Durga Puja- ৯ বার তোপধ্বনি দিয়ে মল্লগড়ে শুরু দুর্গাপুজো

১৯ তম মল্লরাজা জগতমল্ল তাঁদের আদি ভূমি জয়পুর থেকে বিষ্ণুপুরে শিকারের জন্য এসেছিলেন। এখানে এসে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন তিনি। সেখানেই দেবী মৃন্ময়ীর দর্শন পেয়ে শুরু করেছিলেন দুর্গাপুজা। যা আজ থেকে প্রায় ১০২৪ বছর আগের কথা। 

Asianet News Bangla | / Updated: Oct 01 2021, 06:30 AM IST

রাজা নেই,  নেই রাজত্বও। শুধু রয়ে গিয়েছে তাঁদের ইতিহাস। আর সেই ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে রয়েছে প্রাচীন দুর্গাপুজা। রাজত্ব না থাকলেও সেই রাজ আমলের ১০০০ বছরের বেশি প্রাচীন পুজোকে আঁকড়ে রেখে পালন করে চলছেন বর্তমান পরিবারের সদস্যরা। সেই নিয়ম মেনেই বৃহস্পতিবার কৃষ্ণনবমী তিথিতে পুজো শুরু হয়ে গেল তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেই তোপধ্বনির শব্দে কেঁপে উঠল মল্লগড়। আর এভাবেই রাজাদের পুজো শুরু হওয়ার জানান দিল। 

প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই পরপর ৯ বার তোপধ্বনির শব্দে মল্লগড় বিষ্ণুপুরে শুরু হয়ে গেল মল্লরাজাদের বহু প্রাচীন দুর্গাপুজা। তিথি মেনেই জিতাষ্টমীর পর দিনই কৃষ্ণনবমী তিথিতে মল্লগড়ে শুরু হয় প্রাচীন দুর্গাপুজা। মল্লদরবারের কাছেই গোপালসায়ের পাড়ে একের পর এক তোপধ্বনি, অন্যদিকে বাদ্য যন্ত্র ও মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে মল্লরাজাদের প্রাচীন দুর্গাপুজা শুরু করা হল। ঠিক এইভাবেই দেবী মৃন্ময়ীর নানা নিয়মের মধ্য দিয়ে পুজো শুরু হয়েছিল মল্লগড়ে। সে আজ থেকে প্রায় ১০২৪ বছর আগের কথা।

আরও পড়ুন,Durga Puja: ২৫০ বছর পুরোনো বর্ধমানের দে পরিবারে হরগৌরী রূপে পূজিত হন দেবী দুর্গা

আরও পড়ুন- সন্ধিপুজোর আগে কামান দাগা হত মহিষাদল রাজবাড়িতে

১৯ তম মল্লরাজা জগতমল্ল তাঁদের আদি ভূমি জয়পুর থেকে বিষ্ণুপুরে শিকারের জন্য এসেছিলেন। এখানে এসে স্বপ্নাদেশ পেয়েছিলেন তিনি। সেখানেই দেবী মৃন্ময়ীর দর্শন পেয়ে শুরু করেছিলেন দুর্গাপুজা। যা আজ থেকে প্রায় ১০২৪ বছর আগের কথা। দেবী মৃন্ময়ী মল্লরাজাদের কুলদেবী এবং তাঁর কৃপাতেই মল্লরাজারা বিষ্ণুপুরে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন। দেবী মৃন্ময়ীর আশীর্বাদে মল্লরাজাদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল। ফুলে ফেঁপে উঠেছিল রাজকোষাগার। রাজপ্রাসাদ সহ দেবী মৃন্ময়ীর বিশাল মন্দির নির্মাণ করে আরো ধুমধাম করে পুজো শুরু করেন রাজা। একের পর এক মল্লরাজার আমলে বিষ্ণুপুর জুড়ে তৈরি হয়েছে টেরাকোটার অপুর্ব কারুকার্য্য ভরা মন্দির যা আজও বিষ্ণুপুরের মাটিতে সেই ইতিহাসের জানান দেয়। 

আরও পড়ুন- নাতনির আবদার মেটাতে কাপড়ের প্রতিমায় মায়ের আবাহন বালুরঘাটের চক্রবর্তী পরিবারে

প্রাচীন নিয়ম মেনে আজও ওই পুজোর আয়োজন করা হয়। বর্তমান মল্লরাজপরিবারের সদস্যরা নিয়ম মেনেই সেই পুজো করেন। যে নিয়ম দিয়ে শুরু হয়েছিল দেবী মৃন্ময়ীর পুজো সেই নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন বর্তমান সদস্যরা। প্রাচীন নিয়ম মেনেই কৃষ্ণনবমী তিথিতে মল্লরাজদরবার সংলগ্ন গোপালসায়েরে মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে পটের দেবী বড়ঠাকুরানীকে স্নান করিয়ে মৃন্ময়ী মন্দিরে নিয়ে আসা হল। মন্দিরে দেবীকে বরণ করে নেন রাজপরিবারের গৃহবধূরা। বড়ঠাকুরানী মন্দিরে প্রবেশের সময় পরপর তিনবার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। তারপর মূল গর্ভগৃহে প্রবেশের সময় আবার তিনবার তোপধ্বনি দেওয়া হয়। ফের ভোগ নিবেদন করার সময় আবার গর্জে উঠে কামানের ধ্বনি। এই কামানের ধ্বনিই জানান দেয় যে মল্লগড়ে শুরু হয়ে গেল দুর্গাপুজা।   

ঠিক একেভাবেই তিথি ধরে পটের মেজ ঠাকুরানী ও ছোট ঠাকুরানী দুটি রূপের প্রবেশ হবে মৃন্ময়ী মন্দিরে। পটের তিন রূপের পাশাপাশি মল্লরাজার সময়ে গঙ্গা মাটি দিয়ে তৈরি দেবী মৃন্ময়ীর পুজোও শুরু হয়ে যায়। দেবী মৃন্ময়ীর পুজো হয় প্রাচীন নিয়ম মেনে। এখানে বলিনারায়নী পুঁথি ধরেই পুজো করা হয়। মহাষ্টমীর সন্ধিক্ষণে আজও বড় কামান ফাটানো হয়। মহানবমীতে এই মন্দিরে রাজপ্রতিনিধির উপস্থিতিতে উলটো মুখে বসে খচ্চর বাহিনীর পুজো করা হয়। মল্লরাজ আমলে এই দেবী মহামারী থেকে মল্লগড়কে রক্ষা করেছিল বলে কথিত আছে। বিজয়া দশমীতে রাজার বর্তমান প্রজন্মের সদস্যরা নীলকন্ঠ পাখি উড়িয়ে বিজয়াযাত্রা পালন করেন। আজও প্রাচীন সেই নিয়মগুলি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন মল্লপরিবারের বর্তমাম প্রজন্ম। 

Section 144 has been issued in Bhabanipur before the by election RTB

Share this article
click me!