দেবীর আদেশে এই মন্দিরে কোনও ছাদ বা আচ্ছাদন কিছুই নেই। চারিদিক দেওয়াল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। আর খোলা আকাশের নিচেই পরম জাগ্রত দেবীনগর কালীবাড়ির দেবী পূজিতা হন বেদীতেই।
সূর্য অস্ত (Sunset) যাওয়ার পরে শুরু হয় প্রতিমা নির্মাণের (Idol Made) কাজ। আর প্রতিমা নির্মাণের পরই শুরু হয় পুজো (Puja)। রাতভর চলে পুজো। তারপর ভোরের আলো ফোটার আগেই দেবীর নিরঞ্জন সম্পন্ন হয়। প্রায় পাঁচশো বছর ধরে এমনই রীতি মেনে দিওয়ালির (Diwali) দিন রাতে কালীপুজো (Kali Puja) হয়ে আসছে রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগর কালীবাড়ির (Devinagar Kalibari) মন্দিরে।
শুধু তাই নয়, দেবীর আদেশে এই মন্দিরে কোনও ছাদ বা আচ্ছাদন কিছুই নেই। চারিদিক দেওয়াল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। আর খোলা আকাশের (Sky) নিচেই পরম জাগ্রত দেবীনগর কালীবাড়ির দেবী পূজিতা হন বেদীতেই। শুধু এই উত্তর দিনাজপুর জেলাই নয়, অন্য জেলা ও ভিনরাজ্য থেকে হাজার দর্শনার্থীদের সমাগম হয় দিওয়ালির সময়। এই ঐতিহ্যবাহী এই পুজো দেখতে ভিড় করেন বহু মানুষ। তবে করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এবার এই পুজোর আয়োজন করায় বেশ কিছুটা কড়াকড়ি করা হয়েছে। মন্দিরে প্রবেশের জন্য মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনা টিকার দুটি ডোজও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এগুলি না থাকলে মন্দিরে প্রবেশ করা যাবে না বলে জানিয়েছে মন্দির কর্তৃপক্ষ।
আরও পড়ুন- পুরুলিয়ার এই গ্রামে ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়াতেন মা কালী
আরও পড়ুন- মুসলিম জমিদারের হাতে শুরু হয় তিন বোনের বুড়ি কালী পুজো
কথিত আছে, রায়গঞ্জ শহরের দক্ষিণ প্রান্তে দেবীনগরে রাজপথের ধারে ওই কালীমন্দিরে একসময় গাছের তলায় ডাকাতদল পুজো করত। দিনাজপুরের রাজা একবার ওই পথ দিয়ে ভূপালপুর রাজবাড়ি যাচ্ছিলেন। তখন এই স্থানে আটকে পড়েছিলেন তিনি। সেই সময় দেবীর আদেশ পান। এরপর দেবীর নির্দেশ মেনেই ওই স্থানে মন্দির তৈরি করে সেখানে পুজো শুরু করেন। দেবীর এই আদেশও ছিল যে মন্দিরের ছাদ খোলা থাকবে। রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়ের মধ্যেই খোলা আকাশের নিচে এখানে মাকে পুজো করা হবে।
আরও পড়ুন- একই মন্দিরে কালীর সঙ্গে পূজিত হন পীর বাবা
দিনাজপুরের রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন যে দিওয়ালির অমাবস্যায় সূর্য অস্ত যাওয়ার পরে মায়ের মূর্তি তৈরি করা শুরু হবে। আর সূর্য উদয় হওয়ার আগেই মায়ের নিরঞ্জন সম্পন্ন করতে হবে। বাকি সারাটা বছর মা পূজিতা হবেন পঞ্চমুন্ডির বেদীতেই। মায়ের স্বপ্নাদেশ পেয়ে দিনাজপুরের রাজা রায়গঞ্জ শহরের দেবীনগরে রাজপথের ধারে তৈরি করে দেন ছাদ খোলা মায়ের মন্দির। সেই থেকে আজও এই ছাদ খোলা মন্দিরে পঞ্চমুন্ডির বেদীতে মা কালীর আরাধনা হয়। আর দিওয়ালির একরাতেই মায়ের মূর্তি তৈরি করে পুজো করে ভোরের আলো ফোটার আগে নিরঞ্জন দেওয়া হয়।
পাঁচশো বছরের এই নিয়মের আজ পর্যন্ত কোনও অন্যথা হয়নি। প্রতি বছর এই নিয়ম মেনেই এখানে পুজো করা হয়। দেবীনগর কালীবাড়ির দেবী অত্যন্ত জাগ্রদ বলে পরিচিত রয়েছে লোকমুখে। আর এর খ্যাতি ছড়িয়ে রয়েছে গোটা দেশে। অসম থেকে ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, বিহার সহ বিভিন্ন রাজ্য থেকে এখানে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয় দিওয়ালির দিন রাতে।