করোনা আতঙ্কের গ্রাসে বাংলা। সংক্রমণের ভয়ে প্রাইভেট চেম্বার বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। রাতারাতি উধাও হয়ে গিয়েছে অ্যাম্বুল্যান্সও! বিপদের সময়ে মানুষকে ভরসা যোগাচ্ছেন সেলিনা বেগম।
কে এই সেলিনা বেগম? উত্তর দিনাজপুরের দক্ষিণ হেমতাবাদে থাকেন তিনি। বাবা, মা, দিদি ও ভাই নিয়ে সংসার। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। জানা গিয়েছে, বছর দুয়েক আগে সরকারি প্রকল্পে মহিলাদের স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নেন তৎকালীন জেলাশাসক আয়েষারানী। স্রেফ অ্যাম্বুল্যান্স দেওয়াই নয়, সরকারি খরচে চালানোর প্রশিক্ষণও নেন ১৫ জন। সেই দলে ছিলেন সেলিনাও। বাকিরা যখন করোনা আতঙ্কে পরিষেবা কার্যত বন্ধ রেখেছেন, তখন এলাকায় দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বছর আঠাশের ওই তরুণী।
দিন রাতের কোনও ব্যাপার নেই। রোগী নিয়ে যাওয়ার 'কল' দিলেই সাদা ও গোলাপী রং-এর অ্যাম্বুল্যান্স নিয়ে হাজির হয়ে যান সেলিনা। দিনে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচবার হেমতাবাদ থেকে রোগী নিয়ে রায়গঞ্জে যাতায়াত করেন ওই মহিলা অ্যাম্বুল্যান্স চালক। এমনকী, দু'জনকে পৌঁছে দিয়েছেন কোয়ারেন্টাইন সেন্টারেও। স্বাস্থ্য কর্তারা এতটাই নির্ভর করেন, যে দিদিকে সঙ্গে নিয়ে হেমতাবাদ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটি ঘরেই এখন থাকছেন সেলিনা।
আরও পড়ুন: পরাণমুখ সবুজ-নালি ঘাসে ঢাকা পড়েনি মানবিকতা, লকডাউনে এক অন্য কাহিনি লিখছে গলফগ্রিন
রায়গঞ্জে শহরে থাকেন চুমকি পাল। লকডাউন মাঝেই গত সপ্তাহের হৃদরোগে আক্রান্ত হন তাঁর স্বামী। ওই গৃহবধূ জানালেন, 'আমার স্বামীকে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রেফার করে দেওয়া হয়। পাগলের মতো যখন অ্যাম্বুল্যান্স খুঁজছি, তখন নিজে থেকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন সেলিনা। ওঁর অ্যাম্বুল্যান্সে স্বামীকে হাসপাতালে নিয়ে যাই।' ওই মহিলা অ্যাম্বুল্যান্স চালকের লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়েছেন উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক অরবিন্দ কুমার মিনাও।
আর যাঁকে নিয়ে এত কাণ্ড, সেই সেলিনা বেগম কী বলছেন? তিনি জানিয়েছেন, 'স্বনির্ভর হওয়ায় শুধু নয়, পরিবার লোকেদে দেখভাল করতে পারছি অ্যাম্বুল্যান্সের দৌলতেই। বিপদের সময়ে মানুষের থেকে কী করে আর মুখ ফিরিয়ে থাকি! আমার ভালোই লাগছে।' তবে করোনা আতঙ্কের মাঝে রাস্তায় বেরোন ঠিকই, তবে বাড়িতে ঢোকার হাতে হাত-মুখ ধুতেও কিন্তু ভোলেন না সেলিনা বেগম।