সংক্ষিপ্ত

৫০০ বছর আগে চার দেওয়ালের ভেতর তৈরি হওয়া মন্দির-মসজিদের সহাবস্থান আজও স্বমহিমায় অটুট। দেশ বিদেশে যখন মন্দির মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে ঠিক তখনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির গড়ল পুরুলিয়া মফঃস্বল থানার ছোট্ট গ্রাম হিড়বহাল। 

কালী মন্দিরের (Kali Temple) একদিকে রয়েছেন মা কালী আর অন্যপাশে রয়েছেন পীরের মাজার। কালীর সঙ্গে পূজিত হন পীর বাবাও (Baba Pir)। মা কালীর কাছে ছাগ বলি দেওয়া হয় আর পীরের মাজারে দেওয়া হয় মোরগ। ৫০০ বছর আগে চার দেওয়ালের ভেতর তৈরি হওয়া মন্দির-মসজিদের সহাবস্থান আজও স্বমহিমায় অটুট। দেশ বিদেশে যখন মন্দির মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে চলেছে ঠিক তখনই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নজির গড়ল পুরুলিয়া মফঃস্বল থানার ছোট্ট গ্রাম হিড়বহাল। 

পুরুলিয়া বরাকর রাজ্য সড়ক দিয়ে ১৮কিমি পথ গিয়ে বাম পাশে এক কিমি কাঁচা রাস্তা পার করেই ছোট্ট গ্রাম হিড়বহাল। গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে রয়েছে ছোট্ট একটি মন্দির। মন্দিরের গায়ে লেখা শ্রী শ্রী মা ভদ্রকালী ও বাবা সত্যপীরের মন্দির। মন্দিরের একদিকের দেওয়ালের এককোনায় ত্রিশূল চিহ্ন দিয়ে লেখা "বাবা ভোলানাথ"। আর পাশে গাছের নিচে শিব লিঙ্গ দেওয়ালে অন্য কোনায় হিন্দীতে লেখা রয়েছে "পীর বাবা"।মন্দিরের একটু পাশেই আবার "জয় শ্রী রাম" লেখা ঘণ্টা টাঙানো বেদী। মন্দিরের ভিতর মা ভদ্র কালী এবিং পীরবাবা রয়েছেন পাশাপাশি। তবে মা কালী বা পীর কারও কোনও বিগ্রহ নেই। মা কালী এখানে পাতাল ফোঁড় শিলা। বেদির উপর মা কালীর ছবি রয়েছে। পাশেই সবুজ চাদর ঢাকা পীরের মাজার। প্রায় পাঁচশো বছর ধরে এভাবেই হিন্দু মুসলিম দুই ধর্মের সহাবস্থান হয়ে আসছে হিড় বহাল গ্রামে। তবে হিড় বহাল গ্রামে কোনও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ থাকেন না। বংশ পরম্পরায় আট পুরুষ ধরে মন্দিরে পুরোহিতের কাজ করে আসছেন বাউরি সম্প্রদায়ের মানুষ। বর্তমান পুরহিত দাসুদেব বাউরি এবং তাঁর ছেলে তপন বাউরি। দাসুদেবের বয়স হওয়ায় তাঁর ছেলে তপন বাউরিই এখন পুরোহিতের দায়িত্বে। তপন বাউরী জানান প্রায় পাঁচশো বছর আগে এ পুজো (Puja) শুরু হয়েছিল। সেই সময় এই এলাকা জঙ্গলের মাঝে ছিল। ওই জঙ্গলে তপস্যারত এক মুনিকে স্বপ্নাদেশ দেন মা। ভদ্রকালী মায়ের দেখা পাওয়ার পরেই ওই মুনি ভদ্র কালীর পুজো শুরু করেন।

আরও পড়ুন- কতদিন ধরে হবে কালীপুজোর নিরঞ্জন, কী জানাল নবান্ন

অস্ত্র প্রদান করেছে বলে কথিত রয়েছে দীর্ঘদিন সেই অস্ত্র গ্রামে ছিল। গ্রামে চোর-ডাকাত এলে ওই অস্ত্র নিজে থেকে গ্রাহকদের জানানো হলেও বলে কথিত রয়েছে। তবে যাই হোক মা ভদ্রকালী পুজো শুরু হওয়ার কতদিন পর জঙ্গলের মাঝে থাকাকালীন পীরবাবার স্বপ্নাদেশ পান তিনি। জানিয়েছিলেন একই জায়গায় তাঁরও পুজো করতে হবে। এদিকে হিন্দু হয়ে কিভাবে পীরবাবার পুজো করবেন তা বুঝে উঠতে পারছিলেন না ওই মুনি। সেই সময় পীরবাবাই স্বপ্নাদেশে মুনিকে পীরের পুজো করার পথ বলে দিয়েছিলেন। সেই থেকে আজও মা কালী এবং পীরের পুজো হয়ে আসছে। শুধু পুরুলিয়া জেলা নয় এই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ছাড়াও পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ড থেকেও বহু মানুষ এখানে পুজো দিতে আসেন।যে যা মানত করেন  মা ভদ্রকালী এবং পীরবাবা পূরণ করেন বলে মানুষের বিশ্বাস রয়েছে।

আরও পড়ুন- কালীপুজো ছাড়াও দীপাবলি নিয়ে রয়েছে অনেক কাহিনি, জেনে নিন দীপাবলির মাহাত্ম্য

আরও পড়ুন- আড়াইশ বছর অতিক্রম করে আজও স্বমহিমায় পূজিতা হন সুন্দরবনের অরণ্য কালী

পুরহিত তপন বাবু জানান, মুনি যেভাবে ভদ্রকালী এবং পীর বাবার পুজো শুরু করেছিলেন। সেই রীতি মেনে আজও পুজো করে চলেছেন। ৩৬৫ দিন এখানে পুজো হয়ে আসছে। পুরোহিত  তপন বাউরী হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রসঙ্গে বলেন, "আমি এটাই বলব যে একই মন্দিরে হিন্দু এবং মুসলিম দুই  ধর্মের দুই দেব দেবী মা ভদ্র কালি এবং পীর বাবা মানুষকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন আমরা এক এবং অভিন্ন। রাম রহিম এক। তাই মানুষের মধ্যে ভেদাভেদ না করে সকল ধর্মের প্রতি সহানুভূতি রেখে আমাদেরকে এগিয়ে যেতে হবে। যারা ধর্ম নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, এটা ঠিক নয়। মা ভদ্রকালী এবং পীর বাবা সেটা প্রমাণ করে দিচ্ছেন।"

YouTube video player