স্নেহা আর ঈশা, বাঙালির স্বপ্নবুড়োর দুই কাণ্ডারি সাদা চুল আর দাড়ি লাগিয়ে লাল-সাদা জোব্বা পরে আলো ঝলমলে পার্ক স্ট্রিটের রাস্তায় হয়ে উঠলেন একেবারে খাঁটি সান্তা ক্লজ।
পাশ্চাত্যের দেশগুলিতে যখন আলো আর বরফে মোড়া ক্রিসমাসের উজ্জ্বল সন্ধ্যা, বাঙালির কাছে তখন উচ্ছ্বাসের বড়দিন। কেক, পেস্ট্রির সাথে পিঠেপুলি পায়েস আর জয়নগরের মোয়া মিলেমিশে কলকাতা হয়ে ওঠে এক আস্ত রোভানিয়েমি। অর্থাৎ, দাড়িবুড়ো সান্তা ক্লজের পাড়া।
পৃথিবীতে প্রভু যিশুর আবির্ভাব ঘটেছিল ২৫ ডিসেম্বর। তাঁর আবির্ভাবকাল স্মরণ করে ২৪ ডিসেম্বর রাত থেকেই চনমনে হয়ে ওঠে সারা পৃথিবী। আলোয় আলোয় ঢেকে যায় সমস্ত অন্ধকার। ইউরোপীয় শাসকদের শাসনকাল থেকেই বাংলার তৎকালীন রাজধানী কলকাতা হয়ে ওঠে ক্রিসমাস, অর্থাৎ বড়দিনের প্রাণকেন্দ্র। উৎসবের উচ্ছ্বাস আর বন্ধন ধর্ম, বর্ণ, জাতিবিন্যাসের দেওয়াল ভেঙে ঢুকে পড়েছিল আপামর বঙ্গবাসির মনে প্রাণে। তারপর ‘কৃষ্টে আর খ্রিষ্টে কোনও ভিন্ন নাই রে ভাই’ গেয়ে বাঙালির প্রাণের সাধক অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি যখন খ্রিস্টানের সঙ্গে বাঙালিত্ব মিলিয়ে মিশিয়ে একাকার করে দিলেন, তখন আর সান্তা ক্লজের মতো ‘ইচ্ছেঠাকরুণ’ বাড়িতে আসাও বাকি থাকে কেন? ফলত, একেবারে বরফে মোড়া ফিনল্যান্ডের রোভানিয়েমি থেকে বল্গা হরিণ বা বাদামি ভালুকে টানা স্লেজ গাড়িতে চড়ে ঘুমের মধ্যে তিনি এলেন। একেবারে আঁতুড়ঘর থেকে বঙ্গসন্তানের মনে গেঁথে গেল যা-খুশি-তাই চাইতে পারার স্বপ্নিল স্বাধীনতা।
কিন্তু, সান্তা দাদুর উপহারেই তো বড়দিনের আনন্দ থেমে থাকে না। তার সঙ্গে জুড়ে থাকে পার্ক স্ট্রিটের মোহময় আলো, শতাব্দী প্রাচীন গির্জায় বেজে ওঠা ঘণ্টা, প্রার্থনা সঙ্গীত। ঔপনিবেশিকদের স্থাপন করা গির্জায় বেজে ওঠে বাংলা গান ‘বিশ্বপিতা তুমি হে প্রভু’। আর স্বপ্নে মননে জুড়ে থাকে শৈশবের ‘সুপারহিরো’ সান্তা। শৈশব শেষ হয়ে গেলেও তিনি লুকিয়ে লুকিয়ে ওই ‘ইচ্ছেঠাকরুণ’ হয়ে থিতু হয়ে থাকেন। কখনও কখনও তার স্বরূপ বেরিয়ে পড়ে পৃথিবীর আনাচেকানাচে। এই যেমন ২৪ ডিসেম্বর রাতেই তিনি ধরা দিলেন কল্লোলিনী কলকাতার রংবেরঙের আলোকধারায়। তাও আবার একা নন। একেবারে এক জোড়ায়।
স্নেহা আর ঈশা, বাঙালির স্বপ্নবুড়োর দুই কাণ্ডারি সাদা চুল আর দাড়ি লাগিয়ে লাল-সাদা জোব্বা পরে হয়ে উঠলেন একেবারে খাঁটি সান্তা ক্লজ। পার্ক স্ট্রিটের রাস্তায় তাঁদের মোহময় নাচে বিহ্বল হয়ে গেল নেট দুনিয়া। সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হইহই করে ভাইরাল হয়ে গেল দুই সান্তার দস্যি নাচের ছবি। কলকাতা পুলিশের বেড়াজালের মধ্যেই সমবেত নৃত্যে তাক লাগিয়ে দিলেন দুই কিশোরী শিল্পী। আলো আঁধারির ক্রিসমাস উদযাপনে তাঁদের পরিবেশনা আরও একটু আনন্দের ছোঁয়া এনে দিল ডিজিটাল মাধ্যমে।
পার্ক স্ট্রিট চিরকালই সমস্ত ধরনের মানুষের বিচরণক্ষেত্র। বড়দিনের উৎসবে এখানে বিশেষভাবে ভিড় জমান বাংলার বিভিন্ন প্রান্তের বিবিধ বয়সের মানুষজন। তাঁদের উপস্থিতির মধ্যেই স্নেহা আর ঈশার সাহসী নৃত্য পরিবেশন নজর কেড়েছে ইন্টারনেট-আগ্রহীদের। নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে ছবি আর ভিডিও পোস্ট করতেই হু হু করে ছড়িয়ে পড়েছেন তাঁরা।
আরও পড়ুন-
কোমরে গোঁজা গুলি ভরা সেভেন এমএম বন্দুক, মধ্যরাতে কলকাতা পুলিশের হাতে গ্রেফতার সশস্ত্র দুষ্কৃতী
ভারত জুড়ে করোনাভাইরাসের ব্যাপক আশঙ্কা, বাংলায় এসেও বিজেপির জনসভায় আসবেন না নরেন্দ্র মোদী