ন্যাকের মানোন্নয়নের প্রত্যাশায় মরিয়া বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ২৪-২৬ নভেম্বর ন্যাকের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের বিশ্বভারতী পরিদর্শনের সূচী নির্ধারিত হয়েছে।
ছয় বছর আগে মিলেছিল ‘বি’-গ্রেড (B-Grade)! ন্যাকের (NAAC) মূল্যায়নে বিশ্বভারতীর (Viswa Bharati) প্রাপ্ত মান নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল চরমে। ফের সেই ন্যাকের মূল্যায়নের সন্মুখীন রাজ্যের একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। এবার ন্যাকের মানোন্নয়নের প্রত্যাশায় মরিয়া বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। ২৪-২৬ নভেম্বর ন্যাকের ছয় সদস্যের প্রতিনিধিদলের বিশ্বভারতী পরিদর্শনের সূচী নির্ধারিত হয়েছে। সেই মোতাবেক বুধবার সকাল থেকেই ন্যাকের প্রতিনিধিরা শুরু করেছেন বিশ্বভারতীর বিভিন্ন ক্ষেত্র পরিদর্শন। তবে তার মাঝেই সেই বিতর্কের আঁচও ছুঁয়েছে বিশ্বভারতীকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গেট–‘বলাকা’র উল্টোদিকে রাস্তায় নেমে পৌষমেলা করা, ২০১৯ সালের পৌষমেলার সিকিউরিটি ডিপোজিট ফেরতের দাবি, উপাচার্যের কাজের প্রতিবাদ সহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে প্ল্যাকার্ড ব্যানার হাতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এলাকার হস্তশিল্পী সহ শান্তিনিকেতনের কবিগুরু হস্তশিল্প সমিতি ও বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা। দাবি করেছেন, ন্যাকের প্রতিনিধিদলের সাথে দেখা করে নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপিত করার। যদিও এখনও তার কোনও সাড়া মেলেনি।
বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গেছে, ঔরঙ্গাবাদের ডঃ বাবাসাহেব আম্বেদকর মারাঠওয়ারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বি এ কোপাডের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের ন্যাকের প্রতিনিধিদল মঙ্গলবারই পৌছেছেন বিশ্বভারতী। এদিন সকালে তাঁরা প্রথমে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ও তারপর বাংলাদেশ ভবনে দুটি বৈঠক করেন। এরপর তারা বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে শ্রীনিকেতন ক্যাম্পাস, কলাভবন সহ বিভিন্ন ভবন, কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।
এদিকে ন্যাকের পরিদর্শনের মাঝেই বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মূল ফটকের সামনে রাস্তায় নেমে গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে তাদের ক্ষোভের কথা ব্যক্ত করেন হস্তশিল্পী ও ব্যবসায়ীরা। তাদের বক্তব্য, ‘‘এটা ঠিক বিক্ষোভ নয়। আমরা হস্তশিল্পীরা ন্যাকের প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছি। কবিগুরু সর্বদা ‘আত্মশক্তি’র কথা বলেছিলেন, সম্প্রতি বিশ্বভারতীর সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তাঁর ভার্চুয়াল ভাষণে ‘ভোকাল ফর লোকাল’র কথা বলেছেন। কিন্তু বিশ্বভারতীর উপাচার্য হস্তশিল্প ও শিল্পীদের শেষ করে দেবার আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আমরা এরই প্রতিবাদে নেমেছি।’’
২০১৫ সালে ন্যাকের রিপোর্টে বি গ্রেড পেয়েছিল বিশ্বভারতী। যা নিয়ে সে সময় নিন্দার ঝড় উঠেছিল শিক্ষামহলে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রক প্রকাশিত ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক (এনআইআরএফ)’র ক্রমতালিকাতেও এক ধাক্কায় ২৮ ধাপ নেমে দেশের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির ক্রমতালিকায় ৯৭ তম স্থান পেয়েছে বিশ্বভারতী। শুধু তাই নয়, সারা দেশে যত বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেই তালিকাতেও ১৪ ধাপ নেমে ৬৪ তম স্থানে রয়েছে এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রশ্নে যথেষ্ট প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে।
তার উপর রয়েছে বিশ্বভারতীর উপাচার্যের গা জোয়ারি, ক্যাম্পাসে গেরুয়াকরনের এজেন্ডা প্রতিষ্ঠিত করা, লাগাতার সাসপেনশন, শো-কজ, বহিষ্কারের মত ঘটনায় ধারাবাহিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি। যা শান্তিনিকেতনের মত ক্যাম্পাসে নজিরবিহীন। এরই মাঝে ফের ন্যাকের পরিদর্শন। সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ন হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে কর্তৃপক্ষ। ফলাফল কি হয় আগামী ২৬ নভেম্বরের পর ন্যাকের পেশ করা রিপোর্টেই খোলসা হবে।
তবে ন্যাকের মানোন্নয়নের প্রত্যাশায় ন্যাকের প্রতিনিধিরা আসার আগে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে৷ বিভিন্ন ভবন, হস্টেল, হাসপাতাল সহ বিভিন্ন জায়গা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন, রঙ করার পাশাপাশি নতুন বোর্ড বসানো ইত্যাদি একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রতিনিধিদলের কাছে পরিবেশনের জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে বিশ্বভারতী সূত্রে।
বিশ্বভারতী এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘গতবার ন্যাকের কাছে আমাদের মূল বিশেষত্ব তুলে ধরা ক্ষেত্রে খামতি ছিল। এবার যাতে সেই খামতি না থাকে তার দিকে বিশেষ খেয়াল রাখা হয়েছে। মানোন্নয়নের ব্যাপারে আমরা খুব আশাবাদী।’’ অপরদিকে অধ্যাপক সংগঠন ভিবিউফা’র তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, উপাচার্যের শিক্ষাবিরোধী পদক্ষেপ ও করোনার কারনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি জটিল হলেও তারই মাঝে পড়াশুনা ও গবেষনার কাজে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছেন অধ্যাপকরা। নিশ্চিতভাবেই ন্যাকের মূল্যায়নে তা গুরুত্ব পাবে ও প্রাপ্ত মানের উন্নয়ন ঘটবে।