে দাঁড়াতে পারবে। তাই বাসুদেবের মা-এর দেওয়া বিয়ের প্রস্তাবে তিনি রাজি ছিলেন না। উপরন্তু তাঁর নাতনির জন্য তিনি বিচার চাইছিলেন। নাবালিকার স্কুলের এক শিক্ষক বাসুদেব এবং তার পরিবারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সরব হলে তাঁকেও তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। 

দিদিমা জানিয়েছেন, লকডাউন শুরু হয়ে যাওয়ায় কুলতলি থানা বিষয়টি আরও নিস্ক্রিয়তা দেখাতে শুরু করেছিল। এই সময় বাসুদেব এবং তাঁর পরিবারের হুমকি ও শাসানি আরও বেড়ে গিয়েছিল। এপিডিআরের দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা কমিটির সম্পাদক আলতাফ আহমেদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় আমফানের ত্রাণ বিলি করতে গিয়ে এই ঘটনা তাদের নজরে আসে। এরপরই তারা ওই নাবালিকার পাশে দাঁড়ায়।

PREV
click me!

Recommended Stories

২০ ডিসেম্বর বঙ্গে প্রধানমন্ত্রী, কী কী কর্মসূচি থাকছে? দেখুন কী বলছেন শুভেন্দু
৩৫ বছরের যুবকের সঙ্গে নাবলিকার বিয়ের তোড়জোড়, পরিবারের বিরুদ্ধে নালিশ জানাতে থানায় কনে