২৪ অক্টোবর শারীরিক পরীক্ষার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন সুব্রত। ওই দিনই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার আগের দিনও ক্লাবে গিয়েছিলেন তিনি। সেটাই অবশ্য তাঁর শেষ যাওয়া ছিল।
একডালিয়া এভারগ্রিন (Ekdalia Evergreen) ক্লাবের সঙ্গে মনে প্রাণে জড়িয়ে ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায় (Subrata Mukherjee)। ব্যস্ততা যতই থাকুক না কেন প্রতিদিনই রাত আটটা-সাড়ে আটটার পর একবার ওই ক্লাবে যেতেন। কোনও দিন বাদ পড়ত না। চরম দুর্যোগের মধ্যেও একবার করে ঢুঁ মারতেন ক্লাবে। এমনকী, এবার দুর্গাপুজোর (Durga Puja) সময় শরীর (Health) খারাপ থাকা সত্ত্বেও পুজোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। সবই পালন করেছিলেন তিনি। গতকাল সেই ক্লাবে কালীপুজোর (Kali Puja) আয়োজন করা হয়। কিন্তু, আলোর উৎসবেও ঘন অন্ধকারে ডুবে গেল এই ক্লাবের পুজো।
২৪ অক্টোবর শারীরিক পরীক্ষার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে (SSKM Hospital) গিয়েছিলেন সুব্রত। ওই দিনই তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তার আগের দিনও ক্লাবে গিয়েছিলেন তিনি। সেটাই অবশ্য তাঁর শেষ যাওয়া ছিল। রাত ১০টা পর্যন্ত ওই ক্লাবে ছিলেন। ক্লাবের প্রতিটি সদস্যের সঙ্গে অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল তাঁর। আর সেই কারণে বর্ষীয়ান এই নেতার মৃত্যুতে মন ভালো নেই একডালিয়া এভারগ্রিনের।
আরও পড়ুন- কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শেষকৃত্য, গান স্যালুটে শ্রদ্ধা সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে
আলোর উৎসব যে এভাবে অন্ধকারে ডুবে যাবে তা আন্দাজ করতে পারেননি ক্লাবের কোনও সদস্যই। তাঁদের মুখে শুধু এখন একটাই কথা ফিরছে, 'আর ক্লাবে আসবেন না...'। লক্ষ্মীপুজোর (Lakshmi Puja) পর রুটিন চেকআপের জন্য হাসপাতালে যাবেন বলে ক্লাবের সদস্যদের জানিয়েছিলেন। সেই মতো গিয়েওছিলেন তিনি। আর আজ তাঁর বাড়ি ফেরার কথা ছিল। তবে আর ফেরা হল না। বাড়ি ফিরল তাঁর নিথর দেহ। ক্লাবের এক সদস্য বলেন, "যত ক্লান্ত থাকুন না, আধ ঘণ্টা থাকতেন। ক্লাবের ভোগ খেতেন। মিষ্টি পছন্দ করতেন। আমাদের সঙ্গে সব ভাগ করে নিতেন। পুরো পরিবারের মতো ছিলাম আমরা। মন্ত্রী নন, দাদার মতো ভাবতাম তাঁকে।" সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলা। আজ রাজ্য সরকারি দফতরে অর্ধনমিত জাতীয় পতাকা (National Flag)।
আরও পড়ুন- 'ন্যাকামি করে শোকজ্ঞাপন করতে গেলে নিজদায়িত্বে যাবেন', ২ বিজেপি নেতাকে হুঁশিয়ারি কুণালের
আরও পড়ুন, 'এমন দাদা যেন জন্ম জন্মান্তরে পাই', ভাইফোঁটা নিয়ে বলতে গিয়ে গলা বুজে এল সুব্রত-র বোনের
উল্লেখ্য, ২৪ অক্টোবর শারীরিক পরীক্ষার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে গিয়েছিলেন সুব্রত। পরীক্ষা চলাকালীনই তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছিল। এরপর কোনও ঝুঁকি না নিয়ে তাঁকে উডবার্নের আইসিসিউ-তে ভর্তি করেছিলেন চিকিৎসকরা। পরে কার্ডিওলজি আইসিইউ-তে তাঁর চিকিৎসা শুরু হয়। সুব্রতকে ‘নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন’ বা বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। দেওয়া হয়েছিল অক্সিজেনও। পরে তাঁর বুকেও সংক্রমণ ধরা পড়ে। তবে কিছুটা সুস্থ হওয়ায় গত সপ্তাহে বাইপ্যাপ সাপোর্ট খুলে নেওয়া হয়েছিল। এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন সোমবার সুব্রতর অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টিও করা হয়। দুটি স্টেন্ট বসানো হয়েছিল। তারপর ঠিকই ছিলেন তিনি। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আচমকাই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি স্টেন্ট থ্রম্বোসিসে আক্রান্ত হন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর। তারপর রাত ৯টা ২২ মিনিটে সেখানেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। রাত ১১টা নাগাদ তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তপসিয়ার পিস ওায়ার্ল্ডে। এরপর শুক্রবার সকালে দেহ নিয়ে যাওয়া হয় রবীন্দ্র সদনে। সেখানে তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানান অনুরাগীরা। এরপর দুপুর ২টোর সময় দেহ নিয়ে যাওয়া হয় বিধানসভায়। সেখান থেকে তাঁর বাড়ি ও তারপর নিয়ে যাওয়া হয় একডালিয়া ক্লাবে। সেখানেও তাঁকে চোখের জলে শেষ শ্রদ্ধা জানান ক্লাব সদস্যরা। এরপর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে গান স্যালুটে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।