জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জের অধিকাংশ পরিবারই বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। ভোট এলেই তাঁদের কদর বেড়ে যায়
নজরকাড়া সামশেরগঞ্জ (Samsherganj assembly constituency) ও জঙ্গিপুর (Jangipur assembly constituency) জোড়া বিধানসভা কেন্দ্রে বদলে যেতে পারে ভোটের ফল(Election Results)। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন শেষ মুহূর্তে উল্টে যেতে পারে পাটিগণিতের সব হিসেব-নিকেশ। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, পশ্চিমবঙ্গের নজরকাড়া মুর্শিদাবাদের (Murshidabad) সামশেরগঞ্জ, জঙ্গিপুর জোড়া বিধানসভা কেন্দ্রের ভোটের হারজিত নির্ভর করছে লক্ষাধিক বিড়িশ্রমিকদের ওপর।
ওই দুই বিধানসভা কেন্দ্রের লক্ষাধিক বিড়ি শ্রমিক পরিবারদের মন যে দিকে ঝুঁকবে ভোট বাক্সের পাল্লা ভারি হবে সেই দলের। আর কিভাবে এই লক্ষাধিক শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের নিজেদের দিকে শেষ মুহূর্তে নিয়ে আনা সম্ভব হবে, সেই অংক এখন কষে চলেছে দুই রাজনৈতিক দলের ভোট ক্যাচাররা বলে বিশেষ সূত্রের খবর। সেক্ষেত্রে মরিয়া হয়ে উঠেছে শাসক ও বিরোধী দল উভয়েই। শেষ মুহূর্তে মাইক্রো লেভেলে মূলত বিড়ি শ্রমিকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের কাছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে রাজ্য সরকারের একাধিক প্রকল্পের কথা তুলে ধরছেন শাসক দলের কর্মী সমর্থকরা।
জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জে কয়েক লক্ষ শ্রমিক এই পেশাতেই দীর্ঘদিন ধরে যুক্ত রয়েছেন। বংশ পরম্পরায় এই কাজ তাঁরা করছেন। এই শ্রমিকরাই যে কোনও নির্বাচনের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেন। বিভিন্ন কারণে তাঁদের মনে অভিমান রয়েছে। কিন্তু তবুও তাঁরা রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের প্রতি আস্থা রাখছেন। কারণ কেন্দ্র ইতিমধ্যে কোটপা আইনের জুজু দেখিয়ে রেখেছে। জিএসটি চালু করে বিজেপি সরকার বিড়ি শিল্পকে ধাক্কা দিয়েছে।
আরও পড়ুন- ত্রেতাযুগ থেকে আজ পর্যন্ত সীতার দেওয়া অভিশাপ বয়ে চলেছেন এই চারজন
আবার সংশোধিত ওই আইন লাগু হলে সর্বনাশ হয়ে যাবে বলে শিল্পের কর্তাদের দাবি। দীর্ঘদিন পারিশ্রমিক না বাড়ায় রাজ্যের প্রতি বিড়ি শ্রমিকদের অভিমান ছিল। কিন্তু শ্রমদপ্তরের মন্ত্রী বেচারাম মান্না পারিশ্রমিক বাড়াতে নিজে উদ্যোগী হয়েছেন। কলকাতায় শ্রম ভবনে তা নিয়ে এক দফা বৈঠকও করেছেন। তাই এবার পারিশ্রমিক বাড়বে বলে বিড়ি শ্রমিকরা আশা করছেন। সেই কারণে এবারের নির্বাচনে তাঁরা শাসকদলের উপরেই ভরসা রেখেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জঙ্গিপুর ও সামশেরগঞ্জের অধিকাংশ পরিবারই বিড়ি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। ভোট এলেই তাঁদের কদর বেড়ে যায়। বিভিন্ন রকম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। কিন্তু নির্বাচন পর্ব মিটলেও তাঁদের অন্ধকার দূর হয় না। এক বিড়ি শ্রমিক বলেন, শুধু বিড়ি বেঁধে এখন সংসার চালানো দায় হয়ে উঠেছে। দিনে ২৫০-৩০০ টাকা আয় করতেই কালঘাম ছুটে যায়। আগের মতো কাজও পাওয়া যায় না। পারিশ্রমিক বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি।
আরও পড়ুন- শাঁখ কেন তিনবার বাজানো হয় জানেন, রয়েছে অদ্ভুত কারণ
এক মাঝবয়সি বিড়ি শ্রমিক মেহেরুন্নেসা বিবি বলেন, বিড়ি বাঁধার কাজ করলে এমন কাশি হবে। আমার স্বামীরও এই রোগ ছিল। এলাকায় অন্য কোনও কাজ নেই। তাই বিড়ি বাঁধা ছাড়া অন্য উপায় নেই। যে রাজনৈতিক দল আমাদের দুঃখ কষ্ট দূর করতে সাহায্য করবে আমরা তার পাশেই থাকবো"।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, শ্রমিকদের মন জয় করতে অনেক আগেই তারা ময়দানে নেমেছে। লকডাউনের সময় কারখানা বন্ধ ছিল। তখন অনেকের সংসার চালানোই দায় হয়ে উঠেছিল। সেইসময় শাসকদলের নেতারা বিভিন্নভাবে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে।
জঙ্গিপুরের তৃণমূল প্রার্থী জাকির হোসেন মঙ্গলবার বিকেলে সংবাদমাধ্যমে বলেন, লকডাউনের সময় রাজনৈতিক রং দেখিনি। নিজে এলাকায় গিয়ে খাদ্যসামগ্রী, কাপড় দিয়েছি। অনেক শ্রমিক পরিবারের হাতে টাকাও তুলে দিয়েছি। তাঁরা জানেন বিপদের দিনে আমরাই থাকি। অন্য দলের নেতাদের দেখা যায় না। আমরা সারা বছর জনতার দরবার বসাই। বিড়ি শ্রমিকরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে সেখানে আসেন। তাঁদের সবরকমভাবে সহযোগিতা করা হয়।তারা আমাদের সঙ্গে থাকবে তাই 'খেলা' জিতবো আমরাই ।
জঙ্গিপুরের বিজেপি প্রার্থী সুজিত দাস বলেন, বিড়ি শ্রমিকদের ভুল বুঝাচ্ছে রাজ্য সরকার। কেন্দ্রীয় সরকার শ্রমিকদের জন্য ন্যায্য মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেটা তাঁরা লাগু করছেন না। জঙ্গিপুরের তৃণমূল প্রার্থী নিজে বিড়ি শিল্পের মালিক। তাছাড়া তিনি শ্রমদপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বিড়ি শ্রমিকদের পারিশ্রমিক বাড়ানোর জন্য তাঁর কোনও মাথাব্যথা ছিল না। মানুষের মন বোঝা বড় দায়, যে কোন মুহূর্তে বদলে যেতে পারে শেষ মুহূর্তে তৃণমূলের 'খেলা'।