
Kolkata Sir Update News: ভোটার তালিকায় বিশেষ নিবিড় সমীক্ষায় (SIR) গুরুতর অনিয়মের অভিযোগ। রাসবিহারী বিধানসভার ১৬০ নম্বর আসনের ১৯২ নম্বর পার্টে। অভিযোগ, ওই পার্টের ব্লক লেভেল অফিসার (বিএলও) প্রমহাংশ প্রসাদ সরকারি দায়িত্ব পালনের সময়ে নিরপেক্ষতা ভঙ্গ করেছেন।
অভিযোগকারী রোহন কুন্ডু বিধানসভার বিএলএ-১, জেলা নির্বাচন আধিকারিককে পাঠানো ইমেলে জানিয়েছেন— বিএলওকে ওই পার্টের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের দোকানের ভিতরে বসে SIR–সংক্রান্ত সরকারি কাজ করতে দেখা যায়। যা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতার নীতি এবং নির্দেশিকার সম্পূর্ণ বিরোধী।
অভিযোগে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের কর্মীর প্রতিষ্ঠানে বসে সরকারি কাজকর্ম চালানো ভোটার সংশোধন ও যাচাই প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ করে। ঘটনার প্রমাণ হিসেবে ছবি ও ভিডিওও জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অভিযোগকারী। ইতিমধ্যেই ঘটনাটির উপর দ্রুত তদন্ত এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে। SIR প্রক্রিয়াকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ রাখতে নির্বাচন কমিশনের হস্তক্ষেপ প্রয়োজন বলেও অভিযোগকারীর বক্তব্য।
এসআইআরের কাজ নিয়ে বিএলওদের একাংশের ক্ষোভ বাড়ছিল ক্রমশ। শনিবার জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠকে জাতীয় নির্বাচন কমিশন জানিয়ে দিয়েছে যেখানে ১২০০ র বেশি ভোটার সেখানে যে বিএলওদের একার পক্ষে কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছে না তাঁদের সহকারী দিতে হবে।
এ দিন ওই বৈঠকে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালকে সঙ্গে উপনির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতীসহ কমিশনের কর্তারা জেলাশাসকদের বলে দিয়েছেন, অযোগ্য এক জন ভোটারের উপস্থিতিও খসড়া তালিকায় থাকলে দায় বর্তাবে এই কাজে জড়িত আধিকারিকদের উপরেই। তাতে জেল জরিমানার মতো শাস্তিও হতে পারে। একাধিক অভিযোগ জমা পড়ায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনকেও সতর্ক করা হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরেই বিএলওদের একাংশের মধ্যে কাজের চাপ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছিল। ফর্ম দেওয়া নেওয়ার সঙ্গে তা ডিজিটাইজ এবং তথ্য লিখে আপলোড করার বাড়তি চাপ নিতে নারাজ হচ্ছিলেন তাঁরা। এই অবস্থায় ক্ষেত্র বিশেষে সহকারী বিএলও নিয়োগের সিদ্ধান্ত গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে জেলাগুলি জানিয়েছে আলাদা করে বিএলও অ্যাপের মাধ্যমে ছবি তোলার জন্য পৃথক লোকের ব্যবস্থা করা হোক এবং তথ্য নথিবদ্ধ করতে মোবাইলের পাশাপাশি সুবিধা দেওয়া হোক কম্পিউটার ব্যবহারের। সেই প্রস্তাবও লিখিত ভাবে চেয়েছে কমিশন। তবে কমিশন জানিয়ে দিয়েছে ভোটারের ছবি তুলতেই হবে। যে ভোটারের আত্মীয় ফর্ম ভরে জমা দেবেন তাতে ছবি সাঁটানো থাকতে হবে। ছবি যে ভোটারেরই তা যাচাই করে আপলোড করতে হবে বিএলও কে। এ ক্ষেত্রেও কোনও অসাধু প্রবণতা যে বরদাস্ত করা হবে না তা স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে।
এসআইআরের ফর্ম বিলির কাজ প্রায় শেষের পথে , ৯৯% ফর্ম বিলি করা হয়ে গিয়েছে । জেলাভিত্তিক ভাবে গড়ে ২-৩% ফর্ম গ্রহণ করার কাজও হয়েছে। কমিশন সূত্রের খবর এখনো জমা পড়া প্রায় ৪০ লক্ষ ফর্ম ডিজিটাইজ করা হয়েছে । জেলাগুলি জানাচ্ছে এ কাজে সর্বাধিক দিন দশেক সময় পাওয়া যাবে। তার পরেই শুরু হবে খসড়া ভোটার তালিকার প্রস্তুতি। তবে জেলাশাসকদের অনেকেই কমিশনকে জানিয়েছেন কিছু ভোটারকে নির্দিষ্ট ঠিকানায় পাওয়া যাচ্ছে না বলে ফর্ম দেওয়া যায়নি এখনও। কমিশনের বক্তব্য তিনবার বাড়ি যাওয়ার পরেও যাঁদের খুঁজে পাওয়া যাবে না এলাকায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে তাঁদের সম্পর্কে। কমিশনের অ্যাপে তাঁদের নামের পাশে সেই তথ্য দাখিল করতে হবে। এখন বিএলও অ্যাপে এডিট বা সংশোধনের সুবিধা রয়েছে। ৪ ডিসেম্বরের মধ্যে সেই ভোটার যোগাযোগ করলে তাঁকে ফর্ম দেওয়া হবে। তখন তথ্য সংশোধন করে তা জানিয়েও দেবেন বিএলও। তাঁকে একান্ত না পাওয়া গেলে খসড়া ভোটার তালিকায় নাম থাকবে না। তখন ৯ ডিসেম্বরের পরে কমিশনকে আবেদন করতে পারবেন তিনি।
এ দিন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলাকে সতর্ক করা হয়েছে। কমিশন সূত্রের বক্তব্য সেই জেলা থেকে তারা অনেক অভিযোগ পেয়েছে। মৃত একাধিক ঠিকানায় নাম অনুপস্থিত বা ভূতুড়ে ভোটারদের অন্তর্ভুক্তি কমিশন বরদাস্ত করাবে না। এ ক্ষেত্রে পদক্ষেপের জন্য যে সুনির্দিষ্ট আইন কমিশনের হাতে রয়েছে তাও বলে দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে একাধিক কর্মসূচিতে রাজ্য সফরে আসছেন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের প্রতিনিধিরা। ১৮ নভেম্বর পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপনির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ ভারতী সচিব এস বি যোশী অপর সচিব মলয় মল্লিক এবং উপ সচিব অভিনব আগরওয়াল এসে এসআইআরের অগ্রগতি খতিয়ে দেখবে। ওই সফরে তাঁরা যাবেন, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া, মালদহ, মুর্শিদাবাদেও। ১৮ নভেম্বরই কলকাতা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা নির্বাচনী আধিকারিকদের সঙ্গে হবে বৈঠকও। ২১ নভেম্বর ভোটযন্ত্রের / ইভিএম ভিভিপ্যাট প্রথম স্তরের যাচাই কর্মশালাতেও থাকবেন তাঁরা।
আরও খবরের জন্য চোখ রাখুন এশিয়ানেট নিউজ বাংলার হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে, ক্লিক করুন এখানে।