২০১৫ সালের ২৯ মে, এক অভিশপ্ত রাত হিসেবে নেমে আসে সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা মেয়েটির জীবনে। ঠিক সেই দিনেই উচ্চমাধ্যমিকের রেজাল্ট প্রকাশ হয়েছিল। ৮০ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করা মেয়েটি, ভবিষ্যত জীবনের একরাশ স্বপ্ন চোখে নিয়ে ঘুমোতে যায়। ঘড়ির কাঁটায়া রাত ঠিক দুটো, এক বাটি তরল কয়েক মুহূর্তে বদলে দেয় সদ্য উচ্চমাধ্যমিক পাশ করা মেদিনীপুরের নন্দনপুর গ্রামের বাসিন্দা পারমিতার বেরা-র জীবন।
আরও পড়ুন- ভোটের পরে মমতার সঙ্গে যাবে কংগ্রেস, কী বললেন প্রদেশ সভাপতি অধীর চৌধুরী
গ্রাম্য সমাজের একঘেয়ে জীবন স্রোতের বীপরিতে চলতে চেয়েছিল সে। তাই মাধ্যমিক পাশের পর বিয়ে নয়, করতে হবে আরও পড়াশুনো, এমনটাই ইচ্ছে ছিল। মায়ের সাহায্যে দারিদ্রতার সীমা লঙ্ঘন করেও তাই চলছিল পারমিতার জীবন যুদ্ধ। হঠাৎ করেই সেই ভয়ঙ্কর রাত বদলে দেয় জীবনের ছন্দ। অন্য গ্রামের একটি ছেলের বিয়ের প্রস্তাব নাকোচ করায়, রাত দুটোর সময় বাড়িতে ঢুকে অ্যাসিড ছুঁড়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় পারমিতার মুখ। সেই রাতে আক্রান্ত হয় পারমিতার পাশে শুয়ে থাকা বারো বছরের ছোট ভাই ও তাঁর মা'ও। সেদিন সেই রাতে অ্যাসিডে কি শুধু পারমিতার মুখটাই পুড়েছিল! সমাজের মুখটাও কি পোড়েনি সেদিন! বর্তমান সমাজে একটি মেয়ের কি কোনও ছেলের প্রস্তাব নাকোচ করার কোনও অধিকার নেই, তার পরিণতি কি এমনটাই হবে?
আরও পড়ুন- প্রতিবেশীর সঙ্গে গল্প, রাগে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গৃহবধু-কে কোপ তৃনমূল কর্মীর
আর্থিক, সামাজিক, মানসিক, পারিবারিক সমস্ত চাপ কাটিয়ে আবারও সমাজের মূল স্রোতে ফেরার চেষ্টা করে এই পারমিতা-রা। কিন্তু কেন কোনও দোষ না থাকা সত্ত্বেও এই যন্ত্রণা সহ্য করতে হবে পারমিতাদের। আর যারা দোষ করল, কোথায় তাঁরা? কতজন চেনে তাঁদের 'দুষ্কৃতি' হিসেবে? পারমিতার জীবন যেই ছেলেটি নিমেষে ওলট-পালট করে দিল আজ সে নির্বিঘ্নে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সুখে সংসার করছে। এই জীবনটাতো পারমিতারও হতে পারতো! কিন্তু হয়নি।
অ্যাসিড আক্রান্তে মুখ শুধু পারমিতাদের পোড়ে না, পোড়ে সমাজের, প্রশাসনের ও পাশাপাশি আইনি ব্যবস্থার। যারা রাজনৈতিক জোড়, প্রভাবশালী ক্ষমতা ও কিছু টাকার লোভে এই দুষ্কৃতিদের সমাজে নির্বিঘ্নে জীবন-যাপনের অবকাশ দেয়, নিঃশব্দে মুখটা পোড়ে তাঁদেরও। শুধুমাত্র বাংলার এই মেয়ে নয় দেশ জুড়ে এমন বহু পারমিতার জীবন যারা নষ্ট করে দিয়েছে, আজ তারা সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে ঘুড়ে বেড়াচ্ছে। আর চোখে একরাশ স্বপ্ন নিয়ে জীবনেযুদ্ধে লড়াই করে চলেছে এই পারমিতারা।