যাদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেস্টে-ই বহিরাগত ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ, কাঠগড়ায় প্রথিতযশা মিডিয়া হাউসের সাংবাদিক

অভিযোগ জল খাওয়ার অছিলায় ওই বহিরাগত ছাত্রীকে রবীন্দ্র ভবনের পিছিয়ে নিয়ে যায় অভিযুক্ত সাংবাদিক, যে আবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়েরই ফিল্ম স্টাডিজ মাস্টার্স-এর দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এই ঘটনা চাঞ্চল্য ফেলে দিয়েছে।

 

Web Desk - ANB | Published : Apr 17, 2023 8:53 AM IST / Updated: Apr 17 2023, 11:21 PM IST

ফের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ। এক বহিরাগত ছাত্রীকে যাদপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম স্টাডিজ বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্র ধর্ষণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। যে ছাত্রের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে তার নাম জয়দীপ দাস। তিনি এক বাংলা প্রথিতযশা ডিজিটাল মিডিয়ার সাংবাদিক হিসাবেও কর্মরত। সবচেয়ে বড় বিষয়, এর আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশকিছু আলোড়ন ফেলে দেওয়া ঘটনাতেও সাক্ষী হিসাবে উপস্থিত থাকার রেকর্ড রয়েছে জয়দীপের। অথচ, এহেন এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠেছে শুধু নয়, পরে এই ঘটনার জন্য অভিযুক্ত ছাত্রীর পা ধরে ক্ষমাও চেয়েছেন জয়দীপ। সেই ভিডিও এখন বিভিন্ন মহলের হোয়াটসঅ্যাপ থেকে শুরু করে গুগল ড্রাইভে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যদিও, এমন এক নৃশংস ঘটনার শিকার ওই ছাত্রী বা তাঁর পরিবার পুলিশের কাছে অথবা অন্য কোনও মহলে সরকারিভাবে অভিযোগ জানানোর সাহস দেখাননি। ওই ছাত্রীর কিছু ঘনিষ্টজন জানিয়েছেন, জয়দীপের সাংবাদিক তকমা দেখে অনেকেই ভয় পাচ্ছেন বিষয়টা নিয়ে বেশিদূর এগোতে।

ইতিমধ্যেই ওই ছাত্রীর ঘনিষ্টজন থেকে শুরু করে বন্ধুরা ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিভিন্ন জায়গায় হোয়াটসঅ্যাপ করেছেন। তাঁদের একটাই দাবি যাতে নিগৃহীতা ছাত্রী সঠিক বিচার পায়। বহিরাগত বলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় যাতে এই ঘটনাকে কম গুরুত্ব না দেয় তারও আর্জি জানানো হয়েছে। ঘটনার কড়া নিন্দা করেছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই। এই ঘটনায় তাঁরা জয়দীপের আচরণের বিরোধিতা করে নিগৃহীতা যাতে সঠিক বিচার পায় তার জন্য সওয়াল করেছে। সেই সঙ্গে জয়দীপের সঙ্গে এসএফআই-এর কোনও সম্পর্ক নেই বলেও তারা এই বিবৃতিতে জানিয়েছে। 

জানা গিয়েছে, ৯ এপ্রিল রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টস বিভাগের ফেস্টে-এ গিয়েছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমিউনিকেশনের ওই বছর ২১-এর ছাত্রী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এমন বেশকিছু বন্ধুর সঙ্গে সেখানে তিনি দেখা করেন। জয়দীপ দাস-এর সঙ্গেও পূর্ব পরিচিতি ছিল ওই ছাত্রীর। অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ওই ছাত্রীর প্রেমিকও। ফেস্টের মাঝেই জয়দীপ নাকি ওই বহিরাগত ছাত্রীর সঙ্গে বারবার কথা বলতে চান। সে কথা ওই ছাত্রী তাঁর প্রেমিককেও জানিয়েছিলেন। ফেস্টের মঞ্চে তখন পারফর্ম করিছল থাইকুদ্দাম ব্রিজ নামে একটি ব্যান্ড। এমন সময় ওই ছাত্রীর জল পিপাসা পায়। অভিযোগ, জল খাওয়াবেন বলে ওই ছাত্রীকে নিয়ে জয়দীপ রবীন্দ্রভবনের পিছনে যান। তখন রাত নেমেছে। স্বাভাবিকভাবেই আলোআধারির পরিস্থিতি ছিল। সেখানেই আচমকা ওই ছাত্রীকে তিনি জড়িয়ে ধরেন এবং কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করে দেন বলে অভিযোগ। জয়দীপের এমন ব্যবহারে তিনি হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন এবং সমানে তিনি নাকি জয়দীপকে বাধা দেওয়ারও চেষ্টা করেন। নিগৃহীতা বারবার মুখে না-না বলেন জয়দীপকে। এরপরও নাকি জয়দীপ থামেননি। আতঙ্কে এবং মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওই ছাত্রী কোনওমতে জয়দীপকে গায়ের জোরে ঠেলে সরিয়ে পালিয়ে আসেন। এমনই অভিযোগের বয়ান এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ-এ।

এই ঘটনার পরের দিন যাদবপুরে থাকা ওই ছাত্রীর বন্ধুরা জয়দীপের সঙ্গে দেখা করে কথাও বলেন। সেখানে একটি ভিডিও করা হয়। যেখানে জয়দীপ ঘটনার জন্য ক্ষমা চান। এমনকী তিনি বলেন যে রক্তমাংসের মানুষ সকলে, এমন ভুল অনেক সময় হয়ে যায়। জয়দীপের এই বয়ান রীতিমতো চাঞ্চল্য ফেলেছে। ভিডিও-তে আবার কোথাও জয়দীপকে পিতা-মাতার একমাত্র সন্তান তিনি, তাঁর ক্ষতি মানে মা-বাবা-র ক্ষতি হয়ে যাবে বলে এমন বিবৃতিও দিতে দেখা যায়। ভিডিও-তে জয়দীপ বারবার মিউচুয়াল কনসেন্টের কথা বললেও নিগৃহীতা তা কিন্তু বারবারই উড়িয়ে দিয়েছেন।

এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে জয়দীপ দাসের সঙ্গে কথা বলা হয়েছিল, তিনি সরাসরি দাবি করেন যে নিগৃহীতা কোথাও কোনও সরকারিভাবে অভিযোগ করেননি। ঘটনায় ওই ছাত্রীর মিউচুয়াল কনসেন্ট ছিল। পুরোটাই তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলেও দাবি করেছেন জয়দীপ। আর এর জন্য নিগৃহীতার প্রেমিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেগেছেন।

এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে নিগৃহীতার সঙ্গেও কথা বলা হয়, তিনি সাফ জানান ওই ঘটনায় তাঁর কোনও সম্মতি ছিল না। তিনি জয়দীপকে চিনতেন এই পর্যন্ত। এবং একটা সময় জয়দীপের পরিচালিত একটি ওয়েবসাইটে ২০২১-সালে ইন্টার্নশিপ করেছিলেন। সেখানেই জয়দীপের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল। নিগৃহীতা আরও জানিয়েছেন যে তাঁর প্রেমিকও ওই ওয়েবসাইটের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন। সেই সূত্র ধরেই জয়দীপের সঙ্গে বন্ধুত্ব বেড়েছিল। নিগৃহীতা আরও জানিয়েছেন, তাঁর পরিবার এই ঘটনায় পুলিশের কাছে এখনই যেতে চাইছেন না, কারণ জয়দীপ এখন যথেষ্টই প্রভাবশালী সাংবাদিক। নিগৃহীতা নিজেও একজন উদীয়মান ট্রেনি সাংবাদিক। জয়দীপের প্রভাবে তাঁর কেরিয়ারের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা নাকি করছেন পরিবার-পরিজন। সেই কারণে পুলিশের কাছে অভিযোগ না করলেও বিষয়টি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় এবং তাদের ছাত্র সংগঠনকে জনানো হয়েছে বলেও বয়ান দিয়েছেন নিগৃহীতা। তিনি এবং তাঁর পরিবার যে আপাতত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন সে কথাও সাফ জানিয়েছেন নিগৃহীতা। এমনকী তাঁর প্রেমিকের বিরুদ্ধে যে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ জয়দীপ করেছেন তাও নসাৎ করে দিয়েছেন তিনি।

এশিয়ানেট নিউজ বাংলার পক্ষ থেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার স্নেহামঞ্জু বাসু-র সঙ্গেও কথা বলা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন, এই ধরনের বিষয় আগে আইসিসি-র কাছে যায়। তারা বিষয়টি তদন্ত করে দেখে। তারপরে তার রিপোর্ট এবং রেকমেন্ডেশন তাঁদের কাছে আসে। ফিল্ম স্টাডিজের প্রধান মৈনাক বিশ্বাসও জানান, আইসি-র রিপোর্ট পেলে তবেই তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে পারবেন।

আইনজীবী সায়ন শচিন বাসু এশিয়ানেট নিউজ বাংলা-কে জানিয়েছেন, ঘটনার যা মাত্রা তাতে সরকারিভাবে অভিযোগের জন্য অপেক্ষা না করে পুলিশের উচিত স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা। আর সেই সঙ্গে এটাও খতিয়ে দেখা যে নির্যাতিত মেয়েটি-কে কোনও রকমের ভয় দেখানো বা চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে কিনা।

বহিরাগতদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢোকা নিয়ে এক রেজিস্ট্রার রাখার কথা ছিল যাদবপুরের। কয়েক বছর আগে কলকাতা হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধানবিচারপতি মঞ্জুলা চেল্লুর এক রায়ে এই নির্দেশ দিয়েছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়কে। আদপেও এখন সেই নিয়ম পালন করা হয় কিনা তার কোনও উত্তর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দেয়নি। এখন নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দিকেই তাকিয়ে আছেন।
আরও পড়ুন- 
Rape Case: ছোট্ট শিশুকন্যাকে ধর্ষণ করল প্রথম শ্রেণীর শিশু, উত্তরপ্রদেশের ঘটনায় স্তম্ভিত পুলিশকর্তারা 
মদ্যপ অবস্থায় চাকরির অছিলায় তরুণীকে ধর্ষণ, গুরুতর অভিযোগ উঠল বিখ্যাত কমেডিয়ানের বিরুদ্ধে
চুম্বনের সেলফি তুলে কিশোরীকে ভয় দেখিয়ে লাগাতার ধর্ষণ, গ্রেফতার 'সহপাঠী' কিশোর

Share this article
click me!