গর্ভবতী মহিলাকে মাটিতে ফেলে পেটে লাথি। তাঁর শ্বাশুড়িকে বিবস্ত্র করে মার। অভিযোগ তিন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সহ তাঁদের অনুগামীদের বিরুদ্ধে।
তনুজ জৈন প্রতিনিধি, মালদা, গর্ভবতী তৃণমূল কর্মী (Pregnent TMC Worker) মহিলাকে মাটিতে ফেলে পেটে লাথি, তাঁর শ্বাশুড়িকে বিবস্ত্র করে মার তৃণমূল (TMC) নেতা সহ তাঁদের অনুগামীদের বিরুদ্ধে,কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস তৃণমূল জেলা সভাপতির। মর্মান্তিক ও চরম লজ্জাজনক এই ঘটনাটি ঘটেছে মালদায় (Malda)। এই ঘটনার পর প্রায় গোটা গ্রাম জুড়েই রয়েছে আতঙ্ক।
গর্ভবতী মহিলাকে মাটিতে ফেলে পেটে লাথি। তাঁর শ্বাশুড়িকে বিবস্ত্র করে মার। অভিযোগ তিন স্থানীয় তৃণমূল নেতা সহ তাঁদের অনুগামীদের বিরুদ্ধে। নির্মম এই ঘটনা মালদার গাজোলের আলালের মুড়িয়াকুন্ডু গ্রামে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সেই গর্ভবতী মহিলা মালদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি অসুস্থ মহিলার শ্বাশুড়ি। এই মুহুর্তে আতঙ্কে গ্রামছাড়া পরিবারের বাকি সদস্যরা। শুধু তাই নয়,গর্ভবতী মহিলার স্বামীর কম্পিউটারের দোকানে তালা মেরে দিয়েছে অভিযুক্তরা। বিষয়টি নিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েও কোনও ফল হয় নি অভিযোগ আক্রান্ত পরিবারের।। তৃণমূলের নেতা কর্মী বলে পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও জানিয়েছে তারা। গ্রামের মোড়ল মাতব্বরদের সালিশি করার চেষ্টার নাম করে উলটে অভিযুক্তদেরই পক্ষ নিয়েছে বলেও জানিয়েছে আক্রান্ত পরিবারের সদস্যরা।
Shantipur Vote Result: বড় ধাক্কা বিজেপির, শান্তিপুরের জেতা আসন ছিনিয়ে নিল তৃণমূল কংগ্রেস
নিসাদ সেলিম রেজা। মুড়িয়াকুন্ডু গ্রামের বাদিন্দা। এই গ্রামের গা লেগে চলে গেছে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক। আর এই জাতীয় সড়ক হওয়ার পর থেকেই প্রত্যন্ত গ্রামের জাতীয় সড়ক লাগোয়া জায়গার দাম জমি মাফিয়াদের দৌলতে আকাশ ছোঁয়া হয়ে গেছে। বহিরাগত প্রোমোটার,ঠিকাদার, জমি মাফিয়াদের ভিড় দিনে দিনে বাড়ছে জাতীয় সড়ক লাগোয়া গ্রামগুলোতে। পাশাপাশি তাঁদের সঙ্গে থাকে স্থানীয় বা জেলা স্তরের শাসক দলের নেতা কর্মীরাও হাত মিলিছে। তৃণমূল কংগ্রেসের স্থানীয় নেতা কর্মীরাও জমির বখরা পাওয়ার চেষ্টা করেছে বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
নিসাদ সেলিম রেজার এমনই একটি জায়গায় ছোট কমপিউটারের দোকান রয়েছে। দোকান লাগোয়া বসত বাড়িতে মা ও স্ত্রীকে নিয়েই তাঁর সংসার। জাতীয় সড়ক লাগোয়া নিসাদের সেই জমি সেদিকেই নজর জমি মাফিয়াদের। তাঁদের দখলে থাকা বিস্তীর্ণ এলাকায় মাঝখানে নিসাদ সেলিম রেজার দোকান বসত ভিটে নেহাতই বেমানান। জমি মাফিয়াদের জমি প্লট করে ব্যবসা করতে সমস্যা হচ্ছে। এরপরই জমি মাফিয়া তথা স্থানীয় তৃণমূল নেতা কর্মীরা নিসাদকে পরিবার নিয়ে অন্যত্র সরে যেতে হুকুম দেয়। বদলে অবশ্য কিছু টাকা দিয়ে দেবে বলেও জানিয়েছে তারা। কিন্তু নিসাদ রাজি না হওয়ায় তাঁকে নানাভাবে উত্যক্ত করা হত বলে অভিযোগ। এরপরে নিসাদ পুলিশের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু তার ফল হয় হিতে বিপরীত। অভিযোগ জানানোর পরে হুমকির মাত্রা বাড়তে থাকে। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে নিসাদ ও তাঁর স্ত্রীও তৃণমূল কংগ্রেসের একজন সমর্থন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী তাঁরা। স্থানীয় তৃণমূল নেতাকর্মীদের কাছে এই তথ্য অবশ্য অজানা নয়। কিন্তু তারপরেও অত্যাচারের হাত থেকে রেহাই পায়নি নিসাদ সেলিম রেজার পরিবার।
GAS Cylinder: গ্যাস এজেন্সিগুলির যোগসাজশ,গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে নয়া কালোবাজারির পর্দা ফাঁস পুলিশের
সেদিন নিসাদ বাড়িতে ছিলেন না। ঘরে বিধবা মা এবং ২১ বছরের স্ত্রী ছিলেন। অভিযোগ সেই সময় স্থানীয় তৃণমূল নেতা কামরুজ্জামান, মনিরুজ্জামান, আহাসানুল ইসলাম এবং করিমুল ইসলাম সহ আরও কয়েকজন অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। জমির দলিল চায়। জোর করে সেই জমি বিক্রি করানোর জন্যে সই করাতে চাপ দিতে থাকে। নিসাদের মা রাজি না হলে তাঁকে বিবস্ত্র করে মারধর করা হয়। নিসাদের গর্ভবতী স্ত্রী বাধা দিতে এলে তাঁকে মাটিতে ফেলে পেটে লাথি মারে দুস্কৃতীরা। এরপর বাইরে নিসাদের দোকানে তালা মেরে চলে যায়। গোটা পরিবারকে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দিয়ে যায় বলেও অভিযোগ।