মুর্শিদাবাদে নজিরবিহীনভাবে এই প্রথম জেলা পরিষদের কয়েকশো কোটি টাকার বাজেট সভাধিপতি ও সহ-সভাপতি ছাড়াই পেশ হতে চলেছে বৃহস্পতিবার।রীতিমত এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
মুর্শিদাবাদে (Murshidabad) নজিরবিহীনভাবে এই প্রথম জেলা পরিষদের কয়েকশো কোটি টাকার বাজেট সভাধিপতি ও সহ-সভাপতি ছাড়াই পেশ (Budget of the District Council in Murshidabad)হতে চলেছে বৃহস্পতিবার।রীতিমত এই ঘটনায় রাজনৈতিক মহল থেকে সাধারণ মানুষের মধ্যে শোরগোল পড়ে গিয়েছে।
২২-২৩ আর্থিক বর্ষের জন্য মুর্শিদাবাদের যাবতীয় উন্নতি খাতে সরকারি বরাদ্দের বহু প্রতীক্ষিত জেলা পরিষদের ৬৬১ কোটি টাকার বাজেট পেশ হওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়েছে সকলে। উঠছে নানান ধরনের প্রশ্ন। সূত্র মারফত জানা যায়,গত বছরের থেকেও এবার বাজেট বেড়েছে। জেলা পরিষদের সমস্ত কর্মাধ্যক্ষ হাজির থাকবেন। এছাড়া জেলা পরিষদের সচিব, অতিরিক্ত নির্বাহী আধিকারিক, হিসেবরক্ষক সহ অন্যান্য আধিকারিকরা উপস্থিত থাকবেন বলেই জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়। অতি গুরুত্বপূর্ণ ভাবে এবারই প্রথম জেলা পরিষদের সভাধিপতি ও সহ সভাধিপতির অনুপস্থিতিতে বাজেট পেশ হতে চলেছে। বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরনোর পরেই সভাধিপতি মোশারফ হোসেন মধু তৃণমূল ত্যাগ করে অধীর চৌধুরী হাত ধরে কংগ্রেসে যোগদান করেন। একইসঙ্গে তার পিছু নিয়ে সহ সভাধিপতিও পদত্যাগ করে। তিনি অবশ্য বিজেপিতে যোগদান করেন। তারপর ওই দু’টি পদে নতুন করে কাউকে নির্বাচিত করা হয়নি। কর্মাধ্যক্ষরা নিজেরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ফলে কোনও প্রকল্পের কাজ থমকে নেই।
জেলা পরিষদের এক আধিকারিক এই ব্যাপারে বলেন, সভাধিপতি না থাকলেও বাজেট পেশ করতে সমস্যা হবে না। ওইদিন দিকে যেমন পুরাতন আর্থিক বর্ষ ২০২১-’২২সালের সংশোধিত বাজেট নিয়ে আলোচনা হবে। তাছাড়া ২০২২-’২৩ আর্থিক বছরের খসড়া বাজেট নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ রাজীব হোসেন বলেন, সমস্ত খাতে ওই টাকা ব্যয় করা হবে।প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী আর্থিক বর্ষে আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল সরবরাহে জোর দেওয়া হবে। চলতি আর্থিক বছরেও এই কাজ করা হয়েছে। কিন্তু এখনও জলঙ্গি, রানিনগর, ফরাক্কা, ডোমকল সহ বিভিন্ন এলাকার অনেক গ্রামেই আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পৌঁছয়নি। জেলার ভরতপুর ব্লক ছাড়া সব এলাকাতেই আর্সেনিকের সমস্যা রয়েছে। সেই কারণে এই কাজে মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করা হবে। এছাড়া পথবাতি বসানোর কাজও গুরুত্ব দিয়ে করা হবে। বিশেষ করে সোলার লাইট বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে। সেচ ব্যবস্থা উন্নতি করতেও অর্থ ব্যয় করা হবে। প্রত্যন্ত এলাকার বেশ কয়েকটি রাস্তা সংস্কার করা হবে। কয়েকটি এলাকায় মার্কেট কমপ্লেক্স তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।
জেলা পরিষদ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, প্রতি বছরই অর্থ কমিশনের টাকা পাওয়া যায়। সেই টাকায় রাস্তা সংস্কার, পানীয় জল পৌঁছনোর পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করা হয়। সামনের আর্থিক বর্ষেও এই প্রকল্পে ৭০কোটির বেশি টাকা আসার কথা রয়েছে। এছাড়া রাজ্য সরকার বিভিন্ন খাতে অর্থ বরাদ্দ করে। জেলা পরিষদের নিজস্ব তহবিল রয়েছে। তাই উন্নয়নমূলক কাজ করতে তেমন সমস্যা হয় না। তবে এবার সভাধিপতি ছাড়াই বাজেট পেশ হতে চলায় বিরোধীরা কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। মুর্শিদাবাদ জেলা বিজেপির সভাপতি তথা বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ বলেন, ওই পদের জন্য ওদের একাধিক দাবিদার রয়েছে। সেই কারণেই সভাধিপতি বা সহ সভাধিপতি পদে তারা কাউকে বসাতে পারছে না। সভাধিপতি ছাড়া বাজেট পেশ হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন"। বিরোধীদের দাবি, জেলা পরিষদ প্রতিবারই বিপুল টাকার বাজেট পেশ করে। কিন্তু কাজ কতটা হয়, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ক্ষমতায় আসার আগে জেলার প্রতিটি বাড়িতেই আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পৌঁছনোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্ধেক বাড়িতে জল পৌঁছয়নি। এই সবগুলোই গোলকধাঁধা তৃণমূলের"। অধীর চৌধুরীর রাজনৈতিক সচিব জয়ন্ত দাস বলেন,"মানুষকে বোকা বানানোর জন্য তৃণমূল নেতার লুটতরাজ চালাতে যেমন খুশি সেই ভাবেই আইন পরিচালনা করছেন। আদতে এটা মগের মুলুক করে ছেড়েছে তারা"।