ভর সন্ধ্যার পর থেকে গোটা গ্রাম জুড়ে শুধুই হাহাকার। গলায় গলায় বন্ধুত্ব মৃত্যুর সময়ও ৫ জন খুদেকে আলাদা করতে পারলো না। তাই এক বন্ধুকে বাঁচাতে গিয়ে বৃষ্টির জল জমে তৈরি হওয়া ডোবাতে পরে বুধবার পরপর মর্মান্তিক মৃত্যু হল মুর্শিদাবাদের রানিতলা থানার একই গ্রামের দাদাভাই সহ ঐ ৫খুদে বন্ধুর। মৃত সকলের বয়স পাঁচ থেকে নয় বছরের মধ্যে। তাদের নাম মিন্টু শেখ, শাকিল শেখ, ইউনুস শেখ, ইব্রাহিম শেখ আজমল সেখ। যার মধ্যে মিন্টু ও শাকিল সম্পর্কে দাদাভাই। এরা ৫ পাঁচজনই রানিতলার দক্ষিণ শহর চামাপাড়া গ্রামের অন্তরঙ্গ বন্ধু।
এরা সকলেই গ্রামের স্কুলে পড়াশোনা করে। স্থানীয় সূত্রে খবর, এদিন সকলেই বিকেলে গ্রামের একটি ইটভাটার পাশে খেলা করছিল।বৃষ্টি হওয়ার ফলে ওই ইটভাটার পাশেই জল জমে একটি ডোবা তৈরি হয়। দাদাভাই মিন্টু ও শাকিল জল জমে ডোবা তৈরি হওয়া দেখে আহ্লাদে সেখানে নামার চেষ্টা করে খেলার জন্য। এমনই সময় কাদাতে পা পিছলে তারা জলে পড়ে যায়। এরপরই বাকি তিন বন্ধু ওই দুজনকে বাঁচানোর জন্য হুড়মুড়িয়ে জলে নেমে পড়ে। কাউর কোনও সাঁতার জানা ছিল না। ফলে একে অপরকে তুলে ধরে ধরে ডাঙায় তুলে আনার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও তাতে কোনও লাভ হয়নি।
এদিকে বিকেলের পরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই গ্রামের লোকজন ওই চত্বরে না যাওয়াই অসহায় ৫ শিশু জলে ডুবে যাওয়ার মুহূর্তে বাঁচার জন্য তারস্বরে চিৎকার করতে থাকে। কিন্তু কেউ সেখানে এসে পৌঁছতে পারেনি।এদিকে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামার মুখে ওই পাঁচ শিশু বাড়ি ফিরে না আসায় পরিবারের লোকজন সকলেই খোঁজাখুঁজি শুরু করে দেয়। এরপরে সকলের টনক নড়ে।কখন পড়িমড়ি করে ইটভাটার পাশে জল জমে থাকা ডোবার দিকে ছুটে যায় সকলে।
বেশ কিছুক্ষণ এদিক ওদিক পাট ক্ষেতের পাশে খুঁজে দেখার পরে তাদের নজর পড়ে অন্ধকার অবস্থায় ডোবার জলে যেন কিছু ভেসে রয়েছে।তখনই গ্রামবাসী ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এক এক করে ডোবার জলে নেমে হতভাগ্য পাঁচ শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে।এমনকী মৃত্যুর সময় তারা একে অপরের সাথে গাদাগাদি করে হাত জড়িয়ে ছিল বলে জানান পরিবারের লোকজন। এহেন মর্মান্তিক মৃত্যুতে গোটা গ্রাম জুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সকলেই আফসোস করছেন যদি একটু সময় পাওয়া যেত একটু আগে ওই ডোবার পাশে পৌঁছানো যেত তাহলে হয়তো এইভাবে পাঁচটি ক্ষুদে প্রাণকে অকালে ঝরে পড়তে হতো না। এর পরে পুলিশ এসে মৃতদেহগুলি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতালে পাঠায়। এই ঘটনায় মুর্শিদাবাদ জেলার পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন," ওই পাঁচ শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় আর নেচেরাল ডেথ এর কেস দায়ের করা হয়েছে "। গ্রামের বাসিন্দা কুদ্দুস শেখ আফসোস করে বলেন," ভাবতেই পারছিনা এমন পরিণতি ঘটতে পারে মুহূর্তের মধ্যে সত্যিই পরিবারের লোক একটু সচেতন হলে হয়তো ওই পাঁচটি ছেলেকে আমরা বাঁচাতে পারতাম"।